Ajker Patrika

বালুর ট্রাক্টরে চাষাবাদে বিঘ্ন

আব্দুর রহিম পায়েল, গঙ্গাচড়া
আপডেট : ১৮ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯: ৪০
বালুর ট্রাক্টরে চাষাবাদে বিঘ্ন

গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের হিড়িক পড়েছে। এই বালু পরিবহন করা ট্রাক্টরের কারণে পাড়ের জমিতে চাষাবাদ বিঘ্নিত হচ্ছে। গাড়ির চাকায় ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেচের কাজে ব্যবহৃত পাইপ ফেটে যাচ্ছে বলে ভুক্তভোগী কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন।

উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের সিংগীমারী এলাকায় তিস্তার তীরে গত বৃহস্পতিবার গিয়ে দেখা গেছে বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ। এ সময় কথা হয় স্থানীয় কৃষক জোনাব আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, তিস্তার চরের ধান পরিবহনের কথা বলে তাঁর জমির ওপর দিয়ে সাময়িক রাস্তা করা হয়েছিল। এখন সেখান দিয়ে বালু বহন করা হচ্ছে। এই কাজ করছেন বালু ব্যবসায়ী পুলক মিয়া।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুলক বলেন, ‘আমি তো একা তিস্তা নদীর বালুর ব্যবসা করি না। অনেকেই তো করতেছে। আপনারা আগে সেগুলোর বিরুদ্ধে লেখেন।’

পুলক আরও জানান, ধামুর মাঝাপাড়া গ্রামে কয়েকজন তিস্তা নদী থেকে সারা বছর বালু উত্তোলনের ব্যবসা করছেন।

তিস্তা নদী থেকে উত্তোলন করা বালু নেওয়া হচ্ছে ট্রাক্টরে করে। ছবিটি গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ইউনিয়নের শিগিমাড়ি এলাকা থেকে তোলাউত্তর কোলকোন্দ গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের বলেন, ‘তিস্তার চরে আমি নিজস্ব জমি চাষাবাদ করি। জমিতে সেচ দিতে প্লাস্টিকের পাইপ ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু দক্ষিণ কোলকোন্দ গ্রামের বালু ব্যবসায়ী রেজাউল ইসলাম ও রাসেল আমার জমির মাঝ দিয়ে রাস্তা করে সারা দিন বালু বহন করছে। ফলে আমি জমিতে সেচ দিতে পারছি না। সেচ পাইপের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল করায় পাইপ ফেটে গেছে। নতুন পাইপ কিনে চাইলে পাল্টা বালু ব্যবসায়ী দুজন আমাকে হুমকি দিয়েছে।’

পাইপ ফেটে যাওয়ার একই অভিযোগ করেন ওই এলাকার হাফিজ উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বালুর ট্রাক চলাচল বন্ধ করতে বললে বালু ব্যবসায়ী রেজাউল ও রাসেল বলে, এ রাস্তা আমরা কিনে নিয়েছি। তোর আবাদ নষ্ট হলে আমাদের কী? থানা-পুলিশকে বললেও কোনো লাভ হবে না। থানা-পুলিশ আমাদের পকেটে থাকে।’

একই এলাকার আবদুস সালাম খেতে সেচ দেওয়ার জন্য ৩ হাজার টাকা খরচ করে সেচের পাইপ বসিয়েছিলেন। বালুর ট্রাকের নিচে পড়ে পাইপটি ভেঙে যায়। পরে চাষাবাদের জন্য আবার ৩ হাজার টাকা খরচ করে নতুন পাইপ বসান। এ ঘটনায় তিনি ক্ষতিপূরণ চাইলে বালু ব্যবসায়ী রেজাউল তাঁকেও হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

কামারপাড়া গ্রামের কৃষক নিবারণ রায়ের স্ত্রী অনিতা রাণী বলেন, ‘নদী থেকে বালু তুলি বেচার কারণে হামার আবাদ এবার অদ্দেক নষ্ট হয়া গেইচে। কিছু কইলে ওরায় হামাক মিচা মামলাত ফেলবার হুমকি দেয়। হামরা গরিব মানুষ, ওমারগুলার সাথে কি হামরা পারি?’

তবে রেজাউলের দাবি, তাঁর দুটি ট্রাক্টর বিভিন্ন ভাটা থেকে শুধু ইট পরিবহন করে। তাঁরা বালু ব্যবসা করেন না। তবে মাঝেমধ্যে এলাকার লোকজন বালু চাইলে তিস্তা নদী থেকে তা উত্তোলন করে দেন।

এদিকে ধামুর বোল্লারপাড় এলাকার আসাদুল হক ও শফিকুল ইসলামসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, বর্ষা মৌসুমে শ্যালো মেশিন দিয়ে এবং শুকনো মৌসুমে সরাসরি কোদাল, বেলচা ব্যবহার করে তিস্তা থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করা হয়। এ বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গঙ্গাচড়াসহ রংপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে। বালু পরিবহনের ফলে একদিকে তিস্তায় গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়ে প্রতি বছরই ভাঙন বাড়ছে, অপরদিকে ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে এলাকার রাস্তাগুলো দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যার ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় লোকদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার সাহা বলেন, ‘অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত