Ajker Patrika

আঁধারে আলো ছড়াচ্ছেন ৪ তরুণ

পীরগাছা প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৫৭
আঁধারে আলো ছড়াচ্ছেন ৪ তরুণ

তিস্তার দুর্গম এলাকা কান্দিনার চর। আঁকাবাঁকা কাঁচা সড়কে অ্যাম্বুলেন্স কিংবা বড় গাড়ি যাওয়ার সুযোগ নেই। অগত্যা ভ্যানে করে ঝাঁকুনি খেতে খেতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে অসুস্থ রোগী রহিমা বেগমকে। অনেক দিন ধরেই তাঁর অসুখ। খারাপ বাতাস লেগেছে বলে ঝাড়ফুঁকের পর অবস্থার উন্নতি না হাওয়ায় নেওয়া হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে। কিন্তু বিধি বাম। অল্প বয়সেই ছোট ছোট দুই ছেলেমেয়ে রেখে রহিমাকে চলে যেতে হলো পরপারে।

পীরগাছা উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলে এমন ঘটনা যেন নিত্যদিনের চিত্র। এই কুসংস্কার আর অজ্ঞতা মনে দাগ কেটেছিল প্রান্তিক জনপদে বেড়ে ওঠা চার তরুণের। তাঁরা হলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাব্বি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাজেদুল ইসলাম মাজেদ ও সদ্য উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোনো মাইদুল ইসলাম। এই চার তরুণের হাতেই গড়ে তোলা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্ন ছুঁই ইয়ুথ ফাউন্ডেশন।

উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চলের এই সংগঠন ২০১৯ সাল থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আলোর প্রদীপ হয়ে কাজ করছে। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের পাঠদান, টাকার অভাবে লেখাপড়া বন্ধ শিক্ষার্থীদের সহায়তা, শীতার্তদের শীতবস্ত্র দেওয়া, স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা, রক্তদান কর্মসূচি ও অনাহারীদের বাসায় খাদ্যদ্রব্য দেওয়াসহ চরের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে সংগঠনটি। করোনাকালেও তাদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, দুর্গম চরের মধ্যে ঝকঝকে টিনের চালা। ভেতরে শিশুদের কোলাহল। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল ছোট ছোট শিশুদের। মাটিতে চট বিছিয়ে কেউ পড়ছে, কেউ খেলছে। কেউ বা পড়া বুঝে নিতে ব্যস্ত। ছোট্ট একটি ঘরে গাদাগাদি করে চলছে পড়া। নেই কোনো বেঞ্চ কিংবা ব্ল্যাক বোর্ড। শিক্ষিকা হিসেবে পড়াচ্ছেন স্বপ্ন ছুঁই ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের সদস্য সানজিদা ইসলাম রিপা। তিনি অনার্সের শিক্ষার্থী। কান্দিনার চরে তাঁর বাড়ি। বাড়িতে এলেই পালা করে এসব শিক্ষার্থীকে পড়ান তিনি। রিপা বলেন, ‘অবসর সময়ে চরের শিশুদের লেখাপড়া শেখাচ্ছি। এতে আমার সময়ও কাটছে, তারাও কিছু শিখছে।’

স্বপ্ন ছুঁই ইয়ুথ ফাউন্ডেশনের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিভাগের দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ মাজেদুল ইসলাম জানান, চরের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়া রোধে রয়েছে স্বপ্ন ছুঁই স্কুল। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ রোধে সচেতনতা, মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে তরুণদের উদ্বুদ্ধকরণ ও তরুণদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিকরণে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে সংগঠনটি। আঁধারে ঢাকা চরের মানুষের মধ্যে আলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করছেন তাঁরা।

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সংগঠনের ১১ জনের কার্যকরী কমিটি ও দেড় শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী কাজ করছে। ইতিমধ্যে স্বপ্ন ছুঁই ব্লাড ব্যাংক নামে প্রজেক্ট হাতে নিয়েছি। অধিক ফলজ ও ঔষধি গাছ লাগানোর লক্ষ্যে স্বপ্ন ছুঁই নার্সারি করা হয়েছে।’

প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেহেদী হাসান রাব্বি বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের কুসংস্কার ও অসহায়ত্ব দেখে বড় হয়েছি। চরের ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত না করে, সাংসারিক কাজ ছিল তাদের লক্ষ্য। অল্পশিক্ষিত এসব মানুষের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা লেগেই থাকত। এসব দূর করার জন্য আমরা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের ফ্রি পাঠশালা, রক্তদান কর্মসূচি, টেলিমেডিসিন সেবাসহ নানা কর্মসূচি চালু রয়েছে। তবে আর্থিক সংকটে আমরা দ্রুত এগোতে পারছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত