Ajker Patrika

ডাল-চালের জিলাপিতে টক মিষ্টি, মুখে নিলে ভিন্ন স্বাদ

ইলিয়াস আহমেদ, ময়মনসিংহ
ডাল-চালের জিলাপিতে টক মিষ্টি, মুখে নিলে ভিন্ন স্বাদ

স্বাদে-মানে অনন্য ময়মনসিংহের ডাল-চালের জিলাপির কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। নিজ জেলা ছাড়িয়ে অন্য জেলাতেও এ জিলাপির চাহিদা তৈরি হয়েছে। এ জিলাপির ব্যতিক্রম দিক হচ্ছে 
টক-মিষ্টি। মুখে নিলেই পাওয়া যায় ভিন্ন স্বাদ। দীর্ঘ ৩০ বছর নগরীর জিলা স্কুল রোডে হোটেল মেহেরবানে এ জিলাপি তৈরি হচ্ছে। সারা বছর এর চাহিদা থাকলেও রোজা এলে বেড়ে যায় কদর। রোজার শুরু থেকে দৈনিক প্রায় ৪০ হাজার টাকার জিলাপি বিক্রি হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, ময়মনসিংহ নগরীতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টসহ ভাসমান দোকানে থরে থরে ইফতারসামগ্রী সাজানো থাকলেও ব্যতিক্রম টক-মিষ্টি জিলাপি। শহরের প্রায় বাসাতেই এ জিলাপি ছাড়া ইফতার হয় না। টক-মিষ্টি জিলাপিকে প্রাধান্য দিয়েই ইফতারের আয়োজন করে মানুষ। দোকানে অনেক ধরনের ইফতারসামগ্রী থাকলেও সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ডাল-চালের জিলাপি।

জানা যায়, প্রতিদিন ভোর থেকে জিলাপি তৈরি শুরু হয়, শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। জিলাপি তৈরির কর্মচারী রয়েছেন ২৭ জন। রোজার মধ্যে বৃদ্ধি করা হয়েছে কর্মচারী। ডাল ও চালের গুঁড়ো একসঙ্গে হালকা তেঁতুল গোলানো পানি মিশিয়ে গরম তেলের কড়াইয়ে ভাজা হয় টক-মিষ্টি এ জিলাপি। কোনো ধরনের কেমিক্যাল মেশানো হয় না এতে। রোজার সময় দুপুর থেকে জিলাপি লাইন ধরে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে কুলিয়ে উঠতে পারেন না মালিক ও কর্মচারীরা।

৬০ টাকা থেকে শুরু করে ২৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় এ জিলাপি। প্রতিদিন গড়ে ২৫০ থেকে ৩০০ কেজি জিলাপি বিক্রি হয়।

টক-মিষ্টি জিলাপি কিনতে আসা ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘এখানকার জিলাপি ময়মনসিংহের ইফতারের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে গেছে। অন্য কোথাও এ জিলাপি তৈরি হয় না বলে এখানে সব সময় ভিড় লেগে থাকে। অন্য রকম স্বাদ পাওয়া যায় এতে। বাসার প্রত্যেকে এ জিলাপি খুব পছন্দ করে। তাই দু-এক দিন পরপর এটি কেনা হয়।’

জামালপুরের বাসিন্দা হারিস উদ্দিন বলেন, ‘ময়মনসিংহে বোনের বাসায় বেড়াতে এসেছিলাম। আজ চলে যাচ্ছি। তাই ভাবলাম জিলাপি নিয়ে যাই। পরিবারের সবাই এ জিলাপি খুব পছন্দ করে।’ 
শহরের কোনো জিলাপির সঙ্গে স্বাদে ও মানে এর মিল নেই বলে জানিয়ে হোসনে আরা বেগম নামে এক নারী বলেন, ‘জিলাপি তৈরির কারিগরদের হাতের মধ্যে জাদু আছে। কারণ আমরাও অনেকবার বাসায় এ জিলাপি তৈরি চেষ্টা করেছি। কিন্তু এমন স্বাদ পাওয়া যায় না।’

৩০ বছর আগে ডাল-চালের জিলাপি বিক্রি শুরু করা জাকির হোসেনের বয়স এখন ৬০। ভিন্ন স্বাদের এ জিলাপির মহত্ত্ব নিয়ে তিনি জানান, ‘আগে তিনি জিলাপি তৈরির কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। ময়দা, আটা, ডাল ও বেসন দিয়ে জিলাপি তৈরি করতেন। এক দিন মনে মনে চিন্তা হলো ডাল-চালের গুঁড়ো দিয়ে জিলাপি তৈরি করলে কেমন হয়। মনের প্রশ্ন থেকে এটি তৈরি করা।

মানুষেরও এটি ভালো লেগে যায়। আস্তে আস্তে চাহিদা বাড়তে থাকে।’ 
জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে, এ জিলাপির চাহিদা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এর মান ধরে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রতিবার জিলাপি ভাজতে নতুন তেল ব্যবহার করা হয়। একবার ব্যবহার করা তেল দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা হয় না। এ কারণে জিলাপি খেয়ে সবাই প্রশংসা করেন। শহর কিংবা শহরের বাইরে আর কোনো শাখা নেই।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত