Ajker Patrika

৮৪ লাখ টাকা নিয়ে উধাও

বাগেরহাট প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১৬: ২৬
৮৪ লাখ টাকা নিয়ে উধাও

বাগেরহাটে অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কথিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল সোশ্যাল চেইন বিডির (জিএসসিবিডি) বিরুদ্ধে। বেকার যুবকদের কাছ থেকে আড়াই মাসে এই টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। টাকা ফেরত এবং প্রতারকদের বিচারের দাবিতে পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক যুবক। তাঁর নাম সাজিত শেখ। তিনি বাগেরহাটের চিতলমারীর বাসিন্দা।

শুধু বাগেরহাট নয়, সারা দেশ থেকে অন্তত এক শ কোটি টাকার ওপরে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা জেলার শামীম হোসেন ও তাঁর বন্ধু মাসুম বিল্লাহ মিলে জিএসসিবিডি-নামের একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চালু করেন। তাঁদের কোম্পানির কাজের পদ্ধতি ছিল আইডিভিত্তিক। এতে ১২ শ টাকা দিয়ে একটি আইডি কিনলে ১০ মাসে ৩ হাজার টাকা দেওয়ার আশ্বাস দিত তাঁরা। কেউ চাইলে এক সঙ্গে অনেকগুলো আইডি কেনার সুযোগ ছিল। এই নিয়মে ১৮ আগস্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত বাগেরহাটের অন্তত ৩শ মানুষের কাছে ৭ হাজার আইডি বিক্রি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে অন্তত ৮৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুরুতে মাসখানেক টাকা দিলেও, দেড় মাস ধরে গ্রাহকদের টাকা দেওয়া বন্ধ রয়েছে।

প্রতারণার শিকার সাজিত শেখ বলেন, ` চলতি বছরের আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে পাইকগাছার মো. আশরাফুল নামে পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তি আমাকে জানায়, জিএসসিবিডি-নামে একটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানে সে বিপণন কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছে। সেখানে সামান্য বিনিয়োগে ভালো আয়ের সুযোগ আছে। কোম্পানির কাজের পদ্ধতি বোঝাতে মালিক শামীম হোসেন ও মাসুম বিল্লাহকে নিয়ে বাগেরহাটে আসেন আশরাফুল। তাঁরা আমাকে তাঁদের পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত করেন। আশরাফুলের আশ্বাসে আমি কয়েক ধাপে ওই কোম্পানিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। প্রথম কয়েক দিনে মুনাফা হিসেবে ৭০ হাজার টাকা তাঁরা আমাকে বিকাশের মাধ্যমে দেয়। তবে পরবর্তীতে আর কোনো টাকা দেয়নি। এখন তাঁরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আমি আমার টাকা ফেরত চাই।’

শুধু আশরাফুল নয়, মাত্র আড়াই মাসে বাগেরহাটের অন্তত ৩ শ মানুষের কাছ থেকে ৭ হাজার আইডি বিক্রি করে ৮৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান জি এস সি বিডি। বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী তাঁদের মূলধনের ১০ শতাংশও ফেরত পাননি। ২০ অক্টোবর থেকে ওয়েবসাইট ও মোবাইল এ্যাপও বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিটি। সেই সঙ্গে বিপণন কর্মকর্তা ও কথিত মালিকদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পাড়ায় হতাশা বিরাজ করছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে।

জিএসসিবিডিতে ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগকারী রামপাল উপজেলা সদরের ফকির মিন্টু আলী বলেন, ‘সরল বিশ্বাসে কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলাম। প্রথম এক মাস ভালোভাবে লেনদেন করেছিল কোম্পানি। কিন্তু এক মাস পর থেকেই সফটওয়্যার আপডেট কেন্দ্রিক বিভিন্ন জটিলতার কথা বলে পেমেন্ট বন্ধ করে দেয়। হঠাৎ করে দেখি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ এ ঢোকা যাচ্ছে না। শুধু নিজের টাকা নয়, আমার কথায় বিশ্বাস করে অনেকেই বিনিয়োগ করেছে কোম্পানিতে। আমরা তো পথে বসে গেলাম।’

বাগেরহাট সদর উপজেলার মূলঘর এলাকার মেহেদী হাসান পারভেজ বলেন, ‘হঠাৎ করে কোম্পানির কার্যক্রম বন্ধ হওয়ায় ১০-১২ জন গ্রাহক নিয়ে শামীম হোসেনের পাইকগাছার বাড়িতে যাই। সেখানে শামীমের সঙ্গে আশরাফুল ও মাসুমকেও দেখতে পাই। আমরা গেলে স্থানীয় ইউপি সদস্য শিকারি আবু বকরসহ অনেক লোক জড় হয়। স্থানীয়দের সামনে শামীমসহ অন্যরা টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে। কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের বলে দেয় টাকা ফেরত দিতে পারবে না। টাকা চাইলে আমাদের দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় শামীম।

স্থানীয়রা আমাদের জানিয়েছে, শামীম, মাসুম ও আশরাফুল পেশাদার প্রতারক। প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকা থেকে এই প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙিয়ে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তাঁরা। জিএসসিবিডি কার্যক্রম বন্ধ করে কোফি কয়েন নামে নতুন আর একটি কোম্পানি চালু করেছেন তাঁরা।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করা হলে জিএসসিবিডির শামীম হোসেন, মাসুম বিল্লাহ ও আশরাফুলের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

বাগেরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, ‘জিএসসিবিডির নামে অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত