Ajker Patrika

ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট)
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১৭: ১৯
ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপ

বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলায় বেড়েছে শীতকালীন ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫ হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে। শিশু ও বৃদ্ধদের তুলনামূলক বেশি হলেও সব বয়সী রোগীর ভিড় লক্ষ করা গেছে হাসপাতালের ফ্লু সেন্টারে। হাসপাতাল বেডে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত অসুস্থ শিশুদের নেবুজলাইজারে ওষুধ নিতে দেখা গেছে।

ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিসংখ্যানবিদ সুকুমার ভট্টাচার্যের দেওয়া তথ্য মতে, গত এক সপ্তাহে এ হাসপাতালের বহির্বিভাগে তিন হাজার ৩১ জন রোগী চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন, যার অধিকাংশই বিভিন্ন ফ্লুজনিত রোগে ভুগছেন। ভর্তি ১২৫ জন রোগীর বেশির ভাগ ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়া, সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, হাঁপানি জটিলতা নিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া উপজেলার ৮টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, ৬৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক, ব্রাকসহ বিভিন্ন এনজিওর স্বাস্থ্য কেন্দ্র, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে প্রায় ২ হাজার রোগী ফ্লুজনিত রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে অনেক রোগী হাসপাতাল বা ক্লিনিকে না গিয়ে ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খাচ্ছেন। ফলে প্রকৃত রোগীর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফ্লু সেন্টারে সরকারি ওষুধ নিতে বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেওয়া রোগীদের ভিড় দেখা যায়। রোগীদের ওষুধ দেওয়ার কাজে নিয়োজিত স্যাকমো স্বপ্না অধিকারী বলেন, ‘প্যারাসিটামল, সেট্রিজিন, মন্টিলুকাস্ট, এমোক্সিসিলিন, এজিথ্রোমাইসিন ঠান্ডাজনিত রোগের ওষুধের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। আমরা যতটা পারি দিচ্ছি বাকিটা ফার্মেসি থেকে রোগীরা কিনে নেয়।’

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু বিভাগের ৯ নম্বর বেডে গত পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছে পিলজঙ্গের নওয়াপাড়া থেকে আসা তিন মাস বয়সী শিশু সাজিদ মোড়ল। তার মা বিলকিস খানম জানান, ৫/৬ দিন আগে জ্বর ও ঠান্ডা দেখা দেয়। স্থানীয় চিকিৎসকের ওষুধ খেয়ে কোনো কাজ হয়নি। তাই নিরুপায় হয়ে ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সকাল দুপুর বিকেল নেবুলাইজার দিচ্ছেন। চলছে অন্যান্য ওষুধ। তার সন্তানের মতো অনেক শিশু আছে এখানে চিকিৎসাধীন।

উপজেলার পাগলা শ্যামনগর থেকে আসা আরেক শিশু জিহাদ (৮) ভর্তি আছে এক সপ্তাহ ধরে। পুরুষ ওয়ার্ডের ৭ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন কাঁঠালতলা গ্রামের মিরাজুল (৩৫)। ঠান্ডা-গরমে আবহাওয়ার তারতম্যে অ্যাজমায় শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ছয় দিন আগে ভর্তি হয়েছেন এখানে।

উপজেলার পরিত্রাণ ক্লিনিক, আহম্মদ ক্লিনিক, শিকদার ক্লিনিকসহ বিভিন্ন ক্লিনিকগুলোতেও রয়েছে ঠান্ডায় আক্রান্ত অনেক রোগী। এ টু জেড মেডিকেল কর্নারের স্বত্বাধিকারী মো. ইমানুল শেখ বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি মানুষ ফার্মেসিগুলোতে প্যারাসিটামল, নাপা, এইসসহ বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ কিনতে আসেন।

চায়না ডায়াগোনিষ্টিক সেন্টারের টেকনোলজিস্ট রাজিবুল ইসলাম রিঙ্কু জানান, তাঁর এখানে ঠান্ডাজনিত মারাত্মক ইনফেকশন নিয়ে অনেক রোগী সিভিসি, বুকের এক্স-রে, কফ পরীক্ষা করতে আসেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এখন ঠান্ডাজনিত রোগ এমনিতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাতাসে প্রচুর ধুলোবালি, রাতে ঠান্ডা ও দিনে গরমের জন্য তাদের সর্দি-কাশি, ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার প্রকোপ রয়েছে। তবে বেশির ভাগ রোগীই বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে যান। শিশুদের ক্ষেত্রে তিন দিনের বেশি সর্দি জ্বর থাকলে বা অসুস্থ হলে অপেক্ষা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে বলেন তিনি। এ ছাড়া যাদের অ্যালার্জি আছে তাদের তিনি বাড়তি যত্ন নিতে বলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত