Ajker Patrika

বিধি ভেঙে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছড়াছড়ি

জিয়াউল হক, যশোর
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২১, ১১: ৫১
বিধি ভেঙে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ছড়াছড়ি

বিধিনিষেধ অমান্য করে যশোর সদর হাসপাতাল ঘিরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয়কেন্দ্র (ডায়াগনস্টিক সেন্টার)।

সরকারি হাসপাতালের ন্যূনতম ৫০০ গজের মধ্যে কোনো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপন করা যাবে না– এমন বিধিনিষেধ থাকলেও তা অমান্য করেছেন মালিকেরা। এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার নামে যথেচ্ছ ফি আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে রোগী ও স্বজনদের।

পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স না থাকাসহ নানা অপরাধে বিভিন্ন সময়ে এসব স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আসছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু হাসপাতাল স্থাপনে বিধান লঙ্ঘনের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর সদর হাসপাতালের তিনটি প্রবেশ মুখ। এর যেকোনো একটি দিয়ে বের হয়ে রাস্তা পার হলেই মিলবে এক ডজনেরও বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র (ডায়াগনস্টিক সেন্টার)। একটু এদিক-ওদিকে গেলেই মিলবে আরও প্রায় এক ডজন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোর শহরে অবস্থিত ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ঘিরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে গড়ে উঠেছে অন্তত ২৮টি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। বিধি ভেঙে স্বাস্থ্যসেবার নামে চলছে ব্যবসা।

হাসপাতালের ফটকের সামনেই রয়েছে অন্তত ১৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। এগুলোর দূরত্ব মাত্র ১৪-১৫ গজ। আর ২০০-৩০০ গজের মধ্যে রয়েছে আরও অন্তত ১৩টি। এগুলো হলো অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল, স্ক্যান, ইউনিক, দেশ, কিংস, বন্ধন, কমটেক, পিয়ারলেস, লাইফ কেয়ার, প্রাইম, একতা, বন্ধন, পপুলার, ল্যাব জোন ও যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এছাড়া ২-৩ শ গজের মধ্যে স্থাপিত দড়াটানা, ইবনেসিনা, গ্রিনহার্ট, সানরাইজ, ন্যাশনাল, সিটি, পদ্মা, সেন্ট্রাল, ডিজিটাল, জনতা, উত্তরাসহ অনেক ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার।

অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক অসীম মণ্ডল বলেন, ‘আমি তো আইন-কানুন জানি না। আইন দিয়ে আমি কি করব? যদি আইনে এটি না থাকে তাহলে সরকার লাইসেন্স কেন দিয়েছে? তাঁরা নির্দেশনা না দিলে তো আমরা আর হাসপাতাল স্থাপন করে পারি না।’

একতা হাসপাতালের ব্যবস্থাপক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘শুধু আমাদেরটা দেখছেন কেন? এখানে তো আরও অনেক হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে। তাঁরা যেভাবে হাসপাতাল স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, আমরাও সেভাবে করেছি। যদি সরকারের অনুমতি না থাকত তাহলে এত দিন তো হাসপাতাল চালাতে পারতাম না। এত দিন হয়ে গেল সিভিল সার্জনও তো আমাদের কিছু বলেননি কখনো।’

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্থাপনে শুধু ৫ শ গজের মধ্যের বিষয় নয়। অনেক কোনো নিয়মকানুনই মানেন না।’

ডা. শেখ আবু শাহীনের বলেন, ‘বিএসআর (বাংলাদেশ সার্ভিস রুলস) বইয়ে বিধান উল্লেখ রয়েছে, সরকারি হাসপাতালের ৫০০ গজের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপন করা যাবে না। সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) কার্যালয়ের নির্ধারিত ফরম পূরণ করে মতামত দেওয়া হয়। ডিজি অফিস যাচাই-বাছাই করে ছাড়পত্র দেয়। এটা আমাদের কাজ না। আমাদের কাজ তদারকি করা।’

সিভিল সার্জন বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালের গা ঘেঁষে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্থাপনের কঠোর নিষেধাজ্ঞা থাকা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত