Ajker Patrika

যাত্রীসেবার ব্যাকরণ

সম্পাদকীয়
যাত্রীসেবার ব্যাকরণ

পঁয়ষট্টি বছর বয়সী ওহিদ মিয়া কোনো কিছু বোঝার আগেই বাসচাপায় মারা গেলেন। যখন তিনি হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বুল্লাবাজারে একটি বাসের টিকিট কাটছিলেন, তখন অন্য এক একটি বাসের টিকিট কাটছিলেন, তখন অন্য এক বাসের চালক সম্ভবত তাঁর ওপরে চটে ওঠেন। ‘কী, এত বড় কথা, আমার বাসে না উঠে অন্য বাসের টিকেট কিনলেন!’ হয়তো এ রকম ছিল ভাবখানা। লাকি এক্সপ্রেসের চালক তাঁর বাসটি চালিয়ে দেন ওহিদ মিয়ার ওপর দিয়ে। ফলে চট্টগ্রামের গন্তব্যে পৌঁছানোর কোনো সুযোগ হয়নি তাঁর। তিনি পৌঁছে গেলেন আরেক গন্তব্যে, মৃত্যু যার নাম।

যাত্রী কোন বাসের টিকিট করবেন, সেটা তাঁর নিজস্ব ব্যাপার। কোনো বাসে জোর করে ওঠানোর জন্য কেউ তাঁকে বাধ্য করতে পারে না। কিন্তু আজকের পত্রিকার খবরটিতে দেখা যাচ্ছে, লাকী এক্সপ্রেস আর পালকী এক্সপ্রেস নামের দুই বাসের শ্রমিকেরা ওহিদ মিয়াকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করছেন। এ অবস্থায় একটি বাসের টিকিট কেনার পর অন্য বাসটি তাঁকে চাপা দিয়ে চলে যায়। বাসচালকেরা কতটা অমানবিক হতে পারেন, তার একটি প্রমাণ হচ্ছে এ ঘটনা।

আমাদের পরিবহন সেক্টরটি সাধারণ মানুষের জন্য এ রকম ভয়ংকর হয়ে উঠবে কেন? পরিবহন সেক্টরে যারা কাজ করেন,  তারা পরিবহনবিষয়ক নীতিমালা সম্পর্কে কতটা অবহিত, সেটা জানার কি কোনো উপায় আছে? বাসমালিকদের অনেকেই সেটা অগ্রাহ্য করেন। চালক, কন্ডাক্টর, হেল্পারের অবশ্য পালনীয় যে কর্তব্য আছে, সে বিষয়ে তারা কতটুকু জানেন? যাত্রীসেবা না হয়ে যদি যাত্রী নির্যাতন হয়ে ওঠে লক্ষ্য এবং তা বোঝার মতো অনুভব শক্তিও না থাকে সেবা প্রদানকারী সংস্থাটির, তাহলেই কেবল এ রকম অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটতে পারে।

বাসের কন্ডাক্টর অথবা হেলপার হতে হলে কিংবা বাসের টিকিটঘরে কাজ করতে হলে পরিবহনসংশ্লিষ্ট ন্যূনতম যে ভব্যতা থাকতে হয়, তা নিয়ে আমাদের কারও কোনো ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। 

চরিত্রের দিক থেকে দেশের আমলাতন্ত্রের সঙ্গে পরিবহন সেক্টরের কর্মচারীদের ব্যবহারে অনেক মিল আছে। জনগণ তথা যাত্রীকে তাঁরা মোটেই দেশের মালিক বলে মনে করেন না। যাঁরা সেবক তাঁরাই হয়ে ওঠেন মালিক। জনগণের হাতে কোনো ধরনের ক্ষমতা না থাকায় তাঁরাই রূপান্তরিত হয়ে সেবকে পরিণত হন। হয়ে পড়েন জিম্মি।

দূরপাল্লার পরিবহনে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। অত্যাধুনিক পরিবহন এসে যাত্রীদের সুযোগ করে দিয়েছে আনন্দভ্রমণের। কিন্তু দেশজুড়ে তো শুধু বিলাসবহুল পরিবহনই চলে না; রাজধানীসহ সারা দেশেই লোকাল বাস নামে যে পরিবহনগুলো আছে, সেগুলোর হাল-হকিকতও নিশ্চয়ই সবার জানা আছে। দেড়জন মানুষ বসা যায় এ রকম একটি আসনে দুজনকে বসতে বাধ্য করা হয়। যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টর বা হেল্পার যে আচরণ করেন, তার কোনো ব্যাকরণ নেই।

সেই ব্যাকরণটাই আনতে হবে যাত্রীসেবায়। না হলে ওহিদ মিয়াদের মতো যাত্রীরা এভাবেই প্রাণ হারাতে থাকবেন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দিলে এ ধরনের চালকেরা অবিবেচকই থেকে যাবেন, যা কঠোর হাতে দমন করা দরকার। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে রদবদল

গাজীপুরে রাস্তা বন্ধ করে চলাচল করা সেই পুলিশ কমিশনারকে প্রত্যাহার

ধর্ষণে মেয়ে গর্ভবতী, বাবার আমৃত্যু কারাদণ্ড

ভারতসহ একসঙ্গে তিন দেশ সামলাবেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, দিল্লিতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

নারীর সঙ্গে ঝগড়ার পর রূপসা সেতু থেকে নিচে লাফ দেন সাংবাদিক বুলু: কোস্ট গার্ড

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত