Ajker Patrika

খাই খাই স্বভাব

সম্পাদকীয়
খাই খাই স্বভাব

কীভাবে পাল্টাবে মানসিকতা? খাই খাই স্বভাব পরিবর্তিত হবে কী করে? সুযোগ পেলেই মানুষকে ঠকানোর রোগটা সারবে কী করে? নীলফামারীর ডিমলার দুস্থ নারীরা তো আর সরকারপ্রধানের কাছে গিয়ে বলতে পারবেন না, কী অনাচার চলছে তাঁদের সঙ্গে! এই অনাচার করা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। এই অপকর্ম করার জন্য কারও কোনো লজ্জা নেই; বরং এটাকে একধরনের অধিকার বলেই মনে করে থাকেন ক্ষমতায় থাকা প্রতিনিধিরা।

খুব সহজ একটা ব্যাপারকে এমন ঘোলাটে করা হলো কেন, তার উত্তর খুঁজতে বেশি দূরে যেতে হবে না। মূলত গরিবের অধিকারের ওপর নিজের লোভকে চাপিয়ে দিয়ে কাজ হাসিলের চেষ্টা করছেন ডিমলার এই সরকারি লোকগুলো।

বিশদভাবে দেখা যাক বিষয়টি। ডিমলা ইউনিয়ন পরিষদে ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট নামে একটি কর্মসূচি রয়েছে। শুধু সেখানে কেন, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের দুস্থ নারীরা সরকারের কাছ থেকে মাসে বিনা মূল্যে ৩০ কেজি চাল পান। দুস্থ বলেই সরকারের পক্ষ থেকে এই সহযোগিতা করা হচ্ছে। এ জন্য সরকারের 
প্রশংসা করা যায়।

কিন্তু বাস্তবে কী হচ্ছে? বাস্তবে ঝুনাগাছ চাপানী ইউপিতে দায়িত্বে থাকা আফাজউদ্দীন দফাদার চাল দেওয়ার সময় প্রত্যেক দুস্থ নারীর কাছ থেকে ১০০ টাকা করে আদায় করছেন। কেন করছেন? কারণ এটা নাকি ইউপি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ। কেন ইউপি কর্তৃপক্ষ এমন নির্দেশ দিয়েছে? কারণ জানার কী আছে, ব্যাপারটা তো পানির মতো পরিষ্কার—এই দুস্থ নারীদের কাছ থেকে বাড়ির ট্যাক্স নিতে হবে না? প্রশ্ন উঠতে পারে, দুস্থদের বিনা মূল্যে চাল বিতরণের মধ্যে আবার বসতবাড়ির ট্যাক্সের প্রসঙ্গ এল কী করে? এরও উত্তর তৈরি করে রেখেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেছেন, ‘বসতবাড়ির ট্যাক্স বাবদ সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়েছেন চৌকিদারেরা।’ এ রকমভাবে টাকা নেওয়ার কি নিয়ম আছে? ‘না, নিয়ম নেই।’ হ্যাঁ, আর কেউ নন, স্বয়ং ইউপি চেয়ারম্যান এ কথাই বলেছেন, ‘নিয়ম নেই।’ কিন্তু আগেভাগে দুস্থ নারীদের বলে দেওয়া ছিল, কড়কড়ে ১০০ টাকা নিয়ে আসতে হবে। এটাও ইউপি চেয়ারম্যানের কথা; অর্থাৎ দফাদার নিজে থেকে অবৈধভাবে টাকা আদায় করছেন না, ইউপি চেয়ারম্যানের আশীর্বাদ আছে তাঁর মাথার ওপর।

নির্দয়তা আর ধৃষ্টতা কতটা, সেটা কি এখনো বোঝা যাচ্ছে না? এ ধরনের মানুষের কারণে বিপদে পড়ে সরকার। তাঁদের পরিচয় যেহেতু সরকারি লোক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত, তাই তাঁদের এই অপকর্মের দায়ভার গিয়ে পড়ে সরকারের ওপরই। অথচ কর্মসূচির ৩০ কেজি চাল পাওয়ার সময় কোনো টাকার লেনদেন করতে বলেনি সরকার। উপজেলার মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাও জানিয়ে দিয়েছেন, দুস্থ নারীদের চাল নেওয়ার সময় কোনো ধরনের ফি দেওয়ার নিয়ম নেই। সব ইউপি চেয়ারম্যানকেই সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এখন যদি কোনো ইউপি চেয়ারম্যান অবৈধ অর্থ আদায় করেন, তাহলে তার দায় তাঁর। দেখাই তো যাচ্ছে, ইউপি চেয়ারম্যান অর্থ আদায় করেছেন। এবার তাঁর শাস্তি কী হবে, সেটাই তো জানতে চাইবে সবাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত