ড. মঞ্জুরে খোদা
হামাসের হামলার পর ইসরায়েল অত্যন্ত কঠোর ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সপ্তাহজুড়ে হামলায় তারা গাজা শহর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। সেখানে তারা পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে দুই পক্ষে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। হামাসের হাতে আটক আছে শতাধিক ইসরায়েলি। এর মধ্যে ৯৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। গাজা এখন এক জ্বলন্ত শ্মশান। পরিস্থিতি ভয়াবহ।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি হামাসকে শায়েস্তা করতে রণতরি পাঠানোসহ নানাভাবে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের হৃদয় দুমড়েমুচড়ে যেতে পারে, কিন্তু আমাদের সংকল্প পরিষ্কার, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে আছে। হামাস একটি সন্ত্রাসী দল, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কি হামাস অনেক বড় শক্তি? গাজা সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তিন লাখ রিজার্ভ সেনার ডাক পড়েছে। বিভিন্ন দেশে থাকা ইসরায়েলি সৈন্যদের বিশেষ ফ্লাইটে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এত আয়োজন তৎপরতা কী ইঙ্গিত করে? মাত্র কয়েক হাজার হামাস যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়তে আমেরিকাকে নৌবহর পাঠাতে হলো কেন? সেটা কি ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশগুলোকে চাপে রাখার জন্য এই বাড়তি প্রস্তুতি ও মহড়া? ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যেক হামাস সদস্যের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন। হামাস যোদ্ধারাও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়ছে।
বিশ্বের পরাশক্তিগুলো নানাভাবে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এই সংঘাত ও অবস্থার জন্য আমেরিকার ভুল নীতি দায়ী। তিনি আবারও দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ফর্মুলার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। চীন-ইরান-সৌদি আরব-তুরস্ক হামাসের পক্ষে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের এই দ্বন্দ্বে স্পষ্টত বিশ্ব ক্ষমতাধর শক্তি দুটি শিবিরে বিভক্ত।রাশিয়া অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করে অর্থপূর্ণ সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।
হামাসের এই আক্রমণের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিদিনের আচরণ ও ঐতিহাসিক অনেক বিষয় যুক্ত। তাকে পাশ কাটিয়ে এই আলোচনা হবে খণ্ডিত। ফিলিস্তিনিরা যুগ যুগ ধরেই ইসরায়েলের হাতে নির্যাতন ও বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে। তারা তাদের স্বজনদের হারাচ্ছে। লাশ, পঙ্গুত্ব, গোলাবারুদ, বন্দিত্ব নিয়ে জীবন পার করছে। ইসরায়েলকেও বুঝতে হবে স্বজন হারানো ও বঞ্চনার যন্ত্রণা কী, তার পরিণতি কী হতে পারে।
হামাসের যোদ্ধাদের এই হামলার অনেক মূল্য দিতে হবে—তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পশ্চিমা শক্তির সমর্থনপুষ্ট ইসরায়েলের কাছে হামাস তেমন কোনো শক্তি নয়। তবে অত্যন্ত সীমিত শক্তি নিয়ে হামাস এবার যা করেছে তা অভাবনীয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তারা অনেক সেনা কর্মকর্তা ও বিদেশি নাগরিকদের নিজেদের কবজায় নিয়েছে। সেটা ইসরায়েলের সঙ্গে একটা শক্ত দর-কষাকষির জায়গা তৈরি করবে হয়তো, তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। অতীতে ইসরায়েলের বন্দী সেনা গিলাদ শালিতের বিনিময়ে তারা এক শ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করতে পেরেছিল। তবে ইসরায়েল এবার গাজা অবরোধ তুলে নেওয়ার সঙ্গে বন্দীদের মুক্তির শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এই শর্ত হামাসকে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাদের একটা বড় শক্তির জায়গা দুর্বল করে দিয়েছে। কেননা গাজায় এখন খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি অবশিষ্ট নেই। এই তীব্র মানবিক সংকট মোকাবিলার কৌশলও তাদের বের করতে হবে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের বিষয়টা ধর্মের নয়। এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ ঔপনিবেশিকতার। কিন্তু পাশ্চাত্যের প্রচারমাধ্যমে প্রতিনিয়তই একে ধর্মীয় বিরোধ-সংঘাত হিসেবেই প্রচার করা হয়। ফিলিস্তিনে শুধু মুলমানেরাই থাকে না, সেখানে অনেক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীও বাস করে। এই আন্দোলনের মূল দিক হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার। যেমন ভারতবাসী একদা ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। বিষয়টা তেমনই। সেখানে ধর্মের কোনো বিষয় ছিল না, কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই সেখানে ধর্মের প্রবেশ ঘটানো হয়েছে। ইসরায়েল তৈরি হয়েছে ইউরোপের ঔপনিবেশিক চরিত্র ও স্বার্থের কারণে। জায়নবাদী আন্দোলনের ফলে এই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ছোট শহর গাজায় বাস করে ২৩ লাখ মানুষ। গাজা সীমান্তের ৩০০ মিটারের মধ্যে এর বাসিন্দারা চলাফেরা করতে পারে না। তাদের জন্য বরাদ্দ জলাসীমার মাত্র ৫০ ভাগ তারা ব্যবহার করতে পারে। বেকারের সংখ্যা বিশ্বের সর্বাধিক। ষাট ভাগের বেশি মানুষ (৬২ শতাংশ) খাদ্যসংকটে থাকে। তাদের ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম। গাজার ৭৮ শতাংশ পাইপের পানি মানুষের খাবার ও ব্যবহারের অনুপযুক্ত। প্রতিনিয়ত বোমা হামলা করে তাদের পানির সরবরাহ লাইনকে বিষাক্ত করে ফেলা হয়েছে। সেখানে দিনের ১১ ঘণ্টা কোনো বিদ্যুৎ থাকে না। একটি মাত্র পাওয়ার প্ল্যান্ট, যেটি ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। সেটাকেও প্রতিনিয়ত বোমা মেরে অকেজো করে দেওয়া হয়, ধ্বংস করা হয়।
জাতিসংঘের হিসাবে বর্তমানে ৬০ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর তালিকায় নিবন্ধিত। এই বহুবিধ সংকট ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা গাজাবাসীকে ঘিরে আছে ইসরায়েলের বর্বর ও অমানবিক সেনারা। এক দশক আগে দ্য গার্ডিয়ান এসব তথ্য প্রকাশ করে। গাজার এমন পরিস্থিতির কথা ২০১০ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনও স্বীকার করেছিলেন এবং মন্তব্য করেছিলেন, গাজা হচ্ছে একটি ছাদখোলা বৃহত্তম কারাগার। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একটি প্যানেলও গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলেছে।
বলা হচ্ছে, হামাস বিনা উসকানিতে ইসরায়েলে হামলা করেছে। বিষয়টা কি তাই? এগুলোই পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমের প্রোপাগান্ডা। ইসরায়েল সেখানে প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় গাজাবাসী ও ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাদের ওপর নির্যাতন করছে, সেগুলো কি ইসরায়েলিদের উসকানি নয়? তাহলে কীভাবে বলা হয়, বিনা উসকানিতে হামাস তাদের ওপর হামলা করেছে?
ইসরায়েল প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করছে। শত শত ফিলিস্তিন কিশোর, যুবককে জেলে পুরছে, গুম-খুন করছে। অন্যান্য বছরের কথা বাদই দিলাম, শুধু ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে হামাসের এই হামলা পর্যন্ত ইসরায়েল তিন শতাধিক সাধারণ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যার মধ্যে পঞ্চাশের অধিক ছিল শিশু। তাহলে কীভাবে বলা হয় যে বিনা উসকানিতে ইসরায়েলের ওপর হামলা করা হয়েছে?
তাহলে তারা কী চায়? ফিলিস্তিনিরা কি কোনো প্রতিরোধ না করে তাদের হাতে মার খাবে, মৃত্যুবরণ করবে? প্রতিরোধ করলেই যদি সন্ত্রাসী হয়, তাহলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইউক্রেন বাহিনীও সন্ত্রাসী। ইউক্রেনের ভূমি দখল করে রাশিয়া কোনো অন্যায় করেনি, তাই কি? ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলেছেন! হামাস যদি ইসরায়েল আগ্রাসন প্রতিরোধের কারণে সন্ত্রাসী হয় তাহলে তারা কী?
ফিলিস্তিনিরা যেটুকু টিকে আছে প্রতিরোধের কারণেই, না হলে ইসরায়েল ব্ল্যাক হোলে এত দিনে তারা বিলীন হয়ে যেত। সমস্যা হচ্ছে, হামাস হামলা বা প্রতিরোধ করলে ইসরায়েলের পক্ষে পশ্চিমা মিডিয়া সরব থাকে কিন্তু ইসরায়েল হামলা করলে পশ্চিমা মিডিয়া নীরব থাকে। সে জন্য বলি, এখানে হামাসের হামলাকে সমর্থন-বিরোধিতার বিষয় নয়। কী ঘটছে, কেন ঘটছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে অবিচার-নির্যাতন করছে, এসব প্রতিরোধ তার সামান্য বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সমন্বয়ক, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, কানাডা
হামাসের হামলার পর ইসরায়েল অত্যন্ত কঠোর ও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সপ্তাহজুড়ে হামলায় তারা গাজা শহর মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। সেখানে তারা পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে দুই পক্ষে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। হামাসের হাতে আটক আছে শতাধিক ইসরায়েলি। এর মধ্যে ৯৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। গাজা এখন এক জ্বলন্ত শ্মশান। পরিস্থিতি ভয়াবহ।
যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তি হামাসকে শায়েস্তা করতে রণতরি পাঠানোসহ নানাভাবে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের হৃদয় দুমড়েমুচড়ে যেতে পারে, কিন্তু আমাদের সংকল্প পরিষ্কার, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে আছে। হামাস একটি সন্ত্রাসী দল, তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কি হামাস অনেক বড় শক্তি? গাজা সীমান্তে লক্ষাধিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তিন লাখ রিজার্ভ সেনার ডাক পড়েছে। বিভিন্ন দেশে থাকা ইসরায়েলি সৈন্যদের বিশেষ ফ্লাইটে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এত আয়োজন তৎপরতা কী ইঙ্গিত করে? মাত্র কয়েক হাজার হামাস যোদ্ধার বিরুদ্ধে লড়তে আমেরিকাকে নৌবহর পাঠাতে হলো কেন? সেটা কি ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশগুলোকে চাপে রাখার জন্য এই বাড়তি প্রস্তুতি ও মহড়া? ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রত্যেক হামাস সদস্যের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছেন। হামাস যোদ্ধারাও মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধেই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়ছে।
বিশ্বের পরাশক্তিগুলো নানাভাবে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, এই সংঘাত ও অবস্থার জন্য আমেরিকার ভুল নীতি দায়ী। তিনি আবারও দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ফর্মুলার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। চীন-ইরান-সৌদি আরব-তুরস্ক হামাসের পক্ষে তাদের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের এই দ্বন্দ্বে স্পষ্টত বিশ্ব ক্ষমতাধর শক্তি দুটি শিবিরে বিভক্ত।রাশিয়া অবিলম্বে এই যুদ্ধ বন্ধ করে অর্থপূর্ণ সংলাপের আহ্বান জানিয়েছে।
হামাসের এই আক্রমণের সঙ্গে ইসরায়েলের প্রতিদিনের আচরণ ও ঐতিহাসিক অনেক বিষয় যুক্ত। তাকে পাশ কাটিয়ে এই আলোচনা হবে খণ্ডিত। ফিলিস্তিনিরা যুগ যুগ ধরেই ইসরায়েলের হাতে নির্যাতন ও বঞ্চনার স্বীকার হচ্ছে। তারা তাদের স্বজনদের হারাচ্ছে। লাশ, পঙ্গুত্ব, গোলাবারুদ, বন্দিত্ব নিয়ে জীবন পার করছে। ইসরায়েলকেও বুঝতে হবে স্বজন হারানো ও বঞ্চনার যন্ত্রণা কী, তার পরিণতি কী হতে পারে।
হামাসের যোদ্ধাদের এই হামলার অনেক মূল্য দিতে হবে—তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পশ্চিমা শক্তির সমর্থনপুষ্ট ইসরায়েলের কাছে হামাস তেমন কোনো শক্তি নয়। তবে অত্যন্ত সীমিত শক্তি নিয়ে হামাস এবার যা করেছে তা অভাবনীয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তারা অনেক সেনা কর্মকর্তা ও বিদেশি নাগরিকদের নিজেদের কবজায় নিয়েছে। সেটা ইসরায়েলের সঙ্গে একটা শক্ত দর-কষাকষির জায়গা তৈরি করবে হয়তো, তবে পরিস্থিতি ভিন্ন। অতীতে ইসরায়েলের বন্দী সেনা গিলাদ শালিতের বিনিময়ে তারা এক শ ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্ত করতে পেরেছিল। তবে ইসরায়েল এবার গাজা অবরোধ তুলে নেওয়ার সঙ্গে বন্দীদের মুক্তির শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এই শর্ত হামাসকে কঠিন পরীক্ষার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তাদের একটা বড় শক্তির জায়গা দুর্বল করে দিয়েছে। কেননা গাজায় এখন খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি অবশিষ্ট নেই। এই তীব্র মানবিক সংকট মোকাবিলার কৌশলও তাদের বের করতে হবে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন দ্বন্দ্বের বিষয়টা ধর্মের নয়। এই দ্বন্দ্বের মূল কারণ ঔপনিবেশিকতার। কিন্তু পাশ্চাত্যের প্রচারমাধ্যমে প্রতিনিয়তই একে ধর্মীয় বিরোধ-সংঘাত হিসেবেই প্রচার করা হয়। ফিলিস্তিনে শুধু মুলমানেরাই থাকে না, সেখানে অনেক খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীও বাস করে। এই আন্দোলনের মূল দিক হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার। যেমন ভারতবাসী একদা ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। বিষয়টা তেমনই। সেখানে ধর্মের কোনো বিষয় ছিল না, কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই সেখানে ধর্মের প্রবেশ ঘটানো হয়েছে। ইসরায়েল তৈরি হয়েছে ইউরোপের ঔপনিবেশিক চরিত্র ও স্বার্থের কারণে। জায়নবাদী আন্দোলনের ফলে এই ইহুদি রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ ছোট শহর গাজায় বাস করে ২৩ লাখ মানুষ। গাজা সীমান্তের ৩০০ মিটারের মধ্যে এর বাসিন্দারা চলাফেরা করতে পারে না। তাদের জন্য বরাদ্দ জলাসীমার মাত্র ৫০ ভাগ তারা ব্যবহার করতে পারে। বেকারের সংখ্যা বিশ্বের সর্বাধিক। ষাট ভাগের বেশি মানুষ (৬২ শতাংশ) খাদ্যসংকটে থাকে। তাদের ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম। গাজার ৭৮ শতাংশ পাইপের পানি মানুষের খাবার ও ব্যবহারের অনুপযুক্ত। প্রতিনিয়ত বোমা হামলা করে তাদের পানির সরবরাহ লাইনকে বিষাক্ত করে ফেলা হয়েছে। সেখানে দিনের ১১ ঘণ্টা কোনো বিদ্যুৎ থাকে না। একটি মাত্র পাওয়ার প্ল্যান্ট, যেটি ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সক্ষম। সেটাকেও প্রতিনিয়ত বোমা মেরে অকেজো করে দেওয়া হয়, ধ্বংস করা হয়।
জাতিসংঘের হিসাবে বর্তমানে ৬০ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর তালিকায় নিবন্ধিত। এই বহুবিধ সংকট ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে থাকা গাজাবাসীকে ঘিরে আছে ইসরায়েলের বর্বর ও অমানবিক সেনারা। এক দশক আগে দ্য গার্ডিয়ান এসব তথ্য প্রকাশ করে। গাজার এমন পরিস্থিতির কথা ২০১০ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনও স্বীকার করেছিলেন এবং মন্তব্য করেছিলেন, গাজা হচ্ছে একটি ছাদখোলা বৃহত্তম কারাগার। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক একটি প্যানেলও গাজা উপত্যকায় আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলেছে।
বলা হচ্ছে, হামাস বিনা উসকানিতে ইসরায়েলে হামলা করেছে। বিষয়টা কি তাই? এগুলোই পশ্চিমা প্রচারমাধ্যমের প্রোপাগান্ডা। ইসরায়েল সেখানে প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টায় গাজাবাসী ও ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে, তাদের ওপর নির্যাতন করছে, সেগুলো কি ইসরায়েলিদের উসকানি নয়? তাহলে কীভাবে বলা হয়, বিনা উসকানিতে হামাস তাদের ওপর হামলা করেছে?
ইসরায়েল প্রতিদিন ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করছে। শত শত ফিলিস্তিন কিশোর, যুবককে জেলে পুরছে, গুম-খুন করছে। অন্যান্য বছরের কথা বাদই দিলাম, শুধু ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে হামাসের এই হামলা পর্যন্ত ইসরায়েল তিন শতাধিক সাধারণ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। যার মধ্যে পঞ্চাশের অধিক ছিল শিশু। তাহলে কীভাবে বলা হয় যে বিনা উসকানিতে ইসরায়েলের ওপর হামলা করা হয়েছে?
তাহলে তারা কী চায়? ফিলিস্তিনিরা কি কোনো প্রতিরোধ না করে তাদের হাতে মার খাবে, মৃত্যুবরণ করবে? প্রতিরোধ করলেই যদি সন্ত্রাসী হয়, তাহলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ইউক্রেন বাহিনীও সন্ত্রাসী। ইউক্রেনের ভূমি দখল করে রাশিয়া কোনো অন্যায় করেনি, তাই কি? ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি হামাসকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠন বলেছেন! হামাস যদি ইসরায়েল আগ্রাসন প্রতিরোধের কারণে সন্ত্রাসী হয় তাহলে তারা কী?
ফিলিস্তিনিরা যেটুকু টিকে আছে প্রতিরোধের কারণেই, না হলে ইসরায়েল ব্ল্যাক হোলে এত দিনে তারা বিলীন হয়ে যেত। সমস্যা হচ্ছে, হামাস হামলা বা প্রতিরোধ করলে ইসরায়েলের পক্ষে পশ্চিমা মিডিয়া সরব থাকে কিন্তু ইসরায়েল হামলা করলে পশ্চিমা মিডিয়া নীরব থাকে। সে জন্য বলি, এখানে হামাসের হামলাকে সমর্থন-বিরোধিতার বিষয় নয়। কী ঘটছে, কেন ঘটছে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। ৭০ বছরের বেশি সময় ধরে ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে অবিচার-নির্যাতন করছে, এসব প্রতিরোধ তার সামান্য বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
লেখক-গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; সমন্বয়ক, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরি, কানাডা
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫