Ajker Patrika

গুদামে যায়নি ১ কেজি ধানও

গফরগাঁও প্রতিনিধি
আপডেট : ১০ জুন ২০২২, ১৪: ০৯
গুদামে যায়নি ১ কেজি ধানও

গফরগাঁওয়ে অভ্যন্তরীণ বোরো ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে ১৭ মে। ২৪ দিন পেরিয়ে গেলেও দুই খাদ্যগুদামের কোনোটিতেই এক কেজি ধানও সংগ্রহ হয়নি। চাল সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৮৭ টন। বাজার মূল্য বেশি থাকায় কৃষক ও মিল মালিকেরা খাদ্যগুদামে ধান-চাল বিক্রি করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে গফরগাঁও উপজেলায় সরকারি পর্যায়ে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না শঙ্কা করছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলায় সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজি দরে ২ হাজার ৭৪৭ টন ধান ও ৪০ টাকা কেজি করে ৩ হাজার ৪৬৯ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সংগ্রহ অভিযান চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। তবে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছে ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান।

এ বছর কৃষক পর্যায়ে লটারির মাধ্যমে ধান ক্রয়ের প্রক্রিয়া না করে এলাকায় মাইকিং করে প্রচার চালানো হয়েছে। গফরগাঁওয়ের ধলা ও গয়েশপুর খাদ্যগুদামে ২৪ দিনে চাল সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ১৮৭ টন।

কৃষকেরা জানান, সরকারি মূল্যের চেয়ে বাজারে ধানের মূল্য বেশি। এ ছাড়া খাদ্য বিভাগের দুটি খাদ্যগুদাম উপজেলার শেষ দুই প্রান্তে হওয়ায় পরিবহন খরচ বেশি পড়ে। সরকারি পর্যায়ে ধানের সংগ্রহ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে গিয়ে কৃষক হয়রানির শিকার হয়ে খাদ্যগুদাম বিমুখ হচ্ছেন।

পাইথল ইউনিয়নের ডুবাইল গ্রামের কৃষক মহিবুল মিয়া বলেন, খাদ্যগুদামে ধান বিক্রির ঝামেলা বেশি। ধানের মান যাচাই-বাছাই নিয়ে সমস্যা হয়। এখন সরকারি মূল্যের চেয়ে খোলাবাজারে ধানের দাম বেশি।

কৃষক আব্দুল করিম বলেন, বাড়ির পাশে বাজারে ধান নিয়ে গেলে বেচে সদাইপাতি করে সহজেই বাড়ি ফেরা যায়। আর সরকারি খাদ্যগুদামে ধান নিয়ে গেলে সারা দিন সময় লেগে যায়। ধান যাচাই-বাছাইয়ে টিকলে বিক্রি, না হলে ফেরত। এতে কৃষকের পরিবহন খরচ গচ্চা যায়। এ ছাড়া খোলা বাজারে ধানের বর্তমান দাম বেশি।

অপরদিকে খোলা বাজারে চালের দাম বেশি থাকায় সরকারি তালিকাভুক্ত তিনটি অটোরাইস মিল ও ২৬টি সেমি অটোরাইস মিল নির্ধারিত মূল্যে চাল সরবরাহ করছে না। এ কারণে চলতি বছর ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কায় আছে উপজেলা খাদ্য বিভাগ।

সরকারি তালিকাভুক্ত একজন মিল মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ বছর ধান-চাল কেনার সরকারি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব না। কেন না হঠাৎ করে ধানের বাজার বেড়ে গেছে। এতে করে ধান কিনে চাল প্রক্রিয়া করে সরকারি মূল্যে গুদামে বিক্রি করলে অনেক লোকসান হবে।

গয়েশপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও খাদ্য পরিদর্শক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, সরকারি পর্যায়ে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও কৃষক পর্যায়ে ধান সংগ্রহ সম্ভব হয়নি। কিছু চাল সংগ্রহ হয়েছে মিলারদের কাছ থেকে। এবার ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. সাইদুর রহমান বলেন, এ বছর খোলা বাজারে ধান ও চালের মূল্য বেশি থাকায় কৃষক এবং মিলাররা ধান-চাল সরবরাহ করতে চাইছেন না। তবে মিলাররা ধান-চাল মজুত করলে তাঁদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবিদুর রহমান বলেন, ‘সরকারিভাবে কৃষক পর্যায়ে ধানের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪০ টাকা। বর্তমানে ধানের বাজার মূল্য বেশি থাকায় কৃষক গুদামে ধান বিক্রি করতে চাইছেন না। তবে চালের ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে মিলারদের চুক্তি রয়েছে। আশা করছি, মিলারদের চাল সরবরাহ নিয়ে সমস্যা হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত