Ajker Patrika

বুদ্ধিজীবী

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ৫৬
বুদ্ধিজীবী

একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছিল জাঁ পল সার্ত্রের জীবন ও কাজ নিয়ে। প্রামাণ্যচিত্রটি জুড়ে ছিল ফরাসি এই নাট্যকার, ঔপন্যাসিক ও দার্শনিকের দীর্ঘ সাক্ষাৎকার।

সেই সাক্ষাৎকারে বুদ্ধিজীবীদের বিষয়ে বেশ কিছু কথা বলেছিলেন সার্ত্র। বুদ্ধিজীবীরা মূলত উঠে আসেন মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে, কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বুদ্ধিজীবীর দিকে এমন করে তাকায়, যেন কোনো অদ্ভুত একটি প্রাণীর জন্ম তারা দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীদের ধ্যান-ধারণা ও মূল্যবোধ আসে মূলত মধ্যবিত্তের ধ্যান-ধারণা ও মূল্যবোধ থেকে। তাই তাঁরা মধ্যবিত্তের সংস্কৃতির রক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করে যান। হয়ে ওঠেন পেশাজীবী এবং সেই পেশাসংশ্লিষ্ট স্বার্থই দেখেন। আর কেউ বনে যান অভিজাত। যতই তাঁরা বিপ্লব চেতনার কথা বলে থাকুন না কেন, মধ্যবিত্ত চিন্তা ও চেতনায় তাঁদের মধ্যে এত বিশাল প্রভাব ফেলে যে তাঁরা নিজেদের অজ্ঞাতেই বদলে যেতে শুরু করেন। তারপর নোবেল বা বড় কোনো পুরস্কার খেতাব বা সম্মান নিয়ে তাঁরা কৌশলে ফিরে আসেন নিজের বলয়ে।

সকৌতুকে সার্ত্র লক্ষ করেছেন, মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে উদ্ভূত হয়ে মধ্যবিত্তের বিরুদ্ধে যাঁরা সংগ্রাম করতে চান, যাঁরা বিত্তহীনের পক্ষ অবলম্বন করেন, তাঁদের উচ্চারণ ও সব কার্যক্রম পরিচালিত হয় মধ্যবিত্তের ভাষায় এবং মধ্যবিত্তের মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে।

সার্ত্র নিজেও কি এই মধ্যবিত্ত মানসিকতা থেকে নিজেকে দূরের মানুষ বলে মনে করেন?

না। সার্ত্র অকপটে স্বীকার করেন যে তিনি নিজে এর ব্যতিক্রম নন এবং বুঝিয়ে দেন যে এই পরস্পরবিরোধিতায় তিনি স্বয়ং বন্দী। এই বন্দিত্ব ঘোচানোর নানা চেষ্টা তিনি করেছেন। নানা ধরনের পুরস্কার, খেতাব, উচ্চপদ-জাতীয় প্রলোভন তিনি এড়িয়ে গেছেন। তারপরও তিনি মনে করেন, তাঁর সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে মধ্যবিত্তের জন্য। তবে মধ্যবিত্তদের শাসন ও স্বার্থ গুঁড়িয়ে দেওয়ার সংগ্রাম করছে যাঁরা, সেই শ্রমজীবীদের সঙ্গে বোধ করেছেন একাত্মতা।

সূত্র: সৈয়দ শামসুল হক, হৃৎকলমের টানে, পৃষ্ঠা ১৭৭-১৭৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত