Ajker Patrika

চকলেট

আপডেট : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ৩৩
চকলেট

কলকাতা ইউনিভার্সিটি কোরের জন্য মার্চসং লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ। সে উপলক্ষে কলকাতায় আসা দরকার। তাঁকে না বলেই শৈলজারঞ্জন মজুমদার কী একটা কাজে চলে গেছেন কলকাতায়। কলেজের অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথকে বলে যাননি। মাত্র এক দিনের ছুটি। এরপরই ফিরবেন শান্তিনিকেতনে।

কিন্তু তাতে রাগ করলেন রবীন্দ্রনাথ। অধ্যক্ষকে বললেন, ‘তুমি ওকে এভাবে ছুটি দিলে কেন? আমার ওকে যখন-তখন দরকার হয়।’

রাত সাড়ে ১০টার ট্রেনে ফিরে এলেন শৈলজা। সকালে বৈতালিকে যাওয়ার পর অধ্যক্ষ বললেন, গুরুদেব খেপেছেন। খাওয়া তেমন হয়নি, সে অবস্থায়ই গেলেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘আমি সকাল সাড়ে ৮টায় কলকাতা যাচ্ছি। তোমাকেও যেতে হবে।’

পেটে খিদে, কী খাবেন তা নিয়ে ভাবছেন শৈলজা, এমন সময় সুধাকান্তবাবু এসে বললেন, ‘চলুন, গুরুদেব আপনাকে নিতে পাঠিয়ে দিলেন। ওর সন্দেহ আপনি যদি না যান!’
পেটে খিদে নিয়ে রেলস্টেশন। রবীন্দ্রনাথ যাবেন ফার্স্ট ক্লাসে। অন্যরা ইন্টারক্লাসে। খিদেয় চোঁ চোঁ করা পেট নিয়ে শৈলজা গম্ভীর হয়ে বসে রইলেন। ভেদিয়া স্টেশনে ট্রেন থামলে সুধাকান্তবাবু টিফিন ক্যারিয়ারে করে সন্দেশ, আপেলসহ আরও অনেক মিষ্টি নিয়ে এই কামরায় এলেন। বললেন, ‘গুরুদেব পাঠিয়ে দিলেন। আপনার খাওয়া হয়নি বলে তিনি চিন্তিত।’

রবীন্দ্রনাথ আশ্রমের সবার সুখ-দুঃখের খবর রাখতেন। এটা তারই একটা উদাহরণ। আশ্রমে অমিতা সেন নামে একজন মেয়ে ছিল। রবীন্দ্রনাথ তাকে খুব ভালোবাসতেন। আশ্রমে থেকেই মেয়েটা স্কুল-কলেজে লেখাপড়া শিখেছিল। তাকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ’ গানটি।

সেই মেয়েটি যখন নেফ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়ে কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে, তখন চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছেন, মেয়েটি আর বাঁচবে না। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ছিলেন। তিনি শৈলজাকে ডেকে একটি বিশেষ চকলেটের নাম করে বললেন, ‘খুকু এই চকলেট খেতে খুব ভালোবাসত। ও তো বাঁচবে না, তুমি নিজে গিয়ে ওকে এই চকলেট খাইয়ে এসো।’

সূত্র: শৈলজারঞ্জন মজুমদার, যাত্রাপথের আনন্দগান পৃষ্ঠা ৭৫-৭৭

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত