অলকানন্দা রায়
ছোটবেলায় দাদা-দিদিদের বই পড়তে দেখেই জন্মেছে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। শিশুতোষ বই আমার জন্য গাদাগাদা থাকলেও দাদা-দিদির হাতের বইগুলোই টানত বেশি। ওগুলো ধরতে গেলেই ছোট দিদি বলত, ‘বড় হও।’ বড় হতে তখন অনেক দেরি! আমার যে খুব তাড়া।
সেই সব দিনগুলোতেই ক্লাস থ্রির এক সন্ধ্যায় দাদা বাড়ি ফেরার সময় হাতে করে কয়েকটি বই নিয়ে এল। তার একটি ‘নীল ময়ূরের যৌবন’, লেখক সেলিনা হোসেন। আমি পড়া শুরু করে দিলাম। কঠিন কঠিন নামের বানান। ঠিকমতো উচ্চারণও করতে পারি না। বারবার ছুটে যাই দাদা-দিদিদের কাছে বানান জেনে নিতে। কাহ্নপাকে বলি কাহুপা। শুনে দাদা-দিদিরা হেসেই খুন।
সেই প্রথম আমার লেখক সেলিনা হোসেনকে জানা। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ বইয়ের নামটা আমাকে খুব টেনেছিল। বইটা পড়তে পড়তে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো আমি যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হিসেবে হলদিগ্রামের বুড়ি এবং গ্রামের সমস্ত মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমাকে উজ্জীবিত করেছিল।
এ উপন্যাসটি শুধু মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিই নয়, মুক্তিযুদ্ধে নারীর বীরের মতো অংশগ্রহণও স্বতঃস্ফূর্ত হওয়ার বয়ান।
সেই দিনগুলোয় গুগল ছিল না। বইয়ের প্রচ্ছদে ও লাইব্রেরিতে গিয়ে পুরোনো পত্রিকা খুঁজে খুঁজে সেলিনা হোসেনকে জেনেছিলাম। শৈশবের সেই খাতা খুঁজলে হয়তো পেয়ে যাব, যেখানে লেখা আছে তাঁর লেখা বইগুলোর নাম আর পাঠ-প্রতিক্রিয়া।
সেলিনা হোসেনকে চেনা-জানার এমন দিনগুলোয় একদিন ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’, ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ ও ‘জলোচ্ছ্বাস’ বই তিনটি পাই ছোট দিদির ব্যাগে। হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো দশা সেদিন।
আমি যখন কলেজে, সেলিনা হোসেনের প্রায় সব লেখা তখন পড়া শেষ। কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সেলিনা হোসেন আসবেন প্রধান অতিথি হয়ে। এটা শোনার পর থেকেই শৈশবের দিনগুলো আমাকে ঘিরে ধরেছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটি বিভাগ ছিল পাঠাভিনয়। মোটামুটি সব বন্ধু ধরেই নিয়েছিল গত কয়েকটি অনুষ্ঠানের মতো এবারও এই বিভাগে প্রথম পুরস্কার বাঁধা আমার জন্য।
কিন্তু মঞ্চে উঠে বিচারকের আসনে সেলিনা হোসেনকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলাম। কেননা, আমি যে তাঁর ‘লারা’ থেকেই পাঠ করব। লারা—সে তো কেবল বই নয়, এ যে তাঁরই আত্মজা।
আমি অনন্তে হারিয়ে যাওয়া এক আত্মজাকে পাঠ করব তাঁর মায়ের সামনে! আমার চোখ ফেটে জল আসছিল। আমি কাঁপছিলাম মাইক্রোফোনের সামনে গিয়েও।
বইটার ভাঁজ খুলছিলাম এক হাতে। কিন্তু চোখ সামনের দিকে যেখানে বিচারকের আসনে বসে আছেন স্বয়ং সেলিনা হোসেন; কপালে হাত, মাথা নিচু। কেন যেন মনে হচ্ছিল তিনি কষ্ট পাচ্ছেন। বারবার তাঁকে দেখতে গিয়ে পাতা ওলটাতে ভুল হলো। ভুল জায়গা থেকেই পড়ছিলাম। মঞ্চের পাশ থেকে একজন ইশারা দিতেই হতবুদ্ধি হয়ে থেমে গেলাম। তখন বিচারকের আসন থেকে বাংলা শিক্ষক নতুন করে পড়তে বললেন। আমি ফের শুরু করলাম।
একে একে সবার পাঠ শেষ হলে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হলো। কোথাও আমার নাম নেই। তাঁর হাত থেকে পুরস্কার না নিতে পারায় কষ্ট পেয়েছিলাম খুব। অনুষ্ঠান শেষ করে সেলিনা হোসেন যখন কলেজ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, আমার এক বন্ধু গিয়ে তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। দেখাদেখি আমিও গেলাম কিন্তু তিনি পায়ে হাত দিতে দিলেন না। আমাকে দুই হাতে বুকে জড়িয়ে ধরলেন! হাত দুটি কী অদ্ভুত রকমের শীতল! তাঁর বুকের মাঝে আমি অনুভব করলাম শীতল স্নেহ। আমার সারা শরীর ও মনকে শান্ত করে ভুলিয়ে দিল পুরস্কার না পাওয়ার কষ্ট। সেদিন যে স্পর্শ পেয়েছিলাম, তা আজও লেগে আছে সারা গায়ে।
উপসম্পাদকীয়xতাঁর লেখা পুনঃপাঠ করতে গিয়ে বারবার মনে হয় বাংলা কথাসাহিত্যে সেলিনা হোসেন একটি নিজস্ব কণ্ঠস্বর তৈরি করেছেন অসাধারণ পারঙ্গমতায়। সাহিত্যিক হিসেবে তিনি কখনো নিজের সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভুলে যাননি, উপেক্ষা করেননি। উপরতলা থেকে পোকামাকড়ের মতো বেঁচে থাকা নিচুতলার মানুষের জীবনযাপনকেও সাজিয়েছেন পরম ভালোবাসায় নিখুঁত বয়ানে।
আজ তাঁর জন্মদিন। এ দিনটি তাই সুন্দর, আনন্দের। ‘শুভ জন্মদিন’ প্রিয় লেখক সেলিনা হোসেন।
লেখক: সাংবাদিক
ছোটবেলায় দাদা-দিদিদের বই পড়তে দেখেই জন্মেছে বইয়ের প্রতি ভালোবাসা। শিশুতোষ বই আমার জন্য গাদাগাদা থাকলেও দাদা-দিদির হাতের বইগুলোই টানত বেশি। ওগুলো ধরতে গেলেই ছোট দিদি বলত, ‘বড় হও।’ বড় হতে তখন অনেক দেরি! আমার যে খুব তাড়া।
সেই সব দিনগুলোতেই ক্লাস থ্রির এক সন্ধ্যায় দাদা বাড়ি ফেরার সময় হাতে করে কয়েকটি বই নিয়ে এল। তার একটি ‘নীল ময়ূরের যৌবন’, লেখক সেলিনা হোসেন। আমি পড়া শুরু করে দিলাম। কঠিন কঠিন নামের বানান। ঠিকমতো উচ্চারণও করতে পারি না। বারবার ছুটে যাই দাদা-দিদিদের কাছে বানান জেনে নিতে। কাহ্নপাকে বলি কাহুপা। শুনে দাদা-দিদিরা হেসেই খুন।
সেই প্রথম আমার লেখক সেলিনা হোসেনকে জানা। ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ বইয়ের নামটা আমাকে খুব টেনেছিল। বইটা পড়তে পড়তে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো আমি যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হিসেবে হলদিগ্রামের বুড়ি এবং গ্রামের সমস্ত মানুষের মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আমাকে উজ্জীবিত করেছিল।
এ উপন্যাসটি শুধু মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিই নয়, মুক্তিযুদ্ধে নারীর বীরের মতো অংশগ্রহণও স্বতঃস্ফূর্ত হওয়ার বয়ান।
সেই দিনগুলোয় গুগল ছিল না। বইয়ের প্রচ্ছদে ও লাইব্রেরিতে গিয়ে পুরোনো পত্রিকা খুঁজে খুঁজে সেলিনা হোসেনকে জেনেছিলাম। শৈশবের সেই খাতা খুঁজলে হয়তো পেয়ে যাব, যেখানে লেখা আছে তাঁর লেখা বইগুলোর নাম আর পাঠ-প্রতিক্রিয়া।
সেলিনা হোসেনকে চেনা-জানার এমন দিনগুলোয় একদিন ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’, ‘কাঁটাতারে প্রজাপতি’ ও ‘জলোচ্ছ্বাস’ বই তিনটি পাই ছোট দিদির ব্যাগে। হাতে চাঁদ পাওয়ার মতো দশা সেদিন।
আমি যখন কলেজে, সেলিনা হোসেনের প্রায় সব লেখা তখন পড়া শেষ। কলেজের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সেলিনা হোসেন আসবেন প্রধান অতিথি হয়ে। এটা শোনার পর থেকেই শৈশবের দিনগুলো আমাকে ঘিরে ধরেছিল। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটি বিভাগ ছিল পাঠাভিনয়। মোটামুটি সব বন্ধু ধরেই নিয়েছিল গত কয়েকটি অনুষ্ঠানের মতো এবারও এই বিভাগে প্রথম পুরস্কার বাঁধা আমার জন্য।
কিন্তু মঞ্চে উঠে বিচারকের আসনে সেলিনা হোসেনকে দেখে একটু ঘাবড়ে গেলাম। কেননা, আমি যে তাঁর ‘লারা’ থেকেই পাঠ করব। লারা—সে তো কেবল বই নয়, এ যে তাঁরই আত্মজা।
আমি অনন্তে হারিয়ে যাওয়া এক আত্মজাকে পাঠ করব তাঁর মায়ের সামনে! আমার চোখ ফেটে জল আসছিল। আমি কাঁপছিলাম মাইক্রোফোনের সামনে গিয়েও।
বইটার ভাঁজ খুলছিলাম এক হাতে। কিন্তু চোখ সামনের দিকে যেখানে বিচারকের আসনে বসে আছেন স্বয়ং সেলিনা হোসেন; কপালে হাত, মাথা নিচু। কেন যেন মনে হচ্ছিল তিনি কষ্ট পাচ্ছেন। বারবার তাঁকে দেখতে গিয়ে পাতা ওলটাতে ভুল হলো। ভুল জায়গা থেকেই পড়ছিলাম। মঞ্চের পাশ থেকে একজন ইশারা দিতেই হতবুদ্ধি হয়ে থেমে গেলাম। তখন বিচারকের আসন থেকে বাংলা শিক্ষক নতুন করে পড়তে বললেন। আমি ফের শুরু করলাম।
একে একে সবার পাঠ শেষ হলে বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হলো। কোথাও আমার নাম নেই। তাঁর হাত থেকে পুরস্কার না নিতে পারায় কষ্ট পেয়েছিলাম খুব। অনুষ্ঠান শেষ করে সেলিনা হোসেন যখন কলেজ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন, আমার এক বন্ধু গিয়ে তাঁকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করল। দেখাদেখি আমিও গেলাম কিন্তু তিনি পায়ে হাত দিতে দিলেন না। আমাকে দুই হাতে বুকে জড়িয়ে ধরলেন! হাত দুটি কী অদ্ভুত রকমের শীতল! তাঁর বুকের মাঝে আমি অনুভব করলাম শীতল স্নেহ। আমার সারা শরীর ও মনকে শান্ত করে ভুলিয়ে দিল পুরস্কার না পাওয়ার কষ্ট। সেদিন যে স্পর্শ পেয়েছিলাম, তা আজও লেগে আছে সারা গায়ে।
উপসম্পাদকীয়xতাঁর লেখা পুনঃপাঠ করতে গিয়ে বারবার মনে হয় বাংলা কথাসাহিত্যে সেলিনা হোসেন একটি নিজস্ব কণ্ঠস্বর তৈরি করেছেন অসাধারণ পারঙ্গমতায়। সাহিত্যিক হিসেবে তিনি কখনো নিজের সামাজিক দায়বদ্ধতাকে ভুলে যাননি, উপেক্ষা করেননি। উপরতলা থেকে পোকামাকড়ের মতো বেঁচে থাকা নিচুতলার মানুষের জীবনযাপনকেও সাজিয়েছেন পরম ভালোবাসায় নিখুঁত বয়ানে।
আজ তাঁর জন্মদিন। এ দিনটি তাই সুন্দর, আনন্দের। ‘শুভ জন্মদিন’ প্রিয় লেখক সেলিনা হোসেন।
লেখক: সাংবাদিক
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫