Ajker Patrika

রাতে পাহাড় কাটার মহোৎসব

কসবা (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ৫৮
রাতে পাহাড় কাটার মহোৎসব

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটা চলছে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত একের পর এক পাহাড় কেটে সাবাড় করছে একটি চক্র। এদিকে পাহাড় কাটার ফলে হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। মাটি হারাচ্ছে তার স্বাভাবিক স্থায়িত্ব।

জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামে পাহাড় কেটে সে মাটি দিয়ে নিচু জমি ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা তথ্যটি জানাতে গত শনিবার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুল আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও ব্যর্থ হয়। পরে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল দিলে সেখান থেকে জরুরি তথ্য পেয়ে কসবা থানা-পুলিশ রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে যায়। তখন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জড়িতরা ঘটনাস্থলের একটি টিলার আড়ালে মাটি কাটায় ব্যবহৃত খননযন্ত্র লুকিয়ে রাখেন।

অপর দিকে আটটি ট্রাক্টর বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখে চালকেরা পালিয়ে যান। পরে পুলিশ জয়নগর বাজারের একটি দোকানে গিয়ে মাটি না কাটতে সাবধান করেন।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম মধুপুর এলাকায় প্রবাসী মাসুদ মিয়ার ৮৫৮ দাগের পাহাড় কেটে জয়নগর বাজারের পাশে নিচু জমি ভরাটের কাজ চলছে। একই গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম ও বোরহান উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে কয়েক দিন ধরে রাতে পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন। এই মাটি দিয়ে নিচু ফসলি জমি ও জলাশয় ভরাট করা হচ্ছে এবং অতিরিক্ত মাটি বিক্রি করা হয়।

পাহাড় কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে গত রোববার জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পরিদর্শক জুবায়ের হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

কিন্তু ওই রাতেই আবারও মাসুদ মিয়ার পাহাড়ের মাটি কাটতে থাকে। ছয়টি ট্রাক্টর দিয়ে মাটি সরাতে থাকলে জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দেওয়া হয়। পরে রাত সোয়া ২টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে শ্রমিকেরা দ্রুত পালিয়ে যান।

এ বিষয়ে মাটি কাটায় জড়িত জাহাঙ্গীর ও বোরহানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা জানান, প্রবাসী মাসুদ তাঁদের আত্মীয়। এ জন্য রাতে পাহাড়ের মাটি কেটে নিয়ে তাঁদের নিজস্ব ফসলি জমি ভরাট করা হয়। উপজেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করে মাটি কেটেছেন বলেও জানান তাঁরা। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাটি কাটার বিষয়ে অনুমতি দেখাতে পারেননি তাঁরা।

এদিকে একই এলাকার মহসিন মিয়া নামের আরেক ব্যক্তির দুই বিঘা পাহাড়ের মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক ও তাঁর বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে।

পাহাড় কাটার বিষয়ে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কী না—এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহসিন মিয়া বলেন, ‘পাহাড় কাটার সব প্রশাসনিক দায়-দায়িত্ব নিয়েছেন শিক্ষক আমজাদ হোসেন ও তাঁর বড় ভাই মাটি ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেন। তাঁদের দুটি মাটি কাটার যন্ত্র রয়েছে। তাঁরা আমার ছোট্ট একটি জমি ভরাট করে দিয়ে বাকি মাটি তাঁরা নিয়ে গেছেন।’

এ বিষয়ে শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘পাহাড়ের মালিক মহসিন মিয়াকে আমি চিনি না। তিনিও আমাকে চেনেন কি না জানি না। আমি শিক্ষকতা করি। আমি পাহাড়ের মাটি ব্যবসায় জড়িত—এ অভিযোগ সত্য নয়।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কসবা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুন্সি রুহুল আমিন টিটু বলেন, ‘প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় পাহাড় কেটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নষ্ট করে বিরানভূমিতে পরিণত করা হচ্ছে। প্রশাসনের উদাসীনতা এ জন্য দায়ী। দ্রুত জড়িতদের আইনের আওতায় আনা উচিত। না হলে সব পাহাড় এরা খেয়ে ফেলবে।’

কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আলমগীর ভূঁইয়া বলেন, ‘জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর নির্দেশনা পেয়ে দুই দিন রাতেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাটি কাটায় জড়িতরা পালিয়ে যায়।’

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সনজিব সরকার বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়ে আবেদন জানালেও কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলে জড়িতের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাসুদ উল আলম বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। কোনো অবস্থাতেই পাহাড় কাটার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

অরকার আক্রমণে তরুণী প্রশিক্ষকের মৃত্যু, ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে যা জানা গেল

জি এম কাদেরের সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও মামলা প্রত্যাহার

ভারতকে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি, যা বলল যুক্তরাষ্ট্র

প্লট–ফ্ল্যাট বরাদ্দে সচিব, এমপি, মন্ত্রী, বিচারপতিসহ যাঁদের কোটা বাতিল

জর্ডান-মিসরকে নিয়ে বৃহত্তর ইসরায়েল প্রতিষ্ঠা করতে চান নেতানিয়াহু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত