Ajker Patrika

‘প্রলয়’-এর আঘাত

সম্পাদকীয়
‘প্রলয়’-এর আঘাত

শনিবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের সামনে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাইক চালাচ্ছিলেন ‘প্রলয়’ গ্যাংয়ের কিছু সদস্য। অবশ্য অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তাঁরা প্রাইভেট কার চালাচ্ছিলেন। বাহন যা-ই হোক না কেন, যে কাণ্ডটি করলেন তাঁরা, তা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। চালানোর সময় সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের দিকে এলে অপরাধবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হুমায়ুনের গায়ে পানি লাগে। এতে হুমায়ুন এভাবে চালাতে নিষেধ করলে তাঁদের মাঝে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর তাঁরা আরও সদস্য জুটিয়ে হুমায়ুনকে বেধড়ক পিটিয়ে রক্তাক্ত করে সেখান থেকে পালিয়ে যান। হুমায়ুনের বন্ধুরা দ্রুতই এসে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ সেশনের একদল শিক্ষার্থী বানিয়েছেন প্রলয় গ্যাং। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের শিশু চত্বরের পাশে তাঁদের নিয়মিত আড্ডা ও মাদক সেবন চলে। শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে তাঁদের কার্যালয়। জুটিদের র‍্যাগিং, মাদক, ছিনতাই ও চাঁদাবাজি তাঁদের কর্মকাণ্ডের আওতায় পড়ে। তাঁদের এই দলে প্রতিটি হল থেকে বাছাই করে শিক্ষার্থী নেওয়া হয়। শর্ত—মারামরি করতে হবে, নেশা করতে 
হবে, বিভিন্ন সময় ঐক্যবদ্ধ থেকে ক্যাম্পাসে বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি করার মানসিকতা থাকতে হবে! পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের স্বার্থে দলছুট শিক্ষার্থীরাই এসব তথ্য দিয়েছেন।

ক্যাম্পাস এলাকার বিভিন্ন দোকানে প্রলয় গ্যাং ‘আইল্যান্ড’ নামের পানি বিক্রি করতে বাধ্য করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। নইলে দোকানদারদের সঙ্গে ‘ঝামেলা’ করে।  আগে যে ব্যক্তি ‘জীবন’ নামের পানি দিয়ে যেতেন ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে, তিনি এখন আর ক্যাম্পাস এলাকায় প্রবেশ করতে পারেন না প্রলয়ের হুমকির মুখে।

অভিযোগ আমলে নিয়ে কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। সে খুব ভালো কথা। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কেন এমন গ্যাং গড়ে উঠেছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে তো পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতি চলে। তবে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করে নিতে হয় যে ছাত্ররাজনীতির চর্চা এখন আর আগের মতো হয় না; বরং ক্ষমতা ও অর্থ প্রদর্শনের চর্চাকেই অনেকে রাজনীতি ভেবে বসে আছেন। তাই শিক্ষার চেয়ে অনেকের কাছে রাজনীতিটাই হয়ে উঠছে আকর্ষণীয়।

অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতিতে পদ পেতে প্রয়োজন হয় অর্থের। সেই অর্থ জোগাড় করতে অনেকেই পেশিশক্তি ব্যবহার করে। সেই অর্থ কাজে লাগে রাজনৈতিক পদ পেতে। হতে পারে প্রলয়ের সদস্যরা ছিনতাই, চাঁদাবাজি করেন কিংবা কোনো পানি বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থের জোগাড় করেন। তাঁরা নিশ্চয়ই অগ্রজদের কাছ থেকে এসব শিখেছেন। কিংবা দেখছেন দেশের প্রায় প্রতি ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজেরা এভাবেই এগিয়ে থাকে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রজ হয়ে তাঁরা যে র‍্যাগিং সংস্কৃতির চর্চা করছেন, সেটা অনুজদের জন্য রীতিমতো এক ধাক্কা। এই অনুজরাও একদিন তাদের অনুজদের সঙ্গে একই কাজ করবে। প্রলয়ের এই আঘাত রুখতে কি শিক্ষকেরা কিছু করতে পারেন না? নাকি এ ক্ষেত্রে ‘ক্ষমা মহৎ ধর্ম’ বলে ঘুমিয়ে আছেন?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পাইপলাইনে জ্বালানি পরিবহন: ৩৪ হাজার লিটার ঘাটতি যমুনার প্রথম পার্সেলে

চিকিৎসক হওয়ার আগেই শীর্ষ সবার শীর্ষে

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে লতিফ সিদ্দিকী অবরুদ্ধ, নেওয়া হলো পুলিশি হেফাজতে

রূপপুর পরমাণু কেন্দ্র পরিদর্শনের পর যা জানাল আইএইএর বিশেষজ্ঞ দল

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী, ঢাবি শিক্ষক কার্জনসহ ১১ জন ডিবি হেফাজতে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত