Ajker Patrika

ভাওয়াল শালবনের হারানো চিত্র ফেরানোর চেষ্টা

মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, গাজীপুর 
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২২, ১০: ৫৩
ভাওয়াল শালবনের হারানো চিত্র ফেরানোর চেষ্টা

রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার উত্তরে গাজীপুর জেলার ভাওয়াল শালবন। দেড় দশক আগেও এ বনে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ দেখা যেত। কালের বিবর্তনে ঘনবসতিপূর্ণ জেলায় পরিণত হয়েছে গাজীপুর। একদিকে বেড়েছে শিল্পকারখানা, অন্যদিকে দূষণ। ভাওয়াল বন থেকে আশঙ্কাজনকভাবে হারিয়ে গেছে দেশীয় বিভিন্ন জাতের বৃক্ষ। হারিয়ে যাওয়া বনের সেই চিত্র ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হয়েছে বন বিভাগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, বন বিভাগ সুফল প্রকল্পের অধীনে ভাওয়াল বনে শাল-সহায়ক বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির চারা রোপণ করেছে। এসব চারা কোনো কোনোটি বেড়ে উচ্চতা হয়েছে ১৫-২০ ফুট পর্যন্ত। ন্যাড়া শালবনে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির চারা বেড়ে ওঠায় স্থানীয় বাসিন্দারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের অধীন ভাওয়াল রেঞ্জ। রেঞ্জের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছরে সুফল প্রকল্পে ভবানীপুর, বারুইপাড়া ও রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটে ৮ হেক্টর বনে এনরিচমেন্ট বাগান সৃজিত হয়েছে। দ্রুত বর্ধনশীল মিশ্র প্রজাতি দিয়ে ভবানীপুর বিটে বাগান সৃজিত হয়েছে ১০ হেক্টর। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে রেঞ্জটির বিভিন্ন বিটে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির চারা রোপণের মাধ্যমে বাগান সৃজিত হয়েছে ৫ হেক্টর বনে।

গাজীপুর সদর উপজেলার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী মো. লাভলু জানান, রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটের বনে ২-৩ ফুট উচ্চতার বিভিন্ন ধরনের দেশীয় চারা দেখা গেলেও শুকনো মৌসুমে এসব চারা আগুনে পুড়ে যেত। তবে ৩ বছর ধরে শালবনের পরিবর্তন হয়েছে। একসময়ের ন্যাড়া বনে এখন দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ বেড়ে উঠছে।

ভাওয়াল রেঞ্জের ভবানীপুর এলাকার অধিবাসী রফিক উদ্দিন বলেন, ‘শালবনে সুফল বাগান করায় গাছের ঘনত্ব বেড়েছে। এতে বনে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখা যাচ্ছে। আনাগোনা বেড়েছে বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপের। সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে ভাওয়াল বন অনেকটাই আগের রূপে ফিরে আসবে বলে আশা করি।’

ভাওয়াল রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, শিল্প-অধ্যুষিত গাজীপুরে বনায়ন যেমন চ্যালেঞ্জ, তেমনি রক্ষণাবেক্ষণ কঠিন। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে সুফল প্রকল্পের বনায়ন শতভাগ সফল করতে কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। সুফলে সৃজিত বাগানসহ বনভূমি রক্ষায় প্রতিটি বিটে টহল কার্যক্রম জোরালো করা হয়েছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তার নির্দেশে বন ও বন্য প্রাণী রক্ষায় বিশেষ টহল দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে বনে সৃষ্ট অগ্নিকাণ্ডে বনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতো। তবে চলতি বছর কঠোর নজরদারি ও রেঞ্জের অধীন অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ প্রতিটি এলাকায় প্রচার-প্রচারণা এবং উঠান বৈঠক করা হয়েছে। এতে সুফল প্রকল্পে সৃজিত বাগান বেড়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছে।

বারুইপাড়া বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম মোহাম্মদ সামসুদ্দিন বলেন, সুফল প্রকল্পের অধীন বনে চালতা, বেল, আমলকী, চিকরাশি, মহুয়া, বিলাতি গাব, ছাতিয়ান, অর্জুন, ডেউয়া, বহেড়া, চাপালিশ, হরীতকী, পলাশ, পীতরাজ, সোনালু, তেলিগর্জনসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় প্রজাতির চারাগাছ রোপণ করা হয়েছে। সুফলের বাগান রক্ষায় স্থানীয় অধিবাসীরা এগিয়ে এসেছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বাগান পরিদর্শন করে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত