Ajker Patrika

জনপ্রিয়তাই কাল হলো

কুমিল্লা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২১, ১৩: ২২
জনপ্রিয়তাই কাল হলো

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তিনি প্যানেল মেয়রও ছিলেন। সামনের নির্বাচনেও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আভাস ছিল। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অবস্থানই তাঁর জন্য কাল হয় বলে মন্তব্য করছেন এলাকাবাসী।

কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হলেও পাশের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সালিস-দরবারসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশ নিতেন। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ন্ত্রণ করতেন এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি শাহালম। তিনি তাঁর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর সোহেলের আধিপত্য মেনে নিতে পারতেন না। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন শাহালম।

শাহালম (৩৫) নগরীর সুজানগর বউ বাজারের জানু মিয়ার ছেলে। এলাকায় একজন মাদক ব্যবাসায়ী ও চোরাকারবারি হিসেবে তিনি পরিচিত। তা ছাড়া জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে তিনি জড়িত।

কাউন্সিলর সোহেল মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১২ সালে প্রথমবার এবং ২০১৭ সালে দ্বিতীয়বার তিনি কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এদিকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কাউন্সিলর সোহেলের অবস্থানের খবর নিতে গিয়ে একটি ঘটনা সামনে উঠে আসে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৫ নভেম্বর রাতে। কুমিল্লা নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাথুরিয়া পাড়ায় এক নারীকে ইভটিজিং করাকে কেন্দ্র করে সুজানগর মিলন সমিতির সামনে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বউ বাজারে শাহালমের সহযোগী টিক্কাচর সুইপার কলোনির রফিক মিয়ার ছেলে সাব্বির পাথুরিয়া পাড়ায় এক নারীকে ইভটিজিং করেন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে তিনি পালিয়ে এসে সুজানগর মিলন সমিতির সামনে শাহালমের কাছে আশ্রয় নেন। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা এগিয়ে এলে শাহালম ও তাঁর সহযোগী জেল সোহেলের কাছে থাকা পিস্তল বের করে ফাঁকা গুলি ছুড়ে। পরে ভয়ে লোকজন চলে যান। পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে অস্ত্রধারীরা পালিয়ে যান।

এ বিষয়সহ এই সন্ত্রাসী দলের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে কাউন্সিলর সোহেল প্রায় প্রতিবাদ করে আসছিলেন। এমনকি ঘটনাটি সামাজিকভাবে সালিসি বৈঠকে সমাধান করার কথা ছিল।

ওই সময়ে গোলাগুলি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কাউন্সিলর সোহেল স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের বলেছিলেন, ‘শাহালম, সাব্বির ও জেল সোহেলের অত্যাচারে আমার ওয়ার্ডবাসী খুবই আতঙ্কের মধ্যে বসবাস করছেন। আমার ওয়ার্ডের মানুষ অনেক শান্তিপ্রিয়। কিন্তু সন্ত্রাস, মাদক, হত্যা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলাসহ একাধিক মামলার আসামিরা পরিবেশ নষ্ট করছে। তাঁরা এ অঞ্চলকে মাদক ব্যবসার আখড়া বানিয়ে ফেলছেন। এ বিষয়ে সামাজিকভাবে বসে তাঁদের বয়কট করা হবে।’

স্থানীয়রা জানান, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই ওয়ার্ডের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সঙ্গে বিরোধ চলছিল কাউন্সিলরের। তাঁদের বিভিন্ন অপকর্মের প্রতিবাদ করায় কাউন্সিলকে হত্যা করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে এ অঞ্চলে মাদক দাঙ্গা-হাঙ্গার বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। ফলে দিন দিন দুষ্কৃতকারীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ছিলেন। দীর্ঘ দিনের ক্ষোভ থেকে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে কাউন্সিলরকে হত্যা করে।’

আরেক বাসিন্দা রিপন মিয়া বলেন, ‘দুই বারের নির্বাচিত কাউন্সিল সোহেলের অধিক জনপ্রিয়তাই বিভিন্ন পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তাঁদের ইন্ধনে মাদক ও অস্ত্র কারবারিরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।’

পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘এই হত্যা মামলার ৪ নম্বর আসামি সুমনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে র‍্যাব। শিগগিরই অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত