Ajker Patrika

বাতিল হচ্ছে পিপিপির প্রথম আবাসন প্রকল্প

বাতিল হচ্ছে পিপিপির প্রথম আবাসন প্রকল্প

রাজধানীর মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) জমিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আবাসন প্রকল্পটি বাতিল হচ্ছে। ৩০৩ কাঠা জমির ওপর এই প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি হয়েছিল বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের সঙ্গে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই জমিতে খেলার মাঠ ও শিশুপার্ক নির্মাণের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনকে (ডিএনসিসি) নির্দেশনা দেওয়ার পর শুরু হয় আবাসন প্রকল্প বাতিলের কার্যক্রম। ১৬ এপ্রিল প্রকল্পটি বাতিলের প্রস্তাব দেন জাগৃকের চেয়ারম্যান মো. মুনিম হাসান। এখন অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ও পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ বিধি অনুযায়ী তা বাতিল করবে।

জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী মো. শরীফ আহমেদ গত বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মাঠ নির্মাণের যে নির্দেশনা দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি। প্রকল্প বাতিল করে বিধি অনুযায়ী যা করা দরকার, তা-ই করব।’

দেশের ইতিহাসে সরকারি জমিতে প্রথম এই পিপিপি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নে করা চুক্তি অসম বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে গত ১৬ মার্চ আজকের পত্রিকার প্রথম পাতায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী ২ লাখ বর্গফুট বাণিজ্যিক স্পেসের মধ্যে বেসরকারি ডেভেলপার কোম্পানি পাবে ১ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুট; আর জমির মালিক সরকারি প্রতিষ্ঠান পাবে মাত্র ২০ হাজার বর্গফুট। অর্থাৎ ৯০ শতাংশের বিপরীতে ১০ শতাংশ। আবাসিক বা ফ্ল্যাটের ১৩ লাখ ২০ হাজার বর্গফুটের মধ্যে ডেভেলপার কোম্পানি পাবে ৮ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৭ বর্গফুট; আর সরকারি সংস্থা পাবে ৪ লাখ ৩৯ হাজার ১৩৩ বর্গফুট। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এমন অসম চুক্তির কারণে এই প্রকল্পে সরকারের সোয়া ৩০০ কোটি টাকা লোকসান হতে পারে।

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই আবাসন প্রকল্পের ১৫ বিঘা জমিতে একটি পার্ক নির্মাণের ঘোষণা দেন। এর পর ডিএনসিসিকে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এর ধারাবাহিকতায় ওই জমির প্রকল্প বাতিল করতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবকে চিঠি দেন জাগৃকের চেয়ারম্যান মো. মুনিম হাসান। চিঠিতে বলা হয়, মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনের বাউনিয়া মৌজার ৫ দশমিক ১৩ একর (৩০৩ কাঠা) জমির ওপর ‘মিরপুর ৯ নম্বর সেকশনে স্যাটেলাইট সিটি নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে ৫ দশমিক ১৩ একর জমি তাদের কাছে হস্তান্তর করে জাগৃক। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বর্ণিত জায়গায় শিশুপার্ক ও খেলার মাঠ নির্মাণের লক্ষ্যে ডিএনসিসিকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া প্রয়োজন। এ জন্য ট্রপিক্যাল হোমস লিমিটেডের সঙ্গে পিপিপি চুক্তি বাতিল এবং অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির মাধ্যমে এই পিপিপি প্রকল্প বাতিল করা যেতে পারে।

মাস্টারপ্ল্যান ও নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বালুর মাঠ নামে পরিচিত ওই ৫ দশমিক ১৩ একর জমিসহ বিভিন্ন সিএস দাগে মোট ১৬৮ একর জায়গা এলএ কেস নম্বর-১৩/৫৯-৬০, ৯০/৬৫-৬৬ এবং ৫/৭২-৭৩ মূলে পরিকল্পিত আবাসন গড়ার লক্ষ্যে অধিগ্রহণ করা হয়। তৎকালীন গৃহসংস্থান অধিদপ্তর বর্তমানে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি হুকুম দখল শাখা জমি হস্তান্তর করে।

এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকা শহরে আমাদের মাঠ বা পার্ক এমনি কম। আমরা কালশীতে যে জায়গাটি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পেয়েছি; সেটি বৃহত্তর একটি জনগোষ্ঠীর জন্য আশীর্বাদ। পার্কের জন্য এত বড় জায়গা আর উত্তর সিটি পায়নি। এখানে শিশুদের জন্য মাঠ ও পার্ক নির্মাণ করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত