Ajker Patrika

মহান পুশকিন

ড. মনীন্দ্র কুমার রায়
আপডেট : ০৬ জুন ২০২২, ১০: ০৫
মহান পুশকিন

আজ ৬ জুন। রাশিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ কবি এবং আধুনিক রুশ সাহিত্যের জনক আলেকসান্দর সের্গেয়েভিচ পুশকিনের ২২৩তম জন্মজয়ন্তী। ১৭৯৯ সালের ৬ জুন রাশিয়ার মস্কোতে একটি অভিজাত পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পণ্ডিতদের গবেষণায় প্রতিষ্ঠিত যে পুশকিনের প্রপিতামহ আব্রাম পেত্রোভিচ গ্যানিবাল বর্তমান ক্যামেরুনের চাদ হ্রদের সীমান্তবর্তী এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। সামরিক প্রকৌশলী হিসেবে ফ্রান্সে শিক্ষালাভের পর গ্যানিবাল রেভালের গভর্নর হন এবং পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সমুদ্র দুর্গ ও খাল নির্মাণের দায়িত্ব নিয়ে জেনারেল ইন চিফ (তৃতীয় সর্বোচ্চ সামরিক পদমর্যাদা) পদ লাভ করেন।

মস্কোয় জন্মগ্রহণকারী পুশকিন ধাত্রী ও ফরাসি শিক্ষকদের কাছ থেকে ফরাসি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন এবং ১০ বছর বয়স অবধি মূলত ফরাসি ভাষায় কথা বলতেন। তবে তিনি গৃহভৃত্য এবং আয়া আরিনা রাদিওনোভনার মাধ্যমে রুশ ভাষার সঙ্গে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

১৫ বছর বয়সে তাঁর প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। সাঙ্কৎ পিটার্সবুর্গের কাছে সারস্কোয়ে সেলো শহরের মর্যাদাপূর্ণ ইম্পিরিয়াল লাইসিয়াম থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৮২০ সালে তিনি তাঁর প্রথম দীর্ঘ কবিতা ‘রুসলান ও ল্যুদমিলা’ প্রকাশ করেন। তিনি উদারনৈতিক ব্যক্তিত্ববাদ এবং ফরাসি চিন্তাবিদ দিদেরো ও ভলতেয়ারের আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। ধীরে ধীরে তিনি সমাজসংস্কারক ও সাহিত্যিক সংস্কারবাদীদের মুখপাত্র হিসেবে আবির্ভূত হন। ইতিমধ্যে তিনি তাঁর লেখা বিতর্কিত কবিতা ‘ওডে টু লিবার্টি’ আবৃত্তি করেন, যা রাশিয়ার জার প্রথম আলেকসান্দরকে ক্ষুব্ধ করে। ফলস্বরূপ পুশকিন ১৮২০ সালে তৎকালীন রাজধানী পিটার্সবুর্গ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। অতঃপর তিনি ককেশাস, ক্রিমিয়া, কামিয়ানকা ও মলদোভার কিশিনিয়েভে নির্বাসিত জীবনযাপন করেন।

১৮২৩ সালে কিশিনিয়েভে অবস্থানকালে ‘ককেশাসে বন্দী’ ও ‘বখচিসারাইয়ের ফোয়ারা’ নামে দুটি রোমান্টিক কাব্য লিখে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। ১৮২৩ সালে পুশকিন ওদেসা চলে যান। ১৮২৫ সালে তিনি ডিসেম্বরিস্ট আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। আবার সরকারের সঙ্গে সংঘাতে জড়ান। ফলে তাঁকে তাঁর মায়ের গ্রামীণ জমিদারি মিখাইলোভ্স্কায়ে ১৮২৪ থেকে ১৮২৬ সাল পর্যন্ত নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়।

পুশকিনের মন জয় করা নারীদের তালিকায় আছে দুটো ভাগ। প্রথম ভাগে আছে ১৬টি নাম, দ্বিতীয় ভাগে ১৮টি। প্রথম ভাগে যে নামগুলো আছে তাঁদের প্রত্যেককেই তিনি ভালোবেসেছেন। সেই তালিকায় কয়েকজনের নাম হলো ইয়েকাতেরিনা আন্দ্রেয়েভনা কারামজিনা, আভদোতিয়া ইভানোভনা গোলিৎসিনা, আমালিয়া রিজনিচ, আনা আলেক্সেয়েভনা আন্দ্রো, আনা পেত্রোভনা কার্ন। আনা কার্নকে লেখা ‘টু’ কবিতাটি রুশ ভাষায় লেখা সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেমের কবিতা। এখানে উল্লেখ্য, আলোচিত নারীদের প্রায় সবাই ছিলেন রূপবতী এবং অভিজাত পরিবারের বিবাহিত নারী।

১৮২৫ সালে মিখাইলভস্কা এস্টেটে নির্বাসনে থাকাকালীন পুশকিন তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত নাটক ‘বোরিস গোদুনোভ’ লেখেন, যা পাঁচ বছর পরে প্রকাশিত হয়। তাঁর কাব্যিক উপন্যাস ‘ইভগেনি আনেগিন’ ১৮২৫ থেকে ১৮৩২ সালের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে লিখিত হয়। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, নাট্যকার।

১৮২৮ সালে পুশকিন ১৬ বছর বয়সী নাতালিয়া গনচারোভারের সঙ্গে পরিচিত হন। সেই সময়ে নাতালিয়া গনচারোভার ছিলেন মস্কোর সর্বাধিক আলোচিত সুন্দরীদের একজন। তিনি ধনী ব্যবসায়ী পরিবারের কন্যা ছিলেন। এই সময়ে পুশকিন সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। দুই বছর পর ফিরে আসেন এবং বিয়ের প্রস্তাব দেন। ১৮৩০ সালে তাঁদের বাগদান হয় এবং ১৮৩১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি তাঁদের বিয়ে হয়।

১৯৩৬ সালে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এই সময়ে তাঁর স্ত্রী ফরাসি আর্মি অফিসার জর্জেস দান্তেসের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িত বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পুশকিন দান্তেসকে দ্বন্দ্বযুদ্ধে আহ্বান করেন। কথিত আছে যে এই স্থলযুদ্ধে জার সরকারের সংশ্লিষ্টতা ছিল। ১৯৩৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পুশকিনের সঙ্গে দান্তেসের দ্বন্দ্বযুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। দান্তেস প্রথম গুলি চালিয়ে পুশকিনকে গুরুতর আহত করেন। এর দুই দিন পর ১০ ফেব্রুয়ারি বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে সেন্ট পিটার্সবুর্গের নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এই বাড়িটি বর্তমানে পুশকিন জাদুঘর। অকালে মারা গেলেও পুশকিন আজও আধুনিক রুশ সাহিত্যের জনক বলে স্বীকৃত।

ড. মনীন্দ্র কুমার রায়, উপাচার্য, রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

কোটি টাকা ‘ভর্তুকি’র জিম্বাবুয়ে সিরিজে বাংলাদেশ যা পেল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত