Ajker Patrika

কৃষিজমি কেটে সড়ক উন্নয়ন

অরূপ রায়, সাভার
আপডেট : ১৬ মার্চ ২০২২, ১৬: ৫০
কৃষিজমি কেটে সড়ক উন্নয়ন

ঢাকার সাভারে একটি সড়কের উন্নয়নকাজে কৃষকদের চাষের জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে ভুক্তভোগী কৃষকেরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও মাটি কাটা বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সাভার উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাভারের নয়ারহাট থেকে বেদেপাড়া পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কের উন্নয়নকাজ চলছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় একাধিক সেতু নির্মাণের পাশাপাশি সড়কটি প্রশস্ত ও উঁচু করা হচ্ছে। এ কাজের জন্য মাটির প্রয়োজন হলে কোনো ব্যক্তির জমি থেকে জোর করে তা সংগ্রহ করা যাবে না। ঠিকাদারকে বৈধ উপায়ে মাটি সংগ্রহ করতে হবে।

গত সোমবার প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সিন্দুরিয়া পুলিশ চৌকি থেকে ঘোড়াদিয়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় সড়কের দুই পাশের কৃষকদের চাষের জমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে তা সড়কে ফেলা হচ্ছে। কৃষকেরা বাধা দেওয়ার পরেও এক্সকাভেটরের চালক জোর করে মাটি কেটে সড়কে ফেলেন।

সাভার ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মাসুম মোল্লাহ বলেন, যেসব কৃষকের জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে তাঁদের বেশির ভাগই সংখ্যালঘু পরিবারের। তাঁদের অনেকে সাহস করে বাধা দিলেও তা উপেক্ষা করেই এক্সকাভেটরের চালক মাটি কেটে সড়কে ফেলেন। অনেকে আবার ভয়ে বাধাই দেননি। অনেকের জমি থেকে রাতের অন্ধকারেও মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে।

মাসুম মোল্লাহ বলেন, ১ মার্চ উপজেলা প্রকৌশলী ও নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে তিনি ভুক্তভোগীদের হয়ে লিখিত আবেদন করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। কিন্তু এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সাভারের দিয়াবাড়ী গ্রামের কৃষক ডিগেন্দ্র সরকার বলেন, নয়ারহাট-সাভার সড়কের উভয় পাশের অধিকাংশ জমির মালিক তাঁদের গ্রামের কৃষকেরা।

সড়কের দুই পাশে তাঁর প্রায় এক একর জমি রয়েছে। তাঁর অজান্তে সেখান থেকে প্রায় আট শতাংশ জমিতে গভীর খাদ করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। যে জমির প্রতি শতাংশের মূল্য প্রায় ৩ লাখ টাকা। এতে তাঁর অন্তত ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

একই এলাকার সুরেশ সরকার বলেন, মাটি কাটার ফলে তাঁদের ৫ থেকে ১০ শতাংশ জমিতে ৮ থেকে ১০ ফুট করে খাদের সৃষ্টি হয়েছে, যা আর চাষের উপযোগী করা সম্ভব নয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কৃষক বলেন, মাটি কাটার খবর পেয়ে তিনি তাঁর জমিতে গিয়ে বাধা দেন। কিন্তু সরকারি কাজে বাধা দিলে পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় তিনি ভয়ে বাড়ি চলে যান।

কারা হুমকি দিয়েছেন জানতে চাইলে ওই কৃষক বলেন, এক্সকাভেটরের কাছে কয়েকজন যুবক ছিলেন। তাঁরাই তাঁকে হুমকি দিয়েছেন। তবে তাঁদের তিনি চেনেন না।

সাভার ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকাশ্যে বাধা না দিয়ে কোনো এক ভুক্তভোগী পদস্থ এক কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। ওই কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা পর্যায়ের এক কর্মকর্তার নির্দেশে সরেজমিনে কৃষকের জমি থেকে জোর করে মাটি কেটে নেওয়ার সত্যতা পান তিনি।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বা ঠিকাদারের কোনো প্রতিনিধিকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলা প্রকৌশলী সালেহ হাসান প্রামাণিক বলেন, প্রকল্পের কাজের জন্য চুক্তি অনুযায়ী ঠিকাদার টাকার বিনিময়ে মাটি সংগ্রহ করে সড়কে ফেলবেন। সড়কের উভয় পাশের কৃষকের জমি থেকে অনুমতি ছাড়া মাটি কাটার কথা নয়। তবে কেউ টাকার বিনিময়ে মাটি বিক্রি করলে মাটি কাটতে পারবেন। 
সালেহ হাসান প্রামাণিক আরও বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিৎকার শুনে ছুটে আসা স্থানীয়রা ধর্ষণের শিকার নারীকেই মারধর করে

বিমানবন্দরের প্রকল্পে ‘অসম’ চুক্তি, স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়েছেন ঢাকায় ইউএই রাষ্ট্রদূত

মন্ত্রীর আত্মীয়তাই ‘যোগ্যতা’

আদানিকে আরও ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার দিল বাংলাদেশ, মোট পরিশোধ ১.৫ বিলিয়ন

অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে দুই বন্ধুর ধর্ষণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত