Ajker Patrika

গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচে প্রাণ ফেরাল দেশি প্রকৌশলীরা

শরিফুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৫৬
গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচে প্রাণ ফেরাল দেশি প্রকৌশলীরা

সুযোগ আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরাও পারি—এ কথাটিই যেন আবার প্রমাণ করলেন বাংলাদেশের প্রকৌশলীরা। তাঁদের তত্ত্বাবধানে পুনরায় সচল হলো গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের পাম্পগুলো। কয়েক বছর আগে ৩ নম্বর পাম্পটি যখন পানি তুলতে ব্যর্থ হচ্ছিল, তখন এর মেরামতের জন্য ডাকা হয় জাপানি প্রকৌশলীদের। সব দেখেশুনে তারা মেরামতের বাজেট দেন ১২ কোটি টাকা।

আসলে সনাতন পদ্ধতিতে পাম্পটি চালু করতে ওই রকম বাজেটই লাগে। কিন্তু মেরামতের পদ্ধতিতে যদি নতুন চিন্তা করা যায় অথবা বৃত্তের বাইরে গিয়ে ভাবা যায়, তাহলে ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এনালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তর করতে পারলেই সফলতার বুনো পায়রা ধরা দেবে হাতের মুঠোয়।

অবিরাম চেষ্টায় অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের প্রকৌশলীরা ভিন্ন উপায়ে সেই সমস্যার সমাধান করে ফেললেন। মাত্র ২ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় পাম্পটি মেরামতেও সক্ষম হন দেশীয় প্রকৌশলীরা।

অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার আলী আজাদ বলেন, ‘জাপানিদের ডিজাইন ড্রয়িং অনুযায়ী ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের মাধ্যমে নতুন স্ক্যাডা সিস্টেম ডেভেলপ করে আমরা ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যালগুলো রি-স্টাবলিস্ট করেছি। এর মাধ্যমে আমরা স্বল্প ব্যয়ে কাজ শেষ করতে পেরেছি। এটি রিমোট কন্ট্রোলে পরিচালনা করা যায়, অর্থাৎ পাম্পের প্রতিটি স্ট্যাটাস, তাপমাত্রা, পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায় দূরবর্তী যেকোনো প্রান্ত থেকে।’

জানা যায়, ৭০ বছর ধরে বিশ্বজুড়ে সমাদৃত বাংলার জিকে সেচ প্রকল্প। ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ১৯৫৪ সালে এর জন্ম হয়। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল কৃত্রিম খালের মাধ্যমে গঙ্গার পানিকে কপোতাক্ষ নদ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। আর মধ্যবর্তী কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা—এই চার জেলায় কৃষিজমিতে সেচের পানি দেওয়া এবং মরুকরণের হাত থেকে ওই অঞ্চলের পরিবেশ রক্ষা করা। সে সময় এটিই ছিল বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেচ প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি এবং এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প। সে কারণে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রায় ৭৪ কোটি টাকায় দুটি পর্যায়ে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। ২০০৬ সাল থেকে জিকে প্রকল্পের প্রধান তিনটি পাম্প স্থাপন করা হয়, যার প্রতিটিতে আছে ২ দশমিক ৮ মেগাওয়াটের সিংক্রনাস মোটর। এর সক্ষমতা ৩৭ হাজার হর্স পাওয়ার। এটি সিংক্রনাস মোটর হওয়ায় বিদ্যুৎ প্রবাহের সঙ্গে সমন্বয় করে অনায়াসে প্রয়োজনীয় পানি তুলতে পারে।

অটোকন ২০২১ সালের ১০ নভেম্বর স্বল্প ব্যয়ে মেশিন প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে চার বছর ধরে অচল তিন নম্বর পাম্পটি পুনরুজ্জীবিত করেছে। এই পাম্পের মূল ডিজাইন অনুযায়ী ইলেকট্রিক্যাল সিগন্যাল প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে মেশিন লার্নিংয়ের ভাষায় নতুন করে অরগানাইজ করা হয়েছে। এর ফলে আগের চেয়ে পাম্পটির নিরাপত্তা আরও জোরালো হয়েছে।

অটোকন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সিইও মো. নাজমুল হাসান মেহেদী বলেন, ‘১৯৭২ সালের উন্নয়ন বাজেটের উল্লেখযোগ্য অংশ এই প্রজেক্টের আওতায় দেওয়া হয়। এর ফলে এক বছরের মাথায় এক লাখ বিঘা জমিতে অতিরিক্ত চাষাবাদ করা সম্ভব হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত