Ajker Patrika

চেয়ারম্যান না সন্ত্রাসী?

সম্পাদকীয়
চেয়ারম্যান না সন্ত্রাসী?

একটি ইউনিয়নবাসীকে দীর্ঘ দিন থেকে শাসন করছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে তাঁর সন্ত্রাসী বাহিনী। হতবাক করার মতো ব্যাপার। সাংবাদিক গোলাম রব্বানি নাদিমকে হত্যার পরই দেশের মানুষ জানতে পারল সেই চেয়ারম্যানের বিগত দিনের অত্যাচারের সংবাদ। জামালপুরের বকশীগঞ্জের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর নিজস্ব আদালত ও ক্যাডার বাহিনী আছে। তিনি জনপ্রতিনিধি হয়েছেন বলে ক্ষমতার দাপটে এলাকার যেকোনো ধরনের অভিযোগ থানায় না পাঠিয়ে নিজের আদালতেই বিচার করতেন। তাঁর বিচারব্যবস্থার ভয়ে মানুষ বাধ্য হয় গ্রাম ছাড়তে।

চেয়ারম্যান বাবু দ্বিতীয় স্ত্রীকে অস্বীকার করে আসছিলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পরেই ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর নেতৃত্বে সাংবাদিক নাদিককে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। কীভাবে একজন জনপ্রতিনিধি এ রকমভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে পারেন? এর আগে কেন কেউ তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পেল না? অবশ্য সাধারণ মানুষের সন্ত্রাসীকে ভয় পাওয়ারই কথা। একটা এলাকার মানুষ যখন মনে করে, সন্ত্রাসী ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে তারা কোনো কিছুই করতে পারবে না, তখন একধরনের ভীতি তাদের মধ্যে সঞ্চারিত হয়। কিন্তু ইউনিয়নটি যে একজন জনপ্রতিনিধির কারণেই সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল এবং সেই দমবন্ধ পরিবেশেই ইউনিয়নবাসী বসবাস করতে বাধ্য হয়েছে, সে কথা কি অস্বীকার করা যাবে?

সাংবাদিক হত্যার পর থেকেই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ইউপি সদস্য থেকে সাধারণ মানুষ তাঁর অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন। আসলে এত দিনের দমবন্ধ অবস্থা থেকে এলাকাবাসী নিস্তার পেতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। একসময় বেপরোয়া বাবুর বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারতেন না। প্রতিবাদ করলেই তিনি মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেন। ৩০-৩৫ জনের সদস্য নিয়ে তাঁর দুটি ক্যাডার বাহিনী আছে। মূলত তাঁর অনুগত কয়েকজন ইউপি সদস্য দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চালাতেন। তাঁর বিরুদ্ধে বড় অভিযোগ, দুস্থ-গরিব মানুষের জন্য বরাদ্দ ১০ কেজি চালের ৪ কেজি আত্মসাৎ করতেন। দুস্থ মানুষের হক মেরে খেতেন তিনি। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার কারণে একজন নির্বাচিত নারী সদস্যকে পরিষদ থেকে বের করে দিয়েছেন চেয়ারম্যান বাবু।

এখন পর্যন্ত বাবুসহ ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা চাই শুধু গ্রেপ্তারে যেন ঘটনা শেষ হয়ে না যায়। সরকারি দলের টিকিটে তিনি দুইবার চেয়ারম্যান হয়েছেন। তাঁর এই বেপরোয়া ক্ষমতার কারণ খুঁজতে হলে খুঁজে দেখতে হবে এর পেছনে সরকারি দলের বড় কোনো নেতা এবং কোনো পেশিশক্তির প্রশ্রয় আছে কি না। রাষ্ট্রের আইনকানুন, বিচারব্যবস্থা ও প্রশাসন থাকার পরেও একজন ব্যক্তির নিজস্ব আদালত থাকতে পারে না। এখানে প্রশাসন ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। এই ব্যক্তিরাই সমাজে অস্থিরতা ও বিচারহীনতার সৃষ্টি করে। তাদের সমূলে উৎপাটন করা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত