Ajker Patrika

তুলা চাষে নতুন সম্ভাবনা

তাজরুল ইসলাম, পীরগাছা
আপডেট : ২৭ অক্টোবর ২০২১, ১৬: ৩৬
তুলা চাষে নতুন সম্ভাবনা

পীরগাছায় কৃষি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনাময় ফসল হিসেবে দেখা দিয়েছে তুলা। উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রদর্শনী প্রকল্পের মাধ্যমে এই অর্থকরী ফসল চাষের দুয়ার খুলে দিয়েছে। তাদের সহযোগিতায় ১০ জন কৃষকের ৩৩ শতাংশ করে জমিতে এবার মসলিন তুলার আবাদ করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, এক সময় বাংলাদেশের মসলিন তুলা ছিল বিশ্ব বিখ্যাত। ব্রিটিশ শাসনামলে হারিয়ে যায় সেই তুলার চাষ। বর্তমানে দেশে বস্ত্র খাতের জন্য বছরে প্রায় ৪০ লাখ বেল তুলার প্রয়োজন পড়ে। প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকায় যার সিংহভাগ আমদানি করা হয়। কিন্তু সেভাবে আর চাষাবাদ হয়নি মসলিন তুলা। সম্প্রতি সরকারি ও বেসরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে নতুন করে সম্ভাবনা দেখা দেয় এই তুলা চাষে। বর্তমানে মসলিন তুলা দেশের দ্বিতীয় অর্থকরী ফসল এবং বস্ত্র শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

পীরগাছা কৃষি বিভাগ জানায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তুলা চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে উঁচু মানের জমি তুলা চাষের উপযোগী করে তোলা হয়। সেই জমিতে হাইব্রিড ও উচ্চফলনশীল জাতের তুলা চাষের জন্য কৃষকদের দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা।

কৃষি বিভাগের সহায়তায় তুলা চাষ করা কৃষকদের মধ্যে একজন হলেন পারুল ইউনিয়নের নাগদাহ গ্রামের ইব্রাহীম আলী। তাঁর ৩৩ শতাংশ জমিতে চাষ করা হয়েছে সিবি হাইব্রিড-১ জাতের তুলা। উপজেলা কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় ইব্রাহীমের জমি এখন পরিপূর্ণ। গাছে ঢেকে গেছে গোটা খেত, উঁকি দিচ্ছে ফুল। আর কয়েক দিন পরেই ঘরে উঠবে কাঙ্ক্ষিত ফসল।

কৃষি অফিস জানায়, চাষের মাত্র ১১০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে তুলার ফুল ফুটতে শুরু করে। যা তিন থেকে চারবারে সম্পূর্ণরূপে ফোটার পর গাছে শুকিয়ে তোলা যায়। এতে আঁশ ও বীজের মান অটুট থাকে। দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়।

কৃষক ইব্রাহীম বলেন, ‘প্রথমে তুলা চাষে রাজি ছিলাম না। পরে কৃষি অফিসের স্যারেরা নানা পরামর্শ ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ায় তুলা চাষ করেছি। গাছ ও ফুল দেখে আমি আশাবাদী। ভালো ফলন হবে। তুলার ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা সব সময় পাশে থেকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।’

পারুল ইউনিয়নের নাগদাহ ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামসুজ্জামান জানান, মসলিন তুলা বেশ লাভজনক ফসল। প্রতি একরে ৩৫ থেকে ৩৮ মণ তুলা উৎপাদন হয়। যা প্রতি মণ আড়াই হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরে সহজে বিক্রি করা যায়। বিভিন্ন এলাকার পাইকারেরা এসে এসব তুলা কিনে নেন। আবার তুলার গাছ ও পাতা দিয়ে ভোজ্য তেলের পাশাপাশি গবাদিপশু ও মাছের খাদ্য হিসেবে খৈল তৈরি করা যায়, যা থেকেও আয় সম্ভব।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা তুলা চাষের জন্য ১০ জনকে জমি তৈরি ও বীজ বপনের জন্য ২ হাজার ৫০০ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দিয়েছি। অর্থকরী ফসল হিসেবে আগামী দিনে তুলার চাষাবাদ আরও বৃদ্ধি পাবে, যা থেকে কৃষকেরা অল্প খরচে অধিক লাভের মুখ দেখবেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত