Ajker Patrika

জমিতে ভেজা পাকা ধান চোখ ভেজাচ্ছে কৃষকের

­­­নওগাঁ প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১৫: ২২
জমিতে ভেজা পাকা ধান চোখ ভেজাচ্ছে কৃষকের

নওগাঁয় মাড়াইয়ের মাঝ পথে এসে বোরো ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। এপ্রিল ও চলতি মাসের শুরু থেকে দফায় দফায় ঝড়-বৃষ্টিতে জেলার কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে পাকা, আধা পাকা ও কেটে স্তূপ করে রাখা শুকনো ধান ভিজে গেছে। এখন বেশির ভাগ জমিতে বৃষ্টির পানি থাকায় ভাসছে পাকা ধান।

গতকাল বুধবার সকাল থেকে রোদ পেয়ে সেই ভেজা ধান শুকনো জায়গায় তুলতে কৃষকদের মধ্যে ব্যস্ততা দেখা গেছে। কেউ কেউ খেত থেকে ভেজা ধান আঁটি বেঁধে বাঁকে করে রাস্তায় তুলছেন, কেউবা মাথায় করে তুলে গাড়িতে ভরে ভেজা ধান নিয়ে ছুটছেন, আবার কেউ পানি মাড়িয়ে খেতের ধান কেটে রাস্তার পাড়ে তুলে স্তূপ করে রাখছেন। তবে বেলা ২টা থেকে আবার শুরু হওয়া বৃষ্টির কারণে মাঠে চাষিদের মধ্যে হাহাকার দেখা গেছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশই জিরা, কাটারিভোগ, বিআর-২৮ ও বিআর-২৯ জাতের ধান। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টন। আজ বুধবার পর্যন্ত প্রায় ৪০ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। গত এপ্রিল ও চলতি মাসে হওয়া কয়েক দফা ঝড়-বৃষ্টিতে বোরো ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৪ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমির।

নওগাঁ সদর উপজেলার বর্ষাইল, হাপানিয়া, ফতেপুর, হাঁসাইগাড়ি, রাণীনগর উপজেলার বিশা, কালিগ্রাম, আত্রাই মনিয়ারী ও নিয়ামতপুর উপজেলার চন্দনগর ছাড়াও জেলার পত্নীতলা, মাতাজিহাট, মহাদেবপুর, ধামইরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, হাজারো একর জমির পাকা ধান মাঠে পড়ে আছে। অনেক খেতে পানি জমে রয়েছে। পানি জমে থাকায় ধান থেকে আবারও নতুন করে ধানগাছ জন্ম নিচ্ছে। মাঠে মাঠে নারী-পুরুষসহ সব বয়সী মানুষকে ভেজা ধান ডাঙায় তুলতে দেখা গেছে। দফায় দফায় বৃষ্টিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা।

কৃষকেরা বলছেন, মৌসুমজুড়ে কয়েক দফা বৃষ্টির কবলে পড়েছেন চাষিরা। যাঁদের ধান কাটা সম্ভব হয়নি, তাঁদের জমিতে ভিজে যাওয়া ধানে এখন চারা গজিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া শ্রমিক-সংকটে ধান কাটতে পারেননি চাষিরা। এসব ধান তাঁরা ভালোভাবে ঘরে তুলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে যেমন শঙ্কা রয়েছে, তেমনি শঙ্কা রয়েছে ভালো দাম পাওয়া নিয়ে।

পত্নীতলা উপজেলার গ্রামের কৃষক আতোয়ার রহমান বলেন, ‘মোটামুটি গোছাতি পেরেছি। ৪ বিঘা ধান নিয়ে বিপদ হয়ে গেছে। ধান কাটার আগ মুহূর্তে বৃষ্টি এসে পানিতে তলায়ে গেছে। এখন বাড়ির বাড়ির সবাই মিলে ধান টেনে ডাঙায় তুলছি।’

শেরপুর গ্রামের কৃষক আইন উদ্দিন বলেন, ধান নিয়ে বড় বিপদ। আঁটি করা খেতের ভেজা ধান টেনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। পাকা ধানের খেতে হাঁটুপানি। কোনোমতে কেটে এখন আঁটি বেঁধে রাস্তায় তুলছি।’

মাতাজিহাটের ধান ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, পাকা ধান ভিজে গেলে রং খারাপ হয়ে যায়। তা ছাড়া চারা গজিয়ে যাওয়া ধানের চাল ভালো হয় না, ভেঙে যায়। ভাতে গন্ধ লাগে। এ জন্য ভেজা ধান ১০০-১৫০ টাকা মণে কম দাম পান চাষিরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামসুল ওয়াদুদ বলেন, এবার ঘন ঘন ঝড়-বৃষ্টিতে এই অঞ্চলের কৃষকের কষ্ট বেড়ে গেছে। ধান ভিজে যাওয়ায় অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এবার প্রায় ২০ শতাংশ ধান উৎপাদন কম হতে পারে। বিভিন্ন এলাকায় শস্য কর্তন করতে দেখা যাচ্ছে। গত বছর যেসব জমিতে ২৫-২৭ মণ ধান উৎপাদিত হয়েছে, এবার সেখানে ১৮-২০ মণ উৎপাদিত হচ্ছে। তবে আগামী এক-দুই সপ্তাহের আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকেরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত