Ajker Patrika

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১০: ১৪
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো না

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ভালো না। তাঁর কিডনি ও লিভারের সমস্যা হচ্ছে। ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সরকার চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি না দেওয়ায় তাঁর পরিবারের সদস্য ও দলের নেতা-কর্মীরা হতাশ। তিনি ১৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন।

গতকাল বুধবার এভারকেয়ার হাসপাতালে খালেদা জিয়ার খোঁজখবর নিতে যান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সেখানে তিনি চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে সাংবাদিকদের জানান, চিকিৎসকেরা বলছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা ভালো না। খালেদা জিয়ার যে রকম চিকিৎসা দরকার, এখানে সে রকম সুযোগ নেই। তিনি খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠাতে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। মান্না বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সুস্থ করতে চিকিৎসকেরা সার্বক্ষণিক চেষ্টা করছেন। রোগীর উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়েছে। আর সরকার বলছে, তারা মানবিক। কিন্তু এই কি মানবিকের নমুনা? একজন সাধারণ নাগরিকও বিশ্বাস করবে না যে, এ রকম গুরুত্বপূর্ণ রোগীকে এভাবে চিকিৎসা করতে হচ্ছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মেডিকেল বোর্ডের এক চিকিৎসক আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুরু থেকেই বোর্ড বলে আসছে, তাঁর (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। কিন্তু অনুমতি না পেলে, দেশের বাইরে নিতে না পারলে তো কিছু করার নেই।

গত মঙ্গলবার বিএনপির সাংসদ রুমিন ফারহানা সংসদে বলেন, ‘মেডিকেল বোর্ডের মতে তাঁর শারীরিক সমস্যা অত্যন্ত গভীরে। তাঁর কিডনি, লিভারসহ প্রতিটি অর্গানেই সমস্যা অত্যন্ত প্রকট। তাঁর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। তাঁর হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখা যাচ্ছে না। কিডনি ক্রিয়েটিনিনের বর্ডার লাইন ক্রস করেছে। তিনি ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত। লিভার সমস্যাতেও তিনি ভুগছেন। ক্যানসারের আশঙ্কা থাকায় বায়োপসি পরীক্ষা করা হয়েছিল। এখন তাঁর ক্যানসার মার্কার উত্তরোত্তর বাড়ছে, যা তাঁর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।’

হাসপাতালে নেওয়ার আগেই ১১ নভেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দেশের বাইরে নিতে সরকারের অনুমতির জন্য আবেদন করে তাঁর পরিবার। কিন্তু আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়ে দিয়েছেন, দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি চাইতে হলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে গিয়ে আবেদন করতে হবে। গতকাল গণভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা করতে দেওয়া হচ্ছে, এই তো বেশি। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যমে তাঁকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি।’

এর আগে ১২ অক্টোবর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। ২৬ দিন চিকিৎসা নিয়ে ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন তিনি। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে মাত্র ছয় দিনের মাথায় তাঁকে আবার হাসপাতালে নিতে হয়। এখনো সেখানেই চিকিৎসা চলছে।

এদিকে খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে জামিন দিয়ে বিদেশে সর্বাধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ (বিএসপিপি)। পরিষদের আহ্বায়ক শওকত মাহমুদ ও সদস্যসচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেন এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। পরিবারের পক্ষ থেকে দেশের বাইরে পাঠানোর আবেদন জানানো সত্ত্বেও সরকার আজ পর্যন্ত মানবিক আচরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সরকার কোনো কিছুই কর্ণপাত করছে না। খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা এ দেশের জনগণ মেনে নেবে না।

খালেদার জন্য জামায়াতের চাওয়া

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের আমির শফিকুর রহমান এ আহ্বান জানান। বিবৃতিতে খালেদা জিয়ার দ্রুত সুস্থতাও কামনা করেন তিনি।

বিবৃতিতে জামায়াতের আমির বলেন, ‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত জটিল রোগে আক্রান্ত ও বয়সের ভারে ন্যুব্জ। এই পরিস্থিতিতে যথাযথ চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া উচিত। এটাই জনগণের সেন্টিমেন্ট। আশা করি জনগণের সেন্টিমেন্টকে বিবেচনায় নিয়ে তাঁকে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত