Ajker Patrika

সূর্যমুখীতে হাসি কৃষকের মুখে

এম কে দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর
আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২২, ১৩: ৫১
সূর্যমুখীতে হাসি কৃষকের মুখে

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখী আবাদ করেছেন আমেজ দর্জি ও ইসমাইল হোসেন নামে দুই ভাই। তাঁদের বাড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের গংগাপাড়া এলাকায়। বাজারে ভোজ্যতেলের দাম যখন ঊর্ধ্বমুখী ঠিক সেই সময় উপজেলা কৃষি অফিসের সহযোগিতায় সূর্যমুখী চাষের পরিকল্পনা করেন তাঁরা। বর্তমানে সূর্যমুখী ফুল ফোটায় হলুদ রং ধারণ করেছে মাঠ।

উপজেলা কৃষি অফিস বলছে, অন্যান্য তেলের তুলনায় সূর্যমুখী ফুলের তেলের গুণগত মান ভালো। চাহিদাও বেশি। তাই কৃষকদের এই তেলজাতীয় ফসল চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সূর্যের আলো আর ফুলের হলুদ রঙে ঝলমল করছে চারপাশ। সূর্যের দিকে মুখ করে আছে ফুল। সকালে পূর্ব দিকে তাকিয়ে হাসলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সূর্যের আবর্তনে ফুলের দিক পরিবর্তন হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এ যেন সবুজের মাঝে হলুদের সমাহার।

আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে প্রতিদিনই আসছেন অনেকে। মনোরম পরিবেশ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করতে চাইছেন না কেউ।

উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশিয় ঘানি ব্যবহার করে পরিপক্ব সূর্যমুখী ফুলের বীজ থেকে তেল ভাঙানো যায়। স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কম এই তেলে।

চলতি মৌসুমে জামালপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এই তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় গংগাপাড়া গ্রামে ১০০ শতাংশ জমিতে কৃষক আমেজ দর্জি ও ইসমাইল হোসেন পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখী চাষ করেছেন। এতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন তাঁরা।

প্রথম বছরেই ফুলের চাষ করে সফলতার সম্ভাবনা দেখায় তাদের মুখে সূর্যমুখী ফুলের হাসি ফুটেছে। সূর্যমুখী ফুলের চাষ এই এলাকার ফুল প্রেমীদের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণসহ হই চই ফেলে দিয়েছে। ফুল ফোটার পর প্রতিদিনই দর্শনার্থীরা সূর্যমুখী বাগানে ভিড় করছেন।

সূর্যমুখী ফুল বাগানের খবর শুনে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাগানটি দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন আগতরা। সেলফি তুলছেন উৎসুক মানুষ। সূর্যমুখী ফুলের চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ এলাকাবাসীর অনেকেই এই ফুল চাষ করারও কথা বলছেন।

সাংবাদিক খাদেমু হক বাবুল বলেন, ‘প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সূর্যমুখী ফুলের বাগানে এসেছেন। ফুলের গন্ধে মন নেচে উঠেছে।’

সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসা দর্শনার্থী নারগিস আক্তার বলেন, ‘শহরের ঘরবন্দী থেকে একটু মুক্ত হাওয়ায় বেড়াতে ও বাগান ভরা ফুল দেখতে এখানে আসা। তবে এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ খুব সুন্দর লাগছে। তাই সবাই মিলে এ মনোরম দৃশ্য ফ্রেমে বন্দী করছি।’

ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী সুজন মিয়া বলেন, ‘বাসাবাড়িতে বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগান করা যায়। কিন্তু সূর্যমুখী ফুলের বাগান করা খুব একটা হয়ে উঠে না। এ ছাড়া একসঙ্গে অনেক সূর্যমুখী ফুল দেখে মনটা ভরে যায়।’

কৃষক আমেজ আলী দর্জী বলেন, ‘চলতি মৌসুমে কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে তিনি সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। সফলতার মুখও দেখছেন। ভবিষ্যতে এই চাষ আরও বাড়াবেন বলে তিনি জানান।’

কৃষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘অনেকটাই শখ করে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। বাম্পার ফলনের আশা করছি। ভবিষ্যতে আরও বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুল চাষ করবো।’

উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারী মিজানুর রহমান বলেন, ‘অন্যান্য তেলের তুলনায় সূর্যমুখী ফুলের তেলের চাহিদা বেশি। তাই আমরা এই তেলজাতীয় ফসল চাষে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’

ইসলামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ. এল. এম. রেজুয়ান বলেন, ‘উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভবিষ্যতে উপজেলার অন্যান্য এলাকায় এই সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা যায়। যারা চাষ করবে তাদের বীজ, সারসহ প্রযুক্তিগত সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত