Ajker Patrika

একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু ও কিছু প্রশ্ন

সম্পাদকীয়
একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু ও কিছু প্রশ্ন

নওগাঁয় সুলতানা জেসমিন নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে র‍্যাবের একটি দল তাঁকে ধরে নেওয়ার পর। মৃত্যু হয়েছে ২৪ মার্চ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে  চিকিৎসাধীন অবস্থায়। একজন যুগ্ম সচিবের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নওগাঁর নওজোয়ান মাঠের সামনে থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র‍্যাব সদস্যরা তাঁকে তুলে নিয়ে যান। সুলতানা জেসমিন নওগাঁ ভূমি অফিসের কর্মচারী।

সুরতহাল প্রতিবেদনে সুলতানা জেসমিনের মাথায় ও হাতে আঘাতের চিহ্নের কথা বলা হয়েছে। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম শামীম আহম্মদ বলেছেন, ‘জেসমিনকে অচেতন অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল। তাঁর মাথার ডান পাশে একটু আঘাতের চিহ্ন ছিল। র‍্যাব বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পড়ে গিয়ে জেসমিন আঘাত পেয়েছেন।’

জেসমিনের পরিবার অভিযোগ করছে, আটকের পর নির্যাতনে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহেদ হোসেন সৈকত সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, তাঁর মা ষড়যন্ত্রের শিকার। র‍্যাবের হেফাজতে থাকা অবস্থায় নির্যাতনের কারণে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়েছে। 

অন্যদিকে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন র‍্যাব-৫-এর রাজশাহীর কোম্পানি কমান্ডার মেজর নাজমুস সাকিব।

র‍্যাব যে সুলতানা জেসমিনকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছিল, এটা অস্বীকার করা হচ্ছে না। তিনি যে মারা গেছেন, তাতেও সন্দেহ নেই। তিনি কীভাবে মারা গেলেন, সেটাই এখন পরিষ্কার হওয়ার বিষয়। তিনি যে অসুস্থ ছিলেন না তা বোঝা যায় তাঁকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ায়। একজন সুস্থ মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার পর র‍্যাবের হাতে আটক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এতটাই অসুস্থ হয়ে পড়লেন যে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিয়েও তাঁকে বাঁচানো গেল না। বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হয় বৈকি! আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে অত্যাচারে মৃত্যুর ঘটনা আগে ঘটেনি, তা-ও তো নয়। তাই ঘটনাটি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

প্রশ্ন উঠেছে, থানায় মামলা না করে একজন ব্যক্তি র‍্যাবের কাউকে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করলেই র‍্যাব তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্তকে আটক করতে পারে কি না? থানায় মামলা হয়েছে সুলতানা জেসমিনকে আটকের ২৯ ঘণ্টা পর। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, মামলা করার আগে আটক, বেআইনি জিজ্ঞাসাবাদ ও পুলিশকে না জানানো সংবিধান, মানবাধিকারের মূলনীতি, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ও বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন।

কেউ কোনো অপরাধ করলে এবং সেটা আদালতে প্রমাণ হওয়ার পরই কেবল তাকে শাস্তি দেওয়া যায়। সুলতানা জেসমিনের ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা। তিনি প্রতারণা করেছেন—এটা অভিযোগ মাত্র, আদালতে প্রমাণিত নয়।

ঘটনাটি প্রথমে একজন আইনজীবী হাইকোর্টের নজরে আনেন। পরে রিট পিটিশন করা হয়। হাইকোর্ট বলেছেন, ‘এখানে র‍্যাবের এখতিয়ার গুরুত্বপূর্ণ। র‍্যাবের জন্য আইন আছে, আইন দেখব। কেউ যেন অকারণে “ভিকটিম’’ না হন, আবার কেউ যেন ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত না হন।’ আমরাও তাই চাই। কারণ ন্যায়বিচার না হওয়ার জন্য একদিকে অপরাধ বাড়ছে, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারেরও অভিযোগ উঠছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত