Ajker Patrika

আশ্চর্য সে দোয়াত!

সম্পাদকীয়
আশ্চর্য সে দোয়াত!

অনেক বয়স পর্যন্ত দেবেশ রায় স্পষ্ট করে কথা বলতে পারতেন না। তাই বাড়ির সবাই চেষ্টা করত, দেবেশ কী বলতে চাইছেন, তা বুঝে নিতে। শিল্পী হিরণ মিত্র একসময় মজা করে লিখেছিলেন, দেবেশ রায় ছাপার অক্ষরের মতো স্পষ্ট করে কথা বলেন। এই বলাকে তিনি নাম দিয়েছিলেন ‘দৃশ্যকথা’।

ঠিকভাবে কথা বলতে পারতেন না বলেই লেখায়ও এর ছাপ পড়েছে। সেই তোতলামিটা রয়ে গেছে লেখার মাঝেও—এমনটাই মনে করেন দেবেশ রায়। কিন্তু লেখালেখির কথা মনে হলেই তো দেবেশ রায়ের মনে পড়ে সেই আশ্চর্য কালির দোয়াতটার কথা। হাতেখড়ি দেওয়ার সময় দেবেশের দোয়াত-কলম হয়েছিল আর হয়েছিল লেখার খাতা।

দাদা দীনেশ আর দেবেশকে পড়াতে আসতেন জলিল মাস্টার—লুঙ্গি, লেসের কাজ করা পাঞ্জাবি আর টুপি পরে। দেবেশের হাতেখড়ির জন্য বাড়িতে আগে থেকে ছিল যে দোয়াত, তা প্রথমে ধুয়ে নিলেন জলিল মাস্টার। দেবেশের মনে হচ্ছিল, তিনি বুঝি ম্যাজিক দেখছেন।

সেই দোয়াতে মাস্টার মশাই পানি ভরলেন। তারপর দুটো বড়ি ছেড়ে দিলেন পানির ভেতর। ছেড়ে দেওয়ামাত্র পানির নিচে একটা নিলচে ধারা তৈরি হলো। সেই ধারা যেন সর্পিল গতিতে দোয়াতের তলার দিকে চলে যাচ্ছে। মাস্টার মশাই বললেন, ‘এ রকমই থাক, তুমি হাত দিও না।’

দেবেশের চোখ থেকে সেই নীল ধারা যেন সরে না। দোয়াতের তলায় যেখানে বড়ি দুটো পড়ে ছিল, সেই জায়গাটা ঘন নীল হয়ে গেছে। এবার নীল স্রোতটা ওপরের দিকে উঠছে সর্পিল হয়ে! এই যে ঘটনাটা ঘটছে, সেটা ঘটছে দেবেশেরই জন্য, ভাবা যায়!

দোয়াত-কলম তো আগেও দেখেছেন। দাদু লিখতেন, বাবা লিখতেন, মা লিখতেন। নোয়া জ্যাঠামশাই তো দড়িতে ঝোলানো দোয়াত আর কানে গোঁজা কলম নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চিঠি লিখে দিতেন। কিন্তু এগুলোর কোনোটার সঙ্গেই এই ঘটনার তুলনা হয় না। এই দোয়াত দেবেশের। এই কলম দেবেশের! 

সূত্র: দেবেশ রায়, জলের মিনার জাগাও, পৃষ্ঠা ১৬১-১৬৫

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত