Ajker Patrika

মানুষ ঠকানোর ব্যবসা

সম্পাদকীয়
মানুষ ঠকানোর ব্যবসা

আমাদের সমাজে মূল্যবোধ, নৈতিকতার স্তর দিন দিন নিম্নগামী হয়ে যাচ্ছে, সেটা বোঝা যায় ব্যবসায়ীদের দিকে তাকালেই। তাঁরা যেন ক্রেতাকেও পণ্য হিসেবে বিবেচনা করেন! একসময় ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের যথার্থ সম্মান করতেন। কিন্তু আজকাল তেমনটা হয়তো খুব কমই দেখা যায়। কেননা, মুখে হাসি নিয়ে ক্রেতাদের ঠকানোর ঘটনা কম হচ্ছে না। ব্যাপারটা চকচকে মোড়কে নকল পণ্য সঁপে দেওয়ার মতো।

হ্যাঁ, হচ্ছেও তাই। আজকের পত্রিকায় মঙ্গলবার একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। খবরে বলা হচ্ছে, চট্টগ্রামে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য খোলাবাজারে কম মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এরপর তাঁরা ওই সব পণ্য নামীদামি ব্র্যান্ডের মোড়কে বিক্রি করতেন বাজারে।

ওই ব্যবসায়ীরা দুটি অপরাধ করেছেন—এক. তাঁরা টিসিবির পণ্য কিনেছেন, যেটা তাঁরা কোনোভাবেই কিনতে পারেন না; দুই. কম দামি পণ্য দামি ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি করেছেন। এতে গরিব মানুষের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি সাধারণ ক্রেতারাও ঠকেছেন।

অর্থশাস্ত্রের জনক অ্যাডাম স্মিথ অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্যের কথা বলেছেন। পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ব্যবসার একমাত্র উদ্দেশ্য মুনাফা অর্জন করা। স্মিথ ব্যক্তিস্বার্থ আর সমাজের স্বার্থকে সমন্বয় করতে গিয়ে অদৃশ্য হাত তত্ত্বের কথা বলেছেন। তাঁর মতে, প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এই অদৃশ্য হাতের মাধ্যমে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু বর্তমানে বাজারে অদৃশ্য হাতের বিপরীতে কালো হাতের উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ফলে প্রতিযোগিতার পরিবর্তে একচেটিয়া বাজার দখল করছে সবকিছু।

বিষয়টি এখন সারা বিশ্বেই কম-বেশি দেখা যায়। বাংলাদেশে ব্যাপারটা চরম আকার ধারণ করেছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সীমাহীন লোভ এবং সর্বাধিক মুনাফা অর্জনের বিষয়টি ক্রেতাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়েছে; বিশেষ করে রমজান মাস এবং বাজেট ঘোষণার পর পণ্যের দাম বাড়ানোর ঘটনা একটা নিয়ম হয়ে গেছে।

ব্যবসায়ীরা এখন সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য যেকোনো ধরনের অনিয়ম করতে পিছপা হচ্ছেন না। এ জন্য তাঁরা নৈতিকতা, সততা, সামাজিক দায়বদ্ধতা, ব্যবসায়িক রীতিনীতি কোনো কিছুরই পরোয়া করছেন না। তবে ব্যবসায় নৈতিকতা বজায় রাখা সুষম প্রবৃদ্ধির জন্য এবং সমাজে ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সরকার গরিব মানুষের জন্য কম দামে পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। সেই পণ্য কীভাবে ব্যবসায়ীদের গুদামে চলে গেল? এ ঘটনায় চট্টগ্রামের টিসিবির কর্মকর্তাদের যোগসাজশ না থাকলে এ ধরনের অপরাধ সহজে ঘটতে পারত না। এ ঘটনায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের হয়তো দেশের আইনে বিচার হবে। কিন্তু সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? আর শুধু আইন দিয়ে যে অপরাধীদের সুপথে আনা সম্ভব নয়, সেটা সমাজের নানা ঘটনায় প্রমাণিত।

এ ধরনের অপরাধ নির্মূল করার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ না করলে কোনো অনিয়মই বন্ধ হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত