Ajker Patrika

বেত: রথ দেখা কলা বেচা

সম্পাদকীয়
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ১১
বেত: রথ দেখা কলা বেচা

কেন মাইকেল মধুসূদন দত্তকে সাহায্য করতেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, তা অনেকেরই জানা। এক মাতাল বিদ্যাসাগরকে বলেছিলেন, মাইকেল তো সেই টাকা দিয়ে মদ খায়। মাতালটিও মদ খায়। তাহলে ঈশ্বরচন্দ্র কি তাকেও টাকা দেবেন? উত্তরে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, ‘টাকা দেব, তার আগে তুমি একটা “মেঘনাদবধ কাব্য” লেখো দেখি!’

বহুবিবাহ, বাল্যবিবাহসহ নানা ধরনের সামাজিক আচারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, সে কথা লেখা আছে ইতিহাসের পাতায়। এ কথাও মানুষ জানে যে তিনি ছিলেন রসিকরাজ। সে রকমই দুটো কাহিনি রইল উদাহরণ হিসেবে।

নারীশিক্ষা বিস্তারে ঈশ্বরচন্দ্র চারদিকে বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করছিলেন। এ রকম সময় ঈশ্বরচন্দ্রের অন্তরঙ্গ বন্ধু কালীকৃষ্ণ তাঁর স্ত্রীর হাতের তৈরি নানা রকম আচার পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। বিদ্যাসাগর ছিলেন ভোজনরসিক। আচারগুলো দ্রুতই খেয়ে শেষ করলেন তিনি। এরপর যখন কালীকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা হলো, বিদ্যাসাগর বললেন, ‘বন্ধু, তোমার স্ত্রীর তৈরি আচার খেয়ে যেন অমৃতের স্বাদ পেলাম।’ কালীকৃষ্ণ হাসলেন। তিনি বিদ্যাসাগরকে নিয়ে রসিকতা করে বললেন, ‘পণ্ডিত, তাহলে তুমিও মানছ বাংলার সব প্রাচীন আচার মন্দ নয়?’ বন্ধুর কথা শুনে ঈশ্বরচন্দ্রও হাসলেন।

এ কথা অনেকেই জানেন যে, ঈশ্বরচন্দ্র ছিলেন দেশের প্রথম বিদ্যালয় পরিদর্শক। এ কাজের জন্য তাঁকে বিভিন্ন স্কুলে যাতায়াত করতে হতো। শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পেটাবেন—এটা তিনি একেবারেই মেনে নিতে পারতেন না। একবার এক স্কুলে গিয়ে এক ক্লাসরুমে দেখলেন, শিক্ষকের টেবিলে একটা বেত! তিনি শিক্ষককে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই বেত দিয়ে কী কাজ হয়?’

শিক্ষক তড়িঘড়ি করে বললেন, ‘ছাত্রদের ম্যাপ দ্যাখানোর জন্যই বেত এনেছি।’বিদ্যাসাগর বললেন, ‘বুঝেছি, বুঝেছি, রথ দেখা কলা বেচা—দুই কাজই হবে। বেতটা দিয়ে ম্যাপ দেখানো যাবে আবার ছাত্রদের প্রহারও করা যাবে। ঠিক বলেছি তো?’ বিদ্যাসাগরের কথা শুনে খুবই লজ্জা পেলেন শিক্ষক। এবং ঘটনাটি তাঁকে স্পর্শ করল। সেদিন থেকেই তিনি বেত পরিত্যাগ করেছিলেন। 

সূত্র: অংশুমান চক্রবর্তী, বঙ্গমনীষীদের রঙ্গ রসিকতা, পৃষ্ঠা ১২-১৩

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত