Ajker Patrika

জোসী কাবাব

জসীমউদ্‌দীন
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ১০: ৩৬
জোসী কাবাব

জোড়া সাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে একদিন বুড়ো বয়সে অবনীন্দ্রনাথ বললেন, ‘আয়, একটা রান্নার ক্লাস খোলা যাক। তোরা সব শিখবি। তারপর দেখিস, এক একজনের হাত থেকে এক এক রকমের রান্না বেরোচ্ছে, সব নিজের মতো।’

বাচ্চারা তাতে খুব আনন্দ পেল। একতলার দক্ষিণের বারান্দায় দোলনার বাগানের পাশে শুরু হলো ক্লাস। অবনীন্দ্রনাথ স্টোভ জ্বেলে রান্নার প্রথম পাঠ দিলেন। সেটা ছিল শুধুই আলুভাজা। যার যেমন ইচ্ছে আলু কেটে ফেলুক–এই হুকুম হলো। কেউ চাকা চাকা করে, কেউ সরু সরু, কেউ গোল গোল, যে যার মতো আলু কাটল। তারপর এই আলু দিয়েই হলো দেশি আলুভাজা, ফরাসি আলুর ‘সোতে’, ইংলিশ চিপস, কারওটা হলদে, কারওটা সাদাটে। সে এক কাণ্ড বটে!

সে সময় ঠাকুরবাড়ির শিশুরা একটা ক্লাব করতে চাইছিল। সে ক্লাবে একজন সভাপতি থাকবেন। জসীমউদ্‌দীন সেই ক্লাবের সভাপতি প্রার্থী। শর্ত ছিল, ভালো করে না খাওয়ালে জসীমউদ্‌দীনকে তারা ভোট দেবে না। জসীমউদ্‌দীন বললেন, ‘আমি তো গেঁয়ো মানুষ, রাজভোগ দিতে পারব না। তবে দেখি, কী করে পরিতুষ্ট করা যায়।’

বাচ্চাদের নিয়ে বাজারে গিয়ে ঘি, তেল, চিনি, ময়দা, সুজি, আলু, কিশমিশ, বাদাম সব কিনলেন তিনি। তারপর রান্না করলেন। রান্না হলো তোফা, কিন্তু তাতে মন ভরেনি বাচ্চাদের। কারণ, বাচ্চাদের মতে, ক্লাবের সভাপতি হওয়ার মতো খাওয়ানো হয়নি।

অবনীন্দ্রনাথ তা দেখলেন। বললেন, ‘আনাজপাতি কিছু বেঁচেছে?’

হ্যাঁ, বেঁচেছিল। ঘোষণা করলেন, ‘কাল আবার হবে ভোজ। বাড়তি যা আছে, তা দিয়েই আমি রাঁধব জোসী কাবাব।’

সুজি, বাদাম আর যা যা ছিল তাই দিয়ে প্রত্যেকের জন্য তৈরি হলো জোসী কাবাব। বাচ্চারা গরম-গরম জোসী কাবাব খেয়ে তারিফ করতে লাগল। এবারে আর জসীমউদ্‌দীনকে সভাপতি পদে ভোট দিতে কেউ আপত্তি করল না।

সূত্র: মোহনলাল গঙ্গোপাধ্যায়, দক্ষিণের বারান্দা, পৃষ্ঠা ১১৮-১২০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত