Ajker Patrika

কৃষকের পাতকুয়ায় মাছ চাষ

সনি আজাদ, চারঘাট 
আপডেট : ০৪ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ১৯
কৃষকের পাতকুয়ায় মাছ চাষ

চারঘাট উপজেলাসহ রাজশাহীর বেশ কিছু এলাকা খরা প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। শুষ্ক মৌসুমে এসব এলাকায় পানির অভাবে কৃষিকাজ ব্যাহত হয়। এ জন্য ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের সেচ সুবিধার জন্য ২০১৮ সালে জেলার চারঘাট, বাঘা ও পবা উপজেলায় নির্মাণ করা হয় সৌরবিদ্যুৎ চালিত ২০টি পাতকুয়া (ডাগওয়েল)। কিন্তু এসব পাতকুয়া থেকে সাধারণ কৃষকেরা কোনো সেচ সুবিধা পাচ্ছে না।

রাজশাহী বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সূত্রে জানা যায়, রাজশাহীর প্রান্তিক কৃষকের সেচ সুবিধার জন্য ২০১৮ সালে প্রকল্প হাতে নেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের নাম ‘রাজশাহী জেলার বাঘা, চারঘাট ও পবা উপজেলায় জলাবদ্ধতা নিরসন এবং ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাপ্যতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণ প্রকল্প’। সেই বছরের অক্টোবরে শুরু হওয়া ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সৌর বিদুৎচালিত ২০টি পাতকুয়ার নির্মাণ করা হয় ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায়।

আরও জানা যায়, জেলার চারঘাট উপজেলায় ৫টি, পবায় ১১ টি, পুঠিয়ায় ২টি ও বাঘায় ২টি পাতকুয়া স্থাপন করা হয়েছে। ২০টি পাতকুয়া নির্মাণ খরচ ২ কোটি ৬০ লাখ হিসাবে প্রতিটি পাতকুয়ার জন্য খরচ হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। প্রতিটি পাতকুয়া সাড়ে ৫ হেক্টর জমিতে সেচ দিতে পারবে।

বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষের দাবি, পাতকুয়াগুলো ভূ-উপরিস্থ পানির সংরক্ষণ, সেচ কাজে ব্যবহার ও ভূ-গর্ভস্থ পানির রিচার্জ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।

কিন্তু সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চারঘাট উপজেলার সব কটি পাতকুয়া কৃষকের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ। প্রতিটি পাতকুয়া থেকে দু-একজনের বেশি সুবিধা পাচ্ছে না। সুবিধাভোগী কৃষকদের নিয়ে পাতকুয়া কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। এলাকার প্রভাবশালীরা নিজস্ব সম্পত্তি হিসেবে পাতকুয়াগুলো মাছ চাষসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করছে।

গত শনিবার সকালে চারঘাটের নিমপাড়া ইউনিয়নের বাসুপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় কৃষকেরা বোরো ধানসহ নানা রকম সবজিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিচ্ছেন। অথচ এসব খেতের পাশেই রয়েছে পাতকুয়া। সেসব পাতকুয়া থেকে কৃষকদের জমিতে সেচ না দিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত (এনামুক হক) ব্যক্তির পুকুরে মাছ চাষের জন্য পানি দেওয়া হচ্ছে।

এ সময় কথা হয় স্থানীয় বোরো চাষি মো. নুরুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই পাতকুয়াগুলো করে শুধু শুধু টাকা অপচয়। আমাদের এলাকার দুইটা পাতকুয়া এনামুল হক ও হাসিব উদ্দীন নামের দুই ভাইয়ের দখলে। তাঁরা নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। এখানে পাতকুয়া সংশ্লিষ্ট কৃষক কমিটিও গঠন হয়নি। আমরা টাকা খরচ করেও জমিতে সেচ দিতে পারছি না। তাঁরা পাতকুয়ার পানি দিয়ে মাছ চাষ করছেন। কোনো কৃষক এই পাতকুয়ার সেচ সুবিধা পাচ্ছে না।’

কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পাতকুয়া দেখভালের দায়িত্বে থাকা এনামুল হক বলেন, ‘সরকার থেকে পাতকুয়া আমাকে দিয়েছে। আমার ভাইকে একটা দিয়েছে। নিজের প্রয়োজন মেটানোর পর অন্য কৃষকদের পানি দেব। এটাই নিয়ম। পুকুরে মাছ চাষ করি। এ জন্য পানি দিতে হয়। কৃষকদের নিয়ে এখনো কমিটি করিনি। তবে কৃষকদের সেচ সমস্যা হলে সমাধান করা হয়।’

কৃষকদের সেচ সমস্যা ও পাতকুয়ার বিষয়ে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘পাতকুয়াগুলো কৃষকের সেচ সুবিধার জন্যই স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু কৃষকেরা যদি সেচ সুবিধা না পায়, তবে তা দুঃখজনক। যেহেতু এটা বরেন্দ্র দেখভাল করে, এ জন্য আমাদের করণীয় কিছু নেই।’

বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চারঘাট ও পুঠিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলী আল-মামুনুর রশীদ বলেন, পাতকুয়া সরকারি সম্পদ। এর সুবিধা ভোগ করবে পার্শ্ববর্তী সব কৃষক। পুকুরে মাছ চাষ করতে পাতকুয়ার পানি দিচ্ছে, এমনটা জানা ছিল না। পাতকুয়াকে কেউ যদি নিজের ব্যক্তিগত জিনিস মনে করে অপব্যবহার করেন, তবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পাতকুয়া হলো ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের নিম্ন পর্যন্ত গোলাকার আকৃতিতে মাটি খনন করে চারপাশ থেকে চুয়ানো পানি ধরে রাখার আধার। পাতকুয়া হাজার বছরের পুরনো একটি প্রযুক্তি যা ব্যবহার করে মানুষ তার জীবন ধারণের জন্য বালতির সঙ্গে রশি বেঁধে পানি উত্তোলন করে তা খাবার ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পোশাকের পর অস্ত্র প্রশিক্ষণও পাচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত এডিরা

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

গ্যাসের চুলা থেকে ছড়ায় বেনজিন, ক্যানসারসহ নানা রোগের ঝুঁকি: গবেষণা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত