Ajker Patrika

হায় রে মজার তিলের খাজা

মিলন উল্লাহ, কুষ্টিয়া
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১৭: ১৩
হায় রে মজার তিলের খাজা

‘হায় রে মজার তিলের খাজা,/ খেয়ে দেখলি না মন কেমন মজা;/ লালন কয়, বেজাতের রাজা হয়ে রইলাম এ ভুবনে...’।

অনেকেই বলেন, বাউলসম্রাট ফকির লালন সাঁই দেড় শ বছর আগে তিলের খাজা নিয়ে এমন কথা বলেছিলেন। এটা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও জনশ্রুতি থেকেই তিলের খাজা নিয়ে এমন গান চলে আসছে।

জানা যায়, অখণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশের সময়কালে তিলের খাজার প্রচলন ঘটে কুষ্টিয়ায়। ভারত-পাকিস্তান ভাগ হওয়ার আগে শহরের মিলপাড়ায় ও দেশওয়ালীপাড়ার পাল সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি পরিবার তিলের খাজা তৈরি শুরু করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে মিলপাড়ার আবদুল মজিদ, চাঁদ আলী, সাইদুল ইসলাম, ইদিয়ামিন, সরওয়ারসহ আরও কয়েকজন কারখানায় তিলের খাজা তৈরির ব্যবসা শুরু করে এই শিল্পের দেড় শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

দুধ, চিনি ও তিলের মিশ্রণে সম্পূর্ণ হাতে তৈরি খেতে দারুণ সুস্বাদু কুষ্টিয়ার তিলের খাজা। ক্রেতা আকৃষ্ট করতে নানা রকম হাঁকডাকের মাধ্যমে রেলওয়ে স্টেশন, বাসটার্মিনাল, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হতে দেখা যায় কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক অনটন আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হারিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে এই শিল্প। এরপর আবার নতুন করে মহামারির প্রভাব। সব মিলিয়ে চরম মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই পেশার মানুষ।

এখন মিলপাড়ায় বিখ্যাত ‘ভাই ভাই তিলের খাজা’ নামের একটি এবং ছেঁউড়িয়ার আখড়াবাড়ির পেছনে দুলাল হোসেনের একটি–এ দুটি মাত্র তিলের খাজার কারখানা টিকে আছে। এই কারখানা দুটির বয়সই প্রায় ৫০ বছর।

সব মৌসুমে রাতের বেলা তৈরি হয় তিলের খাজা আর দিনে বিক্রি হয়। তবে শীত মৌসুমের ৩ মাস প্রায় ২৪ ঘণ্টাই চালু থাকে কারখানাগুলো।

চিনি ও দুধ জ্বাল দিয়ে নির্দিষ্ট ঘনত্ব তৈরি হলে হালকা ঠান্ডায় জমাট বেঁধে চিনির মণ্ড তৈরি হয়। সেই মণ্ড গাছ বা বাঁশের সঙ্গে বিশেষভাবে টাঙিয়ে হাতে টানা হয়। মণ্ডটি হালকা বাদামি থেকে সাদা রঙে পরিণত হলেই কারিগর তাঁর নিপুণ হাতের টানে ভেতরের অংশ ফাঁপা করেন। পরে বিছিয়ে রেখে তা নির্দিষ্ট মাপে কাটা হয়। ওই কাটা অংশের ওপর খোসা ছাড়ানো তিল ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর করা হয় প্যাকেটজাত। এভাবেই তৈরি হয় তিলের খাজা। দেশে করোনাভাইরাসের প্রভাব শুরুর আগে একেকটি কারখানায় প্রতি রাতে প্রায় আড়াই শ কেজি তিলের খাজা তৈরি হতো।

দেশের অনেক কিছু বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের। চিনি ও তিলের দাম বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায় লোকসানের আশঙ্কায় অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন তিলের খাজা তৈরির কাজ।

কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ার মণ্ডলপাড়া এলাকার দুলাল হোসেন নামে তিলের খাজা কারখানার মালিক বলেন, ‘সারা রাত তৈরির পর খুব ভোরে ক্রেতা ও খুচরা বিক্রেতারা এখান থেকে খাজা কিনে নিয়ে বিক্রি করে।’

দরদাম

তিলের খাজা আকারভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। খুচরা এক প্যাকেট আকার অনুসারে ১০ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত