Ajker Patrika

মৃত্যুর সঙ্গে প্রেম

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
মৃত্যুর সঙ্গে প্রেম

কল্লোলে যাঁরা লিখতেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই পকেটে টাকা থাকত না। সেকালে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে সাহিত্য করতে আসত কম মানুষ। একেবারে ছন্নছাড়া জীবন থেকে উঠে আসা মানুষদের আনাগোনাই ছিল বেশি। 
কলকাতার মির্জাপুর স্ট্রিটে ফেভারিট কেবিন নামে একটি দোকানে ছিল শ্বেতপাথরের টেবিল। সেটাতেই গোল হয়ে বসতেন কল্লোলের দল। দোকানের মালিক ছিলেন চট্টগ্রামের লোক। সম্ভবত নতুন বাবু বলে তাঁকে ডাকতেন সবাই। নবীন সাহিত্যিকদের ভালোবাসতেন তিনি। আপ্যায়ন করতেন। এক কাপ চা নিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকা যেত তাঁর দোকানে। কেবিনের টেবিলে বসেই আড্ডা, তর্ক, চিৎকার-চেঁচামেচি সবই হতো। ভালো কিছু খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও ট্যাক ফাঁকা থাকায় সে ইচ্ছে পূরণ হতো না।

অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের বন্ধু নৃপেণ হয়তো একদিন বলে বসলেন, ‘চল, কিছু পেটপুরে খাওয়া যাক!’ ‘পয়সা?’ অচিন্ত্যের মনে সন্দেহ।
‘পয়সা যে নেই, তুইও জানিস, আমিও জানি। এ প্রশ্ন করে লাভ নেই।’ 
‘তবে?’ 
‘চল, বেরিয়ে পড়ি একসঙ্গে। বেগ-বরো অর স্টিল।’চীনা খাবার খেতে হবে। পথে পরিচিত সব বাড়িতে ঢুকে পড়ছে নৃপেণ। কোথাও কিছু জুটছে, কোথাও গিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে খালি হাতে। শেষে যখন খিদেয় পেট চোঁ চোঁ, তখন দেখা গেল ২ টাকা জোগাড় হয়েছে। অচিন্ত্য মনে করলেন, তাহলে তো তোফা খাওয়া হবে। কিন্তু নৃপেণ বললেন, ‘এ টাকা আমার কালকের বাজার খরচ।’

কল্লোলের সাহিত্যিকেরা এ রকমই ছিলেন। কখনো বিদ্রোহী, কখনো ভাবানুরাগী। প্রবল বিরুদ্ধবাদ যেমন ছিল, তেমনি ছিল বিহ্বল ভাববিলাস। যুগের যন্ত্রণাও ছিল। কখনো সবাই উন্মত্ত, কখনো উন্মন। ভাবে যদি শেলি, কাজে হ্যামলেট! এ সময়টাতে অচিন্ত্যরা সবাই মৃত্যুর প্রেমে পড়েছিলেন।

মৃত্যুকে তখন দারুণ রোমান্টিক বলে মনে হতো। এ কারণেই অচিন্ত্য কবিতায় লিখেছিলেন, ‘নয়নে কাজল দিয়াউলু দিও সখি, তব সাথে নয়, মৃত্যুর সাথে বিয়া।’ 

সূত্র: অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, কল্লোলযুগ, পৃষ্ঠা ১০৫-১০৯

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত