সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ভালো খবরের জন্য উন্মুখ থাকি, কিন্তু তেমন একটা আসে না। খুচরো দু-চারটা যা আসে তা দেখে ভালো লাগে। যেমন এই খবরটা। সাতক্ষীরার এক প্রান্তিক এলাকায় বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সেটির নির্মাণ-স্থাপত্য বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করেছে। আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার একটি বিশ্বমানের স্বীকৃতি, হাসপাতালটির নির্মাণ-স্থাপত্য সেই পুরস্কারটি পেয়েছে। স্থপতি কাশেম মাহবুব চৌধুরীকে আমরা অভিনন্দন জানাই। দেশে মেধাবান অনেকেই আছেন, কিন্তু দুঃখের যেটা কারণ, সেটা হলো মেধা বিকাশের সুযোগ দেশে খুবই সীমিত। বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা প্রথমবারের মতো কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সংস্থাপনে সফল হয়েছেন; অথচ বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা এমনই নাজেহাল যে এখানকার মানুষ বিদেশে ছোটেন চিকিৎসার জন্য। পুরোনো সেই কথাটাই বারবার বলতে হয়, গোটা ব্যবস্থাটাই বিরূপ ভূমিকা নিচ্ছে। যেমন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার ঘটনা। সন্দেহ কী যে তিনি একজন মেধাবান যুবক ছিলেন, সেনাবাহিনীর ভালো চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে প্রামাণ্য ছবি তুলছিলেন, ছোটখাটো একটি টিমও গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পারলেন না তো, নিহত হলেন পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের হাতে।
মেধাবী ওই যুবক কেবল যে প্রাণ হারালেন তা-ই নয়, তিনি একজন অপরাধী বলেই চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছিলেন, পুলিশ সে মর্মেই সাফসুতরো মামলা খাড়া করে ফেলেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মরণোত্তর ‘বদমাশ’ খ্যাতি লাভের হাত থেকে যে বাঁচলেন, সেটা অলৌকিক কোনো ঘটনার দরুন নয়, একেবারেই বস্তুগত কার্যকারণে। প্রথমত, মিডিয়ায় খবরটা ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। তার চেয়েও বড় ব্যাপার অবসরপ্রাপ্ত হলেও মেজর সিনহা একসময়ে সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর অফিসারদের সংগঠন আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানিয়ে ন্যায়বিচার দাবি করেছিল এবং মামলার বাদী যিনি, তিনি যে ওই সাবেক কর্মকর্তার বোন, এটাও বিচারের দাবিকে শক্তিশালী করে থাকার কথা। বিচার শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আদালত মূল অপরাধী দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায় পেতে খুব যে বিলম্ব হয়েছে এমনও নয়। বিচার বিভাগে যে মেধার অত্যন্ত অভাব রয়েছে, এটা বোধ হয় ঠিক নয়; কিন্তু ওই একই ঘটনা, পরিবেশ অনুকূল থাকে না, মেধার পরিচর্যা ও প্রকাশ দুটোই বাধাগ্রস্ত হয়।
এটাও ভালো খবর, আদালত বলেছেন যে দণ্ডিত আসামি প্রদীপ কুমারকে যে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, তার দ্বারা ওই সব সম্মাননার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আদালতের ভাষ্য: ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ধারাবাহিকভাবে মানুষ তাঁর (প্রদীপের) দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। [...] অতীতের রেকর্ড খারাপ হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে একাধিকবার বিপিএম, পিপিএম পদকে ভূষিত করা হয়েছে।’ রায়ে আরও বলা হয়েছে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি ‘ডাকাত, মাদক পাচারকারী হিসেবে সাব্যস্ত করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়েছেন।’ শুধু তা-ই নয়, ঘটনার যাঁরা শিকার হয়েছেন তাঁদের আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীসহ বহুজনকে আসামি করে একটি হত্যা, একটি মাদক এবং একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করতেন।’ (আমাদের সময়, ০৮-০২-২০২২)।
সবই সত্য। মামলা করার উদ্দেশ্য থাকত একটাই, টাকা আদায় করা। এভাবে প্রদীপ কুমার বিস্তর সম্পত্তি করেছেন এবং কর্তৃপক্ষ মনে করত তিনি নাকি মাদক পাচার দমনে অত্যন্ত সফল ছিলেন। ওই এলাকাতেই কর্তব্যরত আরেকজন পুলিশ অফিসার, বাবুল আক্তার, স্ত্রী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে যিনি এখন জেলে আছেন, তিনিও নাকি খুব খ্যাতি অর্জন করেছিলেন অপরাধ দমনে, তাঁর ক্ষেত্রে জঙ্গিদের নির্মূল করার ব্যাপারে, যে জন্য স্ত্রী হত্যার ঘটনার পরে তাঁর দোসররা রটনা করতে পেরেছিলেন যে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার মতলবে জঙ্গিরাই তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেছে। তারা ছাড়া আবার কারা?
প্রদীপ কুমারের কাজের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ছিল। অনেকেই ছিলেন ভুক্তভোগী। এখন জানা যাচ্ছে যে প্রদীপের ৩৩ মাসের রাজত্বে কথিত বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে ১০৬টি এবং তাতে নিহত হয়েছেন ১৭৪ জন। ভুক্তভোগীদের আত্মীয়স্বজনের সাহস ছিল না, সুযোগও ছিল না যে মুখ খুলবেন। শুনবে যে এমন লোকও পাচ্ছিলেন না খুঁজে। প্রদীপ এখন আটক বলে সাহসে ভর করে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। মুখ খুলে বলেছেন কীভাবে তাঁরা স্বজনদের হারিয়েছেন, টাকা দিয়েছেন; তবু বাঁচাতে পারেননি। অথচ প্রদীপ ছিলেন প্রশংসিত, সম্মানিত একজন অফিসার। পুলিশ বাহিনীতে ভালো মানুষ প্রচুর আছেন, যাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেন, কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ পর্যন্ত দেন। কিন্তু তাঁরা থাকেন কোণঠাসা অবস্থায়, তাঁদের প্রভাব কতটা পড়ে জানা যায় না; যেটা জানা যায়, টেরও পাওয়াও যায় সেটা হলো, প্রদীপ কুমারদের দাপট, দেখা যায় তাঁরা সম্মাননা পদকও পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যত্রও ওই একই অবস্থা।
আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে র্যাবের সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর আমাদের সরকার যথারীতি অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন-দরবার চলছে। এর পেছনে ভূরাজনৈতিক ব্যাপার থাকতে পারে, সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে না ঝোঁকে, সে বিষয়ে সতর্কবাণী জানানোর জন্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওই অভিযোগগুলোকে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই বক্তব্যের পেছনে কিছুটা সত্য থাকা খুবই সম্ভব; কিন্তু তাই বলে মানুষ যে নিখোঁজ হয়ে যায়, সেটা তো আর মিথ্যা নয়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তো তা জানানোর চেষ্টা করে। তারা সভা করে, সভায় কান্নাকাটির ঘটনা যে ঘটে না, এমনও নয়। কিন্তু হারানো স্বজনেরা ফেরত আসে না। দুয়েকজন যাঁরা ফেরত আসেন, তাঁরাও মুখ খোলেন না। মনে হয় ভয় পান। সাগর ও রুনি যে নিহত হয়েছেন, এটা তো কোনো বানানো গল্প নয়। সবাই জানে, ঘটনায় তদন্তের দাবি উচ্চকণ্ঠেই ও নানা মহল থেকে জানানো হয়েছে। ১০ বছর পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কই তদন্ত রিপোর্ট তো জমা পড়ল না। সময় চাওয়া হচ্ছে, সময় দেওয়াও হচ্ছে, চাওয়া-দেওয়ার এই ব্যাপারটা মনে হয় গুনে গুনে সেঞ্চুরি করার দিকেই এগোচ্ছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে পুলিশ বাহিনী একেবারেই নির্দোষ—এমনটা দাবি করা হয়, প্রদীপ কুমারেরা নেই বলেই জানানো হয়; কিন্তু ঘটনা তো ঘটে। পুলিশ জড়িত নয় তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তাদের তো দায়িত্ব আছে। দায়িত্ব প্রথমত, ওই রকমের ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা দেখা; দ্বিতীয়ত, ঘটনা ঘটলে মানুষগুলোকে উদ্ধার এবং দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া। পুলিশের কাজ তো মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়াই। তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা সবই তো জনগণের টাকাতেই সম্ভব হয়; তাহলে?
সরকারের পক্ষ থেকে এমনও বলা হয় যে গুম হয়ে যাওয়া লোকেরা ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকে। সেটা বুঝলাম, কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে আনা তো পুলিশের গোয়েন্দাদের কর্তব্য; গোয়েন্দারা যে অদক্ষ, এমন বদনাম কেউ করবে না। তাহলে? কিছুদিন আগে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি নতুন এবং বেশ চাঞ্চল্যকর সংবাদ আমাদের দিয়েছেন; সেটা এই যে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো যাদের ‘গুম’ বলছে, তাদের অনেকেই নাকি আসলে পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ তথ্য অন্যরা কতটা মেনে নেবে জানি না, না নেওয়ারই কথা। বাম গণতান্ত্রিক জোট মেনে নেয়নি। তারা বলেছে, ‘খুবই নিষ্ঠুর, অশালীন ও চরম দায়িত্বহীনতার প্রকাশ এবং গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর জন্য খুবই বেদনার ও কষ্টের।’ তাদের মতে, সেটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার শামিল। (প্রথম আলো, ০৯-০২-২২) মনে হয় না তারা বাড়িয়ে বলেছে।
ভালো খবরের জন্য উন্মুখ থাকি, কিন্তু তেমন একটা আসে না। খুচরো দু-চারটা যা আসে তা দেখে ভালো লাগে। যেমন এই খবরটা। সাতক্ষীরার এক প্রান্তিক এলাকায় বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং সেটির নির্মাণ-স্থাপত্য বিশ্বস্বীকৃতি লাভ করেছে। আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার একটি বিশ্বমানের স্বীকৃতি, হাসপাতালটির নির্মাণ-স্থাপত্য সেই পুরস্কারটি পেয়েছে। স্থপতি কাশেম মাহবুব চৌধুরীকে আমরা অভিনন্দন জানাই। দেশে মেধাবান অনেকেই আছেন, কিন্তু দুঃখের যেটা কারণ, সেটা হলো মেধা বিকাশের সুযোগ দেশে খুবই সীমিত। বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা প্রথমবারের মতো কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড সংস্থাপনে সফল হয়েছেন; অথচ বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থা এমনই নাজেহাল যে এখানকার মানুষ বিদেশে ছোটেন চিকিৎসার জন্য। পুরোনো সেই কথাটাই বারবার বলতে হয়, গোটা ব্যবস্থাটাই বিরূপ ভূমিকা নিচ্ছে। যেমন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহার ঘটনা। সন্দেহ কী যে তিনি একজন মেধাবান যুবক ছিলেন, সেনাবাহিনীর ভালো চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে প্রামাণ্য ছবি তুলছিলেন, ছোটখাটো একটি টিমও গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু পারলেন না তো, নিহত হলেন পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সদস্যের হাতে।
মেধাবী ওই যুবক কেবল যে প্রাণ হারালেন তা-ই নয়, তিনি একজন অপরাধী বলেই চিহ্নিত হয়ে যাচ্ছিলেন, পুলিশ সে মর্মেই সাফসুতরো মামলা খাড়া করে ফেলেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মরণোত্তর ‘বদমাশ’ খ্যাতি লাভের হাত থেকে যে বাঁচলেন, সেটা অলৌকিক কোনো ঘটনার দরুন নয়, একেবারেই বস্তুগত কার্যকারণে। প্রথমত, মিডিয়ায় খবরটা ব্যাপক প্রচার পেয়েছিল। তার চেয়েও বড় ব্যাপার অবসরপ্রাপ্ত হলেও মেজর সিনহা একসময়ে সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর অফিসারদের সংগঠন আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ও নিন্দা জানিয়ে ন্যায়বিচার দাবি করেছিল এবং মামলার বাদী যিনি, তিনি যে ওই সাবেক কর্মকর্তার বোন, এটাও বিচারের দাবিকে শক্তিশালী করে থাকার কথা। বিচার শেষ পর্যন্ত পাওয়া গেছে। আদালত মূল অপরাধী দুজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। রায় পেতে খুব যে বিলম্ব হয়েছে এমনও নয়। বিচার বিভাগে যে মেধার অত্যন্ত অভাব রয়েছে, এটা বোধ হয় ঠিক নয়; কিন্তু ওই একই ঘটনা, পরিবেশ অনুকূল থাকে না, মেধার পরিচর্যা ও প্রকাশ দুটোই বাধাগ্রস্ত হয়।
এটাও ভালো খবর, আদালত বলেছেন যে দণ্ডিত আসামি প্রদীপ কুমারকে যে পুলিশ বাহিনীর পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়েছে, তার দ্বারা ওই সব সম্মাননার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। আদালতের ভাষ্য: ‘কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে ধারাবাহিকভাবে মানুষ তাঁর (প্রদীপের) দ্বারা হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। [...] অতীতের রেকর্ড খারাপ হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে একাধিকবার বিপিএম, পিপিএম পদকে ভূষিত করা হয়েছে।’ রায়ে আরও বলা হয়েছে যে অভিযুক্ত ব্যক্তি ‘ডাকাত, মাদক পাচারকারী হিসেবে সাব্যস্ত করে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে ক্রসফায়ারের নাটক সাজিয়েছেন।’ শুধু তা-ই নয়, ঘটনার যাঁরা শিকার হয়েছেন তাঁদের আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশীসহ বহুজনকে আসামি করে একটি হত্যা, একটি মাদক এবং একটি অস্ত্র মামলা দায়ের করতেন।’ (আমাদের সময়, ০৮-০২-২০২২)।
সবই সত্য। মামলা করার উদ্দেশ্য থাকত একটাই, টাকা আদায় করা। এভাবে প্রদীপ কুমার বিস্তর সম্পত্তি করেছেন এবং কর্তৃপক্ষ মনে করত তিনি নাকি মাদক পাচার দমনে অত্যন্ত সফল ছিলেন। ওই এলাকাতেই কর্তব্যরত আরেকজন পুলিশ অফিসার, বাবুল আক্তার, স্ত্রী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়ে যিনি এখন জেলে আছেন, তিনিও নাকি খুব খ্যাতি অর্জন করেছিলেন অপরাধ দমনে, তাঁর ক্ষেত্রে জঙ্গিদের নির্মূল করার ব্যাপারে, যে জন্য স্ত্রী হত্যার ঘটনার পরে তাঁর দোসররা রটনা করতে পেরেছিলেন যে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার মতলবে জঙ্গিরাই তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করেছে। তারা ছাড়া আবার কারা?
প্রদীপ কুমারের কাজের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ ছিল। অনেকেই ছিলেন ভুক্তভোগী। এখন জানা যাচ্ছে যে প্রদীপের ৩৩ মাসের রাজত্বে কথিত বন্দুকযুদ্ধ হয়েছে ১০৬টি এবং তাতে নিহত হয়েছেন ১৭৪ জন। ভুক্তভোগীদের আত্মীয়স্বজনের সাহস ছিল না, সুযোগও ছিল না যে মুখ খুলবেন। শুনবে যে এমন লোকও পাচ্ছিলেন না খুঁজে। প্রদীপ এখন আটক বলে সাহসে ভর করে তাঁরা এগিয়ে এসেছেন। মুখ খুলে বলেছেন কীভাবে তাঁরা স্বজনদের হারিয়েছেন, টাকা দিয়েছেন; তবু বাঁচাতে পারেননি। অথচ প্রদীপ ছিলেন প্রশংসিত, সম্মানিত একজন অফিসার। পুলিশ বাহিনীতে ভালো মানুষ প্রচুর আছেন, যাঁরা নিষ্ঠার সঙ্গে কর্তব্য পালন করেন, কর্তব্যরত অবস্থায় প্রাণ পর্যন্ত দেন। কিন্তু তাঁরা থাকেন কোণঠাসা অবস্থায়, তাঁদের প্রভাব কতটা পড়ে জানা যায় না; যেটা জানা যায়, টেরও পাওয়াও যায় সেটা হলো, প্রদীপ কুমারদের দাপট, দেখা যায় তাঁরা সম্মাননা পদকও পেয়ে যাচ্ছেন। অন্যত্রও ওই একই অবস্থা।
আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে র্যাবের সাতজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর আমাদের সরকার যথারীতি অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেন-দরবার চলছে। এর পেছনে ভূরাজনৈতিক ব্যাপার থাকতে পারে, সরকারি মহল থেকে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবল ও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের দিকে না ঝোঁকে, সে বিষয়ে সতর্কবাণী জানানোর জন্যই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওই অভিযোগগুলোকে অতটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই বক্তব্যের পেছনে কিছুটা সত্য থাকা খুবই সম্ভব; কিন্তু তাই বলে মানুষ যে নিখোঁজ হয়ে যায়, সেটা তো আর মিথ্যা নয়। ভুক্তভোগী পরিবারগুলো তো তা জানানোর চেষ্টা করে। তারা সভা করে, সভায় কান্নাকাটির ঘটনা যে ঘটে না, এমনও নয়। কিন্তু হারানো স্বজনেরা ফেরত আসে না। দুয়েকজন যাঁরা ফেরত আসেন, তাঁরাও মুখ খোলেন না। মনে হয় ভয় পান। সাগর ও রুনি যে নিহত হয়েছেন, এটা তো কোনো বানানো গল্প নয়। সবাই জানে, ঘটনায় তদন্তের দাবি উচ্চকণ্ঠেই ও নানা মহল থেকে জানানো হয়েছে। ১০ বছর পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কই তদন্ত রিপোর্ট তো জমা পড়ল না। সময় চাওয়া হচ্ছে, সময় দেওয়াও হচ্ছে, চাওয়া-দেওয়ার এই ব্যাপারটা মনে হয় গুনে গুনে সেঞ্চুরি করার দিকেই এগোচ্ছে। গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ব্যাপারে পুলিশ বাহিনী একেবারেই নির্দোষ—এমনটা দাবি করা হয়, প্রদীপ কুমারেরা নেই বলেই জানানো হয়; কিন্তু ঘটনা তো ঘটে। পুলিশ জড়িত নয় তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তাদের তো দায়িত্ব আছে। দায়িত্ব প্রথমত, ওই রকমের ঘটনা যাতে না ঘটে সেটা দেখা; দ্বিতীয়ত, ঘটনা ঘটলে মানুষগুলোকে উদ্ধার এবং দায়ীদের শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া। পুলিশের কাজ তো মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়াই। তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধা সবই তো জনগণের টাকাতেই সম্ভব হয়; তাহলে?
সরকারের পক্ষ থেকে এমনও বলা হয় যে গুম হয়ে যাওয়া লোকেরা ইচ্ছে করে লুকিয়ে থাকে। সেটা বুঝলাম, কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে আনা তো পুলিশের গোয়েন্দাদের কর্তব্য; গোয়েন্দারা যে অদক্ষ, এমন বদনাম কেউ করবে না। তাহলে? কিছুদিন আগে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরেকটি নতুন এবং বেশ চাঞ্চল্যকর সংবাদ আমাদের দিয়েছেন; সেটা এই যে জাতিসংঘের সংস্থাগুলো যাদের ‘গুম’ বলছে, তাদের অনেকেই নাকি আসলে পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ তথ্য অন্যরা কতটা মেনে নেবে জানি না, না নেওয়ারই কথা। বাম গণতান্ত্রিক জোট মেনে নেয়নি। তারা বলেছে, ‘খুবই নিষ্ঠুর, অশালীন ও চরম দায়িত্বহীনতার প্রকাশ এবং গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের পরিবারগুলোর জন্য খুবই বেদনার ও কষ্টের।’ তাদের মতে, সেটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার শামিল। (প্রথম আলো, ০৯-০২-২২) মনে হয় না তারা বাড়িয়ে বলেছে।
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১৯ দিন আগেভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫