Ajker Patrika

মিশ্র বর্জ্যে ঝুঁকিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
মিশ্র বর্জ্যে ঝুঁকিতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা

পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে প্রায় ১০ বছর কাজ করছেন শিরিন ও মিজান দম্পতি। তাঁরা সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) থেকে বর্জ্য সিটি করপোরেশনের ট্রাকে তুলে দেন। এই কাজ করতে গিয়ে কাচ বা ধারালো কোনো কিছু লেগে অনেকবার তাঁদের হাত-পা কেটেছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) রামপুরা ব্রিজ-সংলগ্ন এসটিএসে কথা হয় শিরিন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ময়লা ধরতে গিয়ে মাঝেমধ্যে হাত-পা কাইটা যায়। কারণ, কোনটার মধ্যে কী আছে, ওপর থেকে ঠিকমতো দেখা যায় না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট-সংলগ্ন এসটিএসে তিন বছর ধরে কাজ করেন নাজমুল আজিজ উজ্জল। তিনি জানান, বিপজ্জনক বর্জ্যে অন্তত ৫০ বার হাত-পা কেটেছে। কিন্তু একবারও ভালোভাবে চিকিৎসা নেননি। উজ্জল বলেন, ‘হাত-পায়ে পেরেক ঢুকলে গ্যাসলাইট দিয়ে হিট দিয়ে দিই। অনেক সময় সিগারেটের ছাই লাগাই।’

ঢাকার দুই সিটির তথ্য অনুসারে, ডিএনসিসিতে ৫০ এবং ডিএসসিসিতে ৫৬টি এসটিএস রয়েছে। সবগুলো এসটিএসে অনিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কর্মীরা। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় থেকে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২১ করা হলেও বাস্তবায়ন নেই সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, এসটিএসে তিন শ্রেণির বর্জ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জৈবিকভাবে পচনশীল কঠিন বর্জ্যের জন্য সবুজ, অপচনশীল কঠিন বর্জ্যের জন্য হলুদ এবং গার্হস্থ্যের ঝুঁকিপূর্ণ কঠিন বর্জ্যের জন্য লাল রংবিশিষ্ট পাত্র রাখতে হবে। এতে কঠিন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ, পুনর্ব্যবহার উপযোগীকরণ ও চূড়ান্ত পরিত্যাজ্যের উদ্যোগ নেওয়া সহজ হবে। এর মাধ্যমে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ঝুঁকিও অনেক কমে আসবে।

নিরাপদ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সম্প্রতি ঢাকা কলিং (ডিএসকে, কাপ, বারসিক ও ইনসাইটসের কনসোর্টিয়াম) প্রকল্পের উদ্যোগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ও স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে দুটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।

তাতে বলা হয়েছে, বিপজ্জনক বর্জ্যকে কীভাবে ব্যবস্থাপনা করা হবে এবং বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনের কার্যক্রম কীভাবে তদারকি করা হবে, এ-সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা নেই। তাই পরিবেশ রক্ষায় এবং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশনকে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭-এ লাল অথবা কমলা-খ শ্রেণিভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করেন কোয়ালিশন ফর দ্য আরবান পুওরের (কাপ) নির্বাহী পরিচালক খোন্দকার রেবেকা সান ইয়াত। তিনি বলেন, অনেকে বাড়িতে বর্জ্য আলাদা করলেও পরে সেই বর্জ্য এসটিএসে আবার একত্র করে ফেলা হয়। দেশের সব সিটি করপোরেশনের চিত্র একই। বিপজ্জনক কঠিন বর্জ্যের কারণে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরাও ঝুঁকিতে থাকেন।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিগগিরই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে জানান ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা। তিনি বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করতে আমরা চেষ্টা করছি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিগগিরই ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।’

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের মাস্টারপ্ল্যান অনুসারে ২০২৫ সালে বাসাবাড়ি থেকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদাভাবে সংগ্রহ করা হবে। এমনটা করা গেলে হয়তো স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ আনুষঙ্গিক সমস্যা কমে আসবে।’ এ ছাড়া পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থাও জোরদার করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত