Ajker Patrika

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক

সম্পাদকীয়
প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক

দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষক পদে নিয়োগ হচ্ছে। সহকারী শিক্ষকের পদসংখ্যা বাড়িয়ে ৪৫ হাজার করার কথা থাকলেও সেটা হচ্ছে না; বরং বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত ৩২ হাজার  ৫৭৭টি পদেই নিয়োগ দেওয়া হবে। নিয়োগে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয় তিন ধাপে। ১৩ লাখ ৯ হাজার ৪৬১ জন নিয়োগপ্রত্যাশী তাতে অংশ নেন।

এসবই হলো প্রাথমিক তথ্য। যাঁরা নিয়োগ পাচ্ছেন, তাঁরা শুরু করতে যাচ্ছেন নতুন জীবন। দেশের সেই জনগোষ্ঠীর সঙ্গেই তাঁদের বোঝাপড়া করতে হবে, যারা সদ্য জীবনের সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার অর্থই হলো শিশুদের নৈতিক বোধ জাগরণের কান্ডারি হওয়া। বইয়ে যা আছে, তা পড়ানোর সময় শিশুর নৈতিকতা ও মূল্যবোধ গড়ে তোলার দিকেও থাকতে হয় নজর, শিশুর মনকে যুক্তিতে পারদর্শী করে গড়ে তুলতে হয়। নানা ধরনের কুসংস্কার, দেশপ্রেমহীনতা থেকে শিশুকে রক্ষা করার একটা দায়িত্বও বর্তায় প্রাথমিক শিক্ষকদের ওপর।

এ কথা কারও অজানা নয় যে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে সহকারী শিক্ষকেরা যে আয় করেন, তা জীবনযাত্রা পরিচালনা করার জন্য নিতান্তই অপ্রতুল। কাজের ধরন, কাজের উদ্দেশ্য ইত্যাদির দিকে যদি আমরা খেয়াল রাখি, তাহলে যে কারও নজরে পড়বে এই শিক্ষকদের দীন-হীন অবস্থা। আর্থিক জীবন সুসংগঠিত না হলে শিক্ষক কী করে পড়ানোয় আনন্দ পাবেন? বহু আগে থেকেই কিছুসংখ্যক শিক্ষক শহরাঞ্চলে গড়ে তুলেছেন কোচিং সেন্টার। স্কুলের বাইরে শিক্ষার এই রমরমা ব্যবসা গুটিকয় নৈতিকতা-বর্জিত শিক্ষকের আখের গুছিয়ে দিয়েছে বটে, কিন্তু তাতে বিদ্যালয়ে শিক্ষার কাঠামোই হয়েছে আঘাতপ্রাপ্ত। শিক্ষার্থীদের বোঝানো হয়েছে, স্কুলে পড়াশোনা হবে না, সেখানে যেতে হবে শুধু নিয়ম রক্ষার জন্য—পড়াশোনা হবে প্রাইভেট পড়লে। শহরাঞ্চলে এই ব্যবসার বিরুদ্ধে সত্যিকার অর্থে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। তেমনি নোটবইকেও দেওয়া হয়েছে সম্মানজনক অবস্থান। নোটবইয়ের বিরুদ্ধে যত কথাই হোক না কেন, সে বইয়ের চাহিদার দিকে তাকালেই বোঝা যায়, এ বইকেই পরীক্ষায় ভালো করার উপায় হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। বেশির ভাগ শিক্ষক এই সর্বনাশের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও আর্থিক সাফল্য না থাকায় তাঁদের পাঠদানেও এই বৈপরীত্যের প্রভাব পড়ে। সমাজে জ্ঞানের চেয়ে অর্থ বেশি মূল্যবান হয়ে উঠলে এ রকম অবস্থার সৃষ্টি হয়।

কথাটা বলতে হলো এই জন্য যে, যাঁরা প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, তাঁরা যদি শিশুদের গড়ে তোলার কারিগর হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে না পারেন, তাহলে তাঁদের হাত ধরে যে শিশুরা বেড়ে উঠবে, তারা হয়ে উঠবে এক একটা কূপমণ্ডূক। এদের কেউ যুক্তি দিয়ে বিচার করা শিখবে না। এরা ন্যায় ও অন্যায়ের পার্থক্য করতে পারবে না।

যাঁরা প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন, তাঁদের প্রাথমিক শিক্ষাটাই হতে হবে নৈতিকতার। শিশুদের মনে সমাজের ভালো-মন্দের পার্থক্য বুঝিয়ে দেওয়ার দায় তাঁরা কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত