Ajker Patrika

মা এবং লোভ

সম্পাদকীয়
মা এবং লোভ

মহিউদ্দিন একটি জঘন্য অন্যায় করেছেন। তিনি তাঁর মা মরিয়ম বেগমকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা উসমান গনির স্ত্রী তিনি। স্বামী মারাযাওয়ার পর থেকে অভাবে দিন কাটাচ্ছেন। মেয়ে জহুরাকে নিয়ে থাকছেন ধানকোড়া ইউনিয়নের গোয়ারিয়া গ্রামের বীর নিবাসে। কিন্তু তাঁর ছেলে মহিউদ্দিন মাকে প্রায়ই মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকার জন্য চাপ দেন।

পরিকল্পনা করেন বীর নিবাস দখলেরও। মরিয়ম ছেলের অন্যায় আবদার মেনে নেননি। সেই ক্ষোভেই মাকে পিটিয়ে বীর নিবাস থেকে বের করে দেন। বোন বাধা দিতে গেলে তাঁর সঙ্গেও করা হয় একই আচরণ।

এ ঘটনা ছিল গত শুক্রবারের। কিছুদিন আগেও একই কাণ্ড করেছিলেন মহিউদ্দিন। মাকে পিটিয়ে বীর নিবাস থেকে বের করে দিলেও স্থানীয় মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় ঘরে ফিরতে পেরেছিলেন তিনি।

তবে শুক্রবারের ওই কাণ্ডের পর মরিয়ম আর চুপ থাকতে পারেননি। সেদিনই সাটুরিয়া থানায় তিনি লিখিত অভিযোগ দিলে পরে পুলিশ তাঁকে আবার ঘরে তুলে দেয়। এদিকে মহিউদ্দিন নিখোঁজ রয়েছেন।

পৃথিবীতে সবচেয়ে আপন কে—সেই প্রশ্নের উত্তরে দ্বিধাহীনভাবেই মায়ের কথা বলবেন বেশিসংখ্যক মানুষ। নিঃস্বার্থভাবে মা-ই যে নিজ সন্তানকে ভালোবাসতে পারেন, এ ব্যাপারেও কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর ব্যতিক্রম যে হয় না, তা-ও নয়। মানুষের ঘুমন্ত লোভ, হিংসা, স্বার্থপরতা যখন জেগে ওঠে, তখন যে কেউই যে কাউকে আঘাত করতে পারে। মহিউদ্দিন সে ধরনের মানুষ।

মহিউদ্দিন যে অন্যায় করেছেন, তা তো এক অর্থে মাকে অগ্রাহ্য করা, মাকে হত্যা করারই শামিল; অর্থাৎ তাঁর জীবনে মা বলে কেউ নেই। আছেন কেবল বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতার অধিকারী এক নারী!

তাঁর মতো এমন অনেক মহিউদ্দিন আছেন, যাঁদের লোভের কারণে অসংখ্য সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে কোনো মানবিক বোধ কাজ করে না। মনুষ্যত্ব তাঁদের অভিধানে নেই। যার ফলে যেকোনো অঘটন তাঁরা ঘটিয়ে ফেলেন অনায়াসে। কিন্তু সেটা যে আসলে অন্যায় বা অপরাধ, সেই শিক্ষাটা হয়তো তাঁরা পাননি অথবা পেয়েও ভুলে গেছেন।

মহিউদ্দিনেরা আশপাশের পরিবেশ থেকে যখন শেখেন যে পুরুষ তার বল দিয়ে নারীকে দমিয়ে রাখতে পারে, তখনই মা-বোনদের শারীরিক নির্যাতন করতে দ্বিধা করেন না। আর এর পেছনে কাজ করে তাঁদের লোভ—ক্ষমতার, অর্থের।

এসব মানুষের কী শাস্তি হওয়া উচিত, সেই বিতর্ক আমরা না করি; বরং গোড়া থেকে কীভাবে সমস্যাকে তুলে ফেলা যায়, সেই আলোচনা করা ভালো। একেবারে শিশু বয়স থেকে যখন মা-বাবা তাঁদের সন্তানকে সঠিক শিক্ষা দেবেন, তখন আর ওই শিশু বড় হয়ে বিপথে যাবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। সেই শিক্ষাটা হতে হবে আদর্শের। যাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা, তিনি কেন এ রকম বিবেকহীন নিষ্ঠুর হবেন? বড়দের শ্রদ্ধা করা, ছোটদের স্নেহ করার শিক্ষার পাশাপাশি নারীকে কেন তিনি সম্মান করবেন না? লোভ যখন মাকেও নির্যাতনের শিকার করে তোলে, তখন বুঝতেই হয়, সম্পর্কের ক্ষেত্রে ছেলের দিক থেকে মানবিকতার লেশমাত্র নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত