Ajker Patrika

রক্তাক্ত দুলদুল

শামসুর রাহমান
রক্তাক্ত দুলদুল

ছেলেবেলায় কবি শামসুর রাহমান পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পোগজ স্কুলে। এই স্কুলে কত নামীদামি মানুষের পদচ্ছাপ পড়েছিল, সেটা জেনে তিনি খুব পুলকিত হয়েছিলেন।

মনীষীদের মধ্যে মাইকেল মধুসূদন দত্তকে ১৮৭৩ সালে এই স্কুলে নাগরিক সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল। এখানেই মাইকেল তাঁর ঢাকাবিষয়ক সনেটটি আবৃত্তি করেছিলেন, যার প্রথম চার পঙ্‌ক্তি ছিল, ‘নাহি পাই নাম তব বেদে কি পুরাণে/ কিন্তু বঙ্গ অলংকার তুমি যে তা জানি/ পূর্ববঙ্গে। শোভো তুমি এ সুন্দর স্থানে/ফুলবৃন্তে ফুল যথা রাজাসনে রানী।’
এই স্কুলে এসে ১৯০১ সালে প্রায় তিন হাজার শ্রোতার সামনে ধর্ম সম্পর্কে দুই ঘণ্টা বক্তৃতা করেছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ।

শামসুর রাহমান তখন পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে সেভাবে আলাপ-সালাপ শুরু করেননি। তবে বিষাদসিন্ধু পড়েছিলেন। স্কুলে যাওয়ার পথে বাবুবাজারে কয়েকটি ছবির দোকান ছিল। সেখানে একটি ছবি ঝুলত। দুলদুলের ছবি। হজরত ইমাম হোসাইনের ঘোড়া দুলদুল। ছবিটি কেনার খুব ইচ্ছে হয়েছিল শামসুর রাহমানের। মায়ের কাছে কথাটা জানালেই মা হয়তোবা পয়সাটা দিয়ে দিতেন। কিন্তু কবি চাইলেন নিজের পয়সা বাঁচিয়ে কিনবেন এই দুলদুল। আহা! কী অসাধারণ সে ছবি। কাচের আড়ালে তিরবিদ্ধ রঙিন দুলদুল। বড় হয়ে তিনি বুঝেছিলেন, ছবিটি ছিল নিতান্তই সহজ-সরল, তাতে শিল্পের ‘শ’টুকুও ছিল না। কিন্তু সে সময় এ ছবি মনকে রঙিন করে দিয়েছিল।

টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে কিনবেন দুলদুল। কিন্তু পয়সা তো বাঁচে না। রোজ এক পয়সা পেতেন টিফিনের জন্য। কিছু পয়সা জমলেই হঠাৎ করে পেয়ারা কিংবা বরই খাওয়ার লোভ জেগে উঠত, তাই দুলদুল কেনার জন্য চার আনা পয়সা জমাতেই পারছিলেন না। কখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেই ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। তারপর এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। চার আনা পয়সা জমিয়ে ফেললেন তিনি এবং কিনে ফেললেন রক্তাক্ত দুলদুল। শামসুর রাহমানের ছেলেবেলার প্রথম সম্পত্তি এটি। ঝুলিয়ে রেখেছিলেন ঘরের দেয়ালে।

সূত্র: শামসুর রাহমান গদ্য সংগ্রহ, পৃষ্ঠা ৩০-৩১ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত