ফারুক মেহেদী, শরিফুল ইসলাম ও জয়নাল আবেদীন খান
মূল্যস্ফীতিই চ্যালেঞ্জ
সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০২১ সালে আমরা ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড ৫০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। যদিও ক্লিয়ারিং হাউজের পেমেন্টের কারণে এটা মাঝে মাঝে কমে-বাড়ে। রপ্তানিও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যেটা ৩৪ বিলিয়নে নেমে গিয়েছিল, সেটা আবার ৩৯ বিলিয়ন পর্যন্ত উঠেছে। রেমিট্যান্স ১৮ বিলিয়ন থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠেছে। যদিও গত কয়েক মাসে কিছুটা কমেছে, তবে বছর হিসাবে বললে সেটাও আমাদের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। কৃষিও আমাদের যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে। ফসল বৈচিত্র্যকরণ, শাকসবজির উচ্চ ফলন, পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষ ব্যাপক বেড়েছে। আমাদের বনায়ন বেড়েছে ৪ শতাংশ হারে। সুতরাং মোটাদাগে অর্থনীতি কোভিড-পরবর্তী বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
এখন প্রশ্ন উঠবে আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে। আমি মনে করি, আমাদের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জটা গৌন। রাজস্ব বাড়ানোর প্রচেষ্টা ছাড়া তেমন চ্যালেঞ্জ নেই। মূলত সামনের দিনগুলোয় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। যাতায়াত খরচ বেড়েছে। কৃষি উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে, গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে সাড়ে ৩২ শতাংশ। প্রায় ১৮ শতাংশের মতো বেড়েছে চিনির দাম। ডেইরি পণ্যের দাম বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি। ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে অনেক বেশি। এসব পণ্যই আমাদের আমদানি করতে হয়। যেহেতু বিশ্ববাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে আনতে হয়েছে, তাই দেশেও দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ফলে দেশে এখন মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছে চলে গেছে। আমাদের কৃষি, সেবা, শিল্প ভালো করলেও খাদ্যপণ্যের আমদানিনির্ভরতাই মূল্যস্ফীতির ৯০ শতাংশ কারণ। মাত্র ১০ শতাংশ কারণ হতে পারে অভ্যন্তরীণ।
ঝুঁকি ঠেকানো জরুরি
আমরা এখন করোনা-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের মধ্যে আছি। বিভিন্ন সূচক থেকে যেটা বোঝা যায় তা হলো, ছয় মাস ধরে একটা উত্তরণ ঘটছে। রাজস্ব, রপ্তানি, বেসরকারি ঋণপ্রবাহ—সব কটি সূচকই ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। চ্যালেঞ্জ হলো এটা ধরে রাখা। না হলে হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা আছে। বৈশ্বিক কিছু ঝুঁকি আছে। ওমিক্রন বাড়ছে। প্রথমত, সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটা হলো ভাইরাস চলে যাবে না। চ্যালেঞ্জটা হলো এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা। এটা মেনে নিয়েই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
প্রবৃদ্ধি বাড়লেও এর সুবিধা সবাই সমানভাবে পাচ্ছেন না। করোনায় যাঁরা খাদে পড়েছেন, এঁদের কেউ উঠেছেন, কেউ উঠতে পারেননি। যাঁরা দুর্বল তাঁরা খাদে পড়েই আছেন। যেমন, গত দুই বছরে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র শিল্পগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা তাঁরা সবাই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাঁরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সে রকম সহায়তা দিতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে লক্ষ্য করে আরও সহায়তা দরকার। প্রয়োজনে আসছে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে।
এ ছাড়া ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে কিছু ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এটা বৈশ্বিক ব্যাপার। তারপরও একে সহনীয় রাখতে হবে। জ্বালানির দাম বেশি হলেও এখন আবার কমছে। মূল্যস্ফীতি বাড়তি ধারা সামনেও থাকবে।
কমাতে হবে খেলাপি
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তি নানা প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়ে থাকেন। তাঁদের একটা বড় অংশ ঋণ নিলে তা পরিশোধে গড়িমসি। ক্ষেত্রবিশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও শিথিলতা দেখায়। এতে খেলাপি আদায় কঠিন হয়ে পড়ে। সব মিলে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
সাধারণ মানুষের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যাক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বাড়তি শর্তারোপ করা যাবে না। আর কৃষি ঋণ বিরতণ করতে হবে প্রকৃত চাষিদের মধ্যে। আর যাঁদের জামানত রাখার কিছু নেই, তাঁদের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় ঋণ দিতে হবে।
কৃষির উৎপাদন বাড়বে
কৃষি পুরোপুরি নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলে কৃষির উৎপাদন ভালো হয়। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশেই আবহাওয়া খারাপ হলে উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলে আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদন ৫০ বছর ধরে ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। আর গত ১২ বছর আমাদের কৃষির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ হারে।
কাজেই আগামী বছর এই হারে কৃষির উৎপাদন বাড়বে—এটাই আমরা স্বাভাবিকভাবে ধারণা করতে পারি। খাদ্য উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অন্যান্য ক্ষেত্রেও উৎপাদন বাড়বে। কৃষকেরা এবার পাটের দাম ভালো পেয়েছেন। কাজেই সামনের বছর পাটের উৎপাদন হয়তো আরও বাড়বে। পাটের সুদিন ফিরে আসছে।
সামাজিক সুরক্ষায় মনোযোগ দরকার
করোনার কারণে অর্থনীতিতে একটা অভিঘাত হয়েছে। সেই অভিঘাতের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ এবং যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে, তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বড় ধরনের সংস্কার এনে তার আওতায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।
আরেকটা বিষয় হলো নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করা এবং সেটার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং খুব কঠোর হস্তে করা জরুরি। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙা করা প্রয়োজন। এ জন্য ব্যক্তি খাতে যে বিনিয়োগ, সেটাকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে শ্রমঘন শিল্পগুলোতে কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং বিপণনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
নীতির ধারাবাহিকতা লাগবে
বিশ্বে বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, তাতে আমার মনে হয় আবার একটা ধাক্কা আসতে পারে। যেটা ইউরোপ-আমেরিকায় এখন হচ্ছে। আমাদের দেশেও এই ঝুঁকি আছে। সরকারি প্রণোদনার কারণে এখন আমরা হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে বিষয়গুলো বলেছি।
ঋণের কিস্তি পরিশোধে আমরা বলেছি, আগের মতো করে ২৫ শতাংশ দিয়ে যে ব্যবস্থা চালু আছে সেটা অব্যাহত রাখা। আমরা আশঙ্কা করছি, যদি করোনার কারণে পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। এরই মধ্যে অর্ডার কমছে। বাস্তবচিত্রটা কী হবে সেটা হয়তো দেড়-দুই মাস পর বোঝা যাবে। আমি মনে করি, করোনাকে মেনে নিয়েই চলতে হবে।
পোশাকে চ্যালেঞ্জ ওমিক্রন
আমি যতই উৎপাদন করি, তাতে কোনো লাভ নেই। ক্রেতারা দোকানপাট চালু না করলে আমাদের রপ্তানি হবে না। আমরা শঙ্কায় আছি। তবে আশাবাদী ওরা ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যেভাবে আগেরবার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে।
আমাদের পুরো রপ্তানিনির্ভর করে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ওপর। তাদের দেশের বর্তমান অবস্থার ওপর। ফলে সেখানে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে আমাদের এখানে তার প্রভাব পড়ে। এর আগে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, এ ব্যাপারে সহায়তা করতে। সরকার তাতে সাড়া দিয়েছে। তার ফলেই আমাদের উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। নইলে ভিয়েতনাম এবং ভারতে সঙ্গে আমরা পিছিয়ে পড়তাম।
চট্টগ্রামের সমস্যা কমাতে হবে
চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের ঐতিহ্য খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জের ব্যবসায়িক জৌলুশ দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। চট্টগ্রাম অঞ্চলের উৎপাদনের জন্য শিল্প-কারখানায় গ্যাস-সংযোগ অত্যন্ত জরুরি।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে আমদানি-রপ্তানি অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসে প্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা। একইভাবে সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় সব সময় ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে তফসিলি ব্যাংকের কিছু প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হলে ভালো হয়।
মূল্যস্ফীতিই চ্যালেঞ্জ
সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ২০২১ সালে আমরা ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ রেকর্ড ৫০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠেছিল। যদিও ক্লিয়ারিং হাউজের পেমেন্টের কারণে এটা মাঝে মাঝে কমে-বাড়ে। রপ্তানিও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। যেটা ৩৪ বিলিয়নে নেমে গিয়েছিল, সেটা আবার ৩৯ বিলিয়ন পর্যন্ত উঠেছে। রেমিট্যান্স ১৮ বিলিয়ন থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠেছে। যদিও গত কয়েক মাসে কিছুটা কমেছে, তবে বছর হিসাবে বললে সেটাও আমাদের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। কৃষিও আমাদের যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে। ফসল বৈচিত্র্যকরণ, শাকসবজির উচ্চ ফলন, পোল্ট্রি ও মৎস্য চাষ ব্যাপক বেড়েছে। আমাদের বনায়ন বেড়েছে ৪ শতাংশ হারে। সুতরাং মোটাদাগে অর্থনীতি কোভিড-পরবর্তী বেশ ভালোভাবেই ঘুরে দাঁড়িয়েছি।
এখন প্রশ্ন উঠবে আগামী দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে। আমি মনে করি, আমাদের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জটা গৌন। রাজস্ব বাড়ানোর প্রচেষ্টা ছাড়া তেমন চ্যালেঞ্জ নেই। মূলত সামনের দিনগুলোয় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। যাতায়াত খরচ বেড়েছে। কৃষি উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে, গত এক বছরে বিশ্বব্যাপী খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে সাড়ে ৩২ শতাংশ। প্রায় ১৮ শতাংশের মতো বেড়েছে চিনির দাম। ডেইরি পণ্যের দাম বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশের বেশি। ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে অনেক বেশি। এসব পণ্যই আমাদের আমদানি করতে হয়। যেহেতু বিশ্ববাজার থেকে বেশি দাম দিয়ে কিনে আনতে হয়েছে, তাই দেশেও দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। ফলে দেশে এখন মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছে চলে গেছে। আমাদের কৃষি, সেবা, শিল্প ভালো করলেও খাদ্যপণ্যের আমদানিনির্ভরতাই মূল্যস্ফীতির ৯০ শতাংশ কারণ। মাত্র ১০ শতাংশ কারণ হতে পারে অভ্যন্তরীণ।
ঝুঁকি ঠেকানো জরুরি
আমরা এখন করোনা-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের মধ্যে আছি। বিভিন্ন সূচক থেকে যেটা বোঝা যায় তা হলো, ছয় মাস ধরে একটা উত্তরণ ঘটছে। রাজস্ব, রপ্তানি, বেসরকারি ঋণপ্রবাহ—সব কটি সূচকই ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে। চ্যালেঞ্জ হলো এটা ধরে রাখা। না হলে হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা আছে। বৈশ্বিক কিছু ঝুঁকি আছে। ওমিক্রন বাড়ছে। প্রথমত, সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটা হলো ভাইরাস চলে যাবে না। চ্যালেঞ্জটা হলো এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা। এটা মেনে নিয়েই অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা করতে হবে।
প্রবৃদ্ধি বাড়লেও এর সুবিধা সবাই সমানভাবে পাচ্ছেন না। করোনায় যাঁরা খাদে পড়েছেন, এঁদের কেউ উঠেছেন, কেউ উঠতে পারেননি। যাঁরা দুর্বল তাঁরা খাদে পড়েই আছেন। যেমন, গত দুই বছরে ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র শিল্পগুলোর যে ক্ষতি হয়েছে, সেটা তাঁরা সবাই কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তাঁরা যাতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, সে রকম সহায়তা দিতে হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিকে লক্ষ্য করে আরও সহায়তা দরকার। প্রয়োজনে আসছে বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো যেতে পারে।
এ ছাড়া ব্যষ্টিক অর্থনীতিতে কিছু ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এটা বৈশ্বিক ব্যাপার। তারপরও একে সহনীয় রাখতে হবে। জ্বালানির দাম বেশি হলেও এখন আবার কমছে। মূল্যস্ফীতি বাড়তি ধারা সামনেও থাকবে।
কমাতে হবে খেলাপি
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। কিন্তু ব্যাংকগুলোয় খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। কতিপয় ব্যক্তি নানা প্রভাব খাটিয়ে ঋণ নিয়ে থাকেন। তাঁদের একটা বড় অংশ ঋণ নিলে তা পরিশোধে গড়িমসি। ক্ষেত্রবিশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও শিথিলতা দেখায়। এতে খেলাপি আদায় কঠিন হয়ে পড়ে। সব মিলে খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।
সাধারণ মানুষের মধ্যে সহজ শর্তে ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি উদ্যাক্তাদের মধ্যে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে বাড়তি শর্তারোপ করা যাবে না। আর কৃষি ঋণ বিরতণ করতে হবে প্রকৃত চাষিদের মধ্যে। আর যাঁদের জামানত রাখার কিছু নেই, তাঁদের ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের আওতায় ঋণ দিতে হবে।
কৃষির উৎপাদন বাড়বে
কৃষি পুরোপুরি নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলে কৃষির উৎপাদন ভালো হয়। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর সব দেশেই আবহাওয়া খারাপ হলে উৎপাদন বিঘ্নিত হয়। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে, তাহলে আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদন ৫০ বছর ধরে ৩ শতাংশ হারে বেড়েছে। আর গত ১২ বছর আমাদের কৃষির উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৪ শতাংশ হারে।
কাজেই আগামী বছর এই হারে কৃষির উৎপাদন বাড়বে—এটাই আমরা স্বাভাবিকভাবে ধারণা করতে পারি। খাদ্য উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের অন্যান্য ক্ষেত্রেও উৎপাদন বাড়বে। কৃষকেরা এবার পাটের দাম ভালো পেয়েছেন। কাজেই সামনের বছর পাটের উৎপাদন হয়তো আরও বাড়বে। পাটের সুদিন ফিরে আসছে।
সামাজিক সুরক্ষায় মনোযোগ দরকার
করোনার কারণে অর্থনীতিতে একটা অভিঘাত হয়েছে। সেই অভিঘাতের ফলে নিম্ন আয়ের মানুষ এবং যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছে, তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির বড় ধরনের সংস্কার এনে তার আওতায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। মাথাপিছু বরাদ্দ বাড়ানো জরুরি।
আরেকটা বিষয় হলো নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করা এবং সেটার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি নিতে পারে। এ ক্ষেত্রে বাজার মনিটরিং খুব কঠোর হস্তে করা জরুরি। এ ছাড়া কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙা করা প্রয়োজন। এ জন্য ব্যক্তি খাতে যে বিনিয়োগ, সেটাকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে শ্রমঘন শিল্পগুলোতে কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং বিপণনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
নীতির ধারাবাহিকতা লাগবে
বিশ্বে বর্তমান যে প্রেক্ষাপট, তাতে আমার মনে হয় আবার একটা ধাক্কা আসতে পারে। যেটা ইউরোপ-আমেরিকায় এখন হচ্ছে। আমাদের দেশেও এই ঝুঁকি আছে। সরকারি প্রণোদনার কারণে এখন আমরা হয়তো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করে বিষয়গুলো বলেছি।
ঋণের কিস্তি পরিশোধে আমরা বলেছি, আগের মতো করে ২৫ শতাংশ দিয়ে যে ব্যবস্থা চালু আছে সেটা অব্যাহত রাখা। আমরা আশঙ্কা করছি, যদি করোনার কারণে পরিস্থিতি খারাপ হয়, তাহলে পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হবে। এরই মধ্যে অর্ডার কমছে। বাস্তবচিত্রটা কী হবে সেটা হয়তো দেড়-দুই মাস পর বোঝা যাবে। আমি মনে করি, করোনাকে মেনে নিয়েই চলতে হবে।
পোশাকে চ্যালেঞ্জ ওমিক্রন
আমি যতই উৎপাদন করি, তাতে কোনো লাভ নেই। ক্রেতারা দোকানপাট চালু না করলে আমাদের রপ্তানি হবে না। আমরা শঙ্কায় আছি। তবে আশাবাদী ওরা ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, যেভাবে আগেরবার করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে।
আমাদের পুরো রপ্তানিনির্ভর করে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ওপর। তাদের দেশের বর্তমান অবস্থার ওপর। ফলে সেখানে কোনো সংকট সৃষ্টি হলে আমাদের এখানে তার প্রভাব পড়ে। এর আগে করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলাম, এ ব্যাপারে সহায়তা করতে। সরকার তাতে সাড়া দিয়েছে। তার ফলেই আমাদের উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। নইলে ভিয়েতনাম এবং ভারতে সঙ্গে আমরা পিছিয়ে পড়তাম।
চট্টগ্রামের সমস্যা কমাতে হবে
চট্টগ্রাম শহরে জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যের ঐতিহ্য খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জের ব্যবসায়িক জৌলুশ দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা দরকার। চট্টগ্রাম অঞ্চলের উৎপাদনের জন্য শিল্প-কারখানায় গ্যাস-সংযোগ অত্যন্ত জরুরি।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে আমদানি-রপ্তানি অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম আঞ্চলিক অফিসে প্রয়োজনীয় সমস্যার সমাধান করতে উদ্যোগ গ্রহণ করা। একইভাবে সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় সব সময় ব্যবসায়ীদের ঢাকায় যেতে হয়। এ ক্ষেত্রে তফসিলি ব্যাংকের কিছু প্রধান কার্যালয় চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হলে ভালো হয়।
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৭ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৭ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৭ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫