Ajker Patrika

শান্তির ঘুম

জসীম উদ্দীন মণ্ডল
আপডেট : ১৮ নভেম্বর ২০২১, ১০: ১৭
শান্তির ঘুম

কমরেড জসীম উদ্দীন মণ্ডল আজীবন বামপন্থী রাজনীতি করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর একবার তিনি ট্রেড ইউনিয়নের নেতা হিসেবে মস্কোর ট্রেড ইউনিয়নের আমন্ত্রণে সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। সেটাই ছিল তাঁরপ্রথম বিমানভ্রমণ। ভারতেরবোম্বে এয়ারপোর্ট থেকে শুরুহলো উড্ডয়ন। প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকাচ্ছিলেন ভয়ে ভয়ে। চৈত্র মাসে যেভাবে শিমুল তুলোর ওড়াউড়ি দেখেছেন, অবিকল সেই দৃশ্যই যেন দেখছেন জানালা দিয়ে, সেখানে শিমুল তুলোর মতোইউড়ে যাচ্ছে মেঘদল।

মস্কো এয়ারপোর্ট থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হলো অভিজাত স্পুৎনিক হোটেলে। একজন রুশ ছেলে ছিল দোভাষী হিসেবে। ভালো বাংলা বলে সে।

রুশ দেশের কমরেডদের সঙ্গে খেতে বসে অবাক হলেন জসীম মণ্ডল। কী খেতে দিয়েছে এসব! সবই তো সেদ্ধ! সবজি সেদ্ধ, মাংস সেদ্ধ এবং তাতে ঝাল-লবণ নেই। প্লেটে নানা ধরনের ‘পাতাপুতি’ দেখে ঘাবড়ে গেলেন একটু। দোভাষী যখন বলল, ‘ওগুলো খেয়ে দেখো, খুবই টেস্টি।’ তখন তার উত্তরে জসীম মণ্ডল বললেন, ‘ওগুলো তো আমাদের দেশে ছাগলে খায়।’

দোভাষী হেসে উঠল। অন্য কমরেডরা জানতে চাইলেন হাসির কারণ। সেটা শুনে সে হাসি ছড়িয়ে পড়ল অন্যদের মুখেও। রুটিতে মাখন আর চিনি লাগিয়ে খাওয়া শেষ করলেন।

এরপর তো রাতে ঘুমানোর পালা। আজীবন সংগ্রামী যখন বিছানায় পেতে দিলেন শরীর, দেখলেন নরম গদিঅলা খাটে তিনি ডুবে যাচ্ছেন। দুই পাশের গদি উঁচু হয়ে তাঁকে এমনভাবে ঠেসে ধরতে লাগল যে তাঁর দম আটকে যাচ্ছিল। রাতের বেলায় দোভাষীও বিদায় নিয়েছে। অভিজাত হোটেলে কাউকে ডিস্টার্ব করার রীতি নেই। কী করা যায়? তিনি তখন বালিশটা নামিয়ে নিয়ে শক্ত কার্পেটে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লেন। বেশ ঘুম হলো রাতে। এর পর থেকে ঘুমানোর এই প্রক্রিয়াই বহাল রাখলেন। তাতে হলো শান্তির ঘুম।

সূত্র: জসীম উদ্দীন মণ্ডল, জীবনের রেলগাড়ী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত