Ajker Patrika

বাঁচা

সম্পাদকীয়
বাঁচা

আলী যাকের সীমান্তের দিকে রওনা হয়েছিলেন ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল। সীমান্তের পার্শ্ববর্তী এলাকা ‘বেজোড়া’র উদ্দেশ্যে তাঁদের এই যাত্রা। গ্রামের কাঁচা রাস্তা, খেতের আল দিয়ে হেঁটে তাঁরা পৌঁছে যান কোম্পানীগঞ্জ বাজারে। খালাতো বোন, তাঁর স্বামী, তাঁদের তিন সন্তান, আলী যাকেরের ছোট বোন, তাঁর স্বামী, এক কন্যা, ভাগনি এবং এক বন্ধুসহ তাঁরা চলেছিলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-কুমিল্লা সড়কটি তখন পূর্ব পাকিস্তানের সীমান্তরেখা হয়ে উঠেছিল। এই সড়কের অপর প্রান্তে পৌঁছাতে পারলেই পাকিস্তানিদের আওতা থেকে বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব। এতগুলো বাচ্চাকাচ্চাসহ হেঁটে এই রাস্তা পাড়ি দেওয়া কঠিন।

তখন এ সড়কটির নাম ছিল সিঅ্যান্ডবি। ধীরে ধীরে রাস্তার কাছে গেলেন আলী যাকের। সবাই একসঙ্গে রাস্তা পার হওয়া যাবে না। ভাগনি রুমা আর ভাগনে শাকিলকে নিয়ে চলেছেন আলী যাকের। অন্যরা পেছনে। রাস্তা পার হওয়ার সময়টাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিক থেকে একটা জিপ আসার শব্দ পাওয়া গেল। আলী যাকেরের রক্ত হিম হয়ে গেল। কোনোরকমে বুকে সাহস এনে রাস্তা পার হলেন। রওনা হওয়ার আগেই চশমা আর ঘড়ি খুলে নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুর মতো বিশাল চেহারা বলে চশমা চোখে থাকলে তাঁকে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলতে পারে পাকিস্তানি সেনারা এবং তাতে মৃত্যু অবধারিত। এ কারণেই চশমা খুলে রাখা।

কিন্তু তাতেও পরিত্রাণ মিলবে কি না, কে জানে। জীবনে এই প্রথম দেখা দিল মৃত্যুভয়। জিপটি ক্রমেই কাছে আসছে। ভাগনে আর ভাগনিকে কোনোমতে আলী যাকের বললেন, ‘একদম চুপচাপ থাকো, ভয় পেয়ো না।’ তাঁদের পেছনে এসে জিপটা কিছুক্ষণ দাঁড়াল। তারপর শোনা গেল এক হুংকার, ‘যাও, ভাগো!’

জিপটা ভোঁ করে বেরিয়ে গেল এবং গোমতী নদীর ওপরে একটি ব্রিজ পার হওয়ার সময় গুলি ছুড়ল। সেটা ফাঁকা গুলি ছিল, নাকি কাউকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া, তা বুঝলেন না আলী যাকের। শুধু বুঝলেন, এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন। 

সূত্র: আলী যাকের, দূরে কাছে স্বর্গ আছে, পৃষ্ঠা ৩৬-৩৭ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চাকরির নামে মিরপুর-শেওড়াপাড়ায় বাসায় ডেকে নারীর সঙ্গে ভিডিও ধারণের পর টাকা হাতিয়ে নিত ‘হানি ট্র্যাপ’ চক্র

সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নতুন বেতন নির্ধারণে কমিটি

দুস্থদের ৩৪ লাখ টাকা নিয়ে লাপাত্তা মোহনগঞ্জ সমাজসেবা কর্মকর্তা

এক ভারতীয়র কারণে যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধ হলো ট্রাকচালকদের ভিসা

সরকারি-আধা সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত সব প্রতিষ্ঠানের দপ্তর থাকবে সমন্বিত ভবনে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত