Ajker Patrika

স্নেহস্পর্শ

সম্পাদকীয়
স্নেহস্পর্শ

পূর্ব পাকিস্তানে। দেশে ৯২ (ক) ধারার শাসন চলছে; অর্থাৎ প্রাদেশিক সরকার ভেঙে দিয়ে চলছে কেন্দ্রীয় শাসন। বেলাল চৌধুরী থাকেন মহকুমা শহর ফেনীতে। ফেনীর গোয়েন্দারা তরুণ বেলালকে রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে গেল। চলল জিজ্ঞাসাবাদ। এরপর তাঁকে চালান করে দেওয়া হলো জেলা সদরের কোর্টের জেলখানায়। সেখানে তিন মাস থাকার পর কোমরে দড়ি বেঁধে পাঠিয়ে দেওয়া হলো কুমিল্লা জেলে। বেলাল ভাবতেন, জেলখানায় বদমাশ, খুনি, ডাকাতেরাই থাকে। কিন্তু সেখানে রাজবন্দীদের দেখে বুঝলেন, এটা ভালো মানুষের জায়গাও।

কুমিল্লা কারাগার থেকে আবার কোমরে দড়ি বেঁধে ঢাকায় পাঠানো হলো তাঁকে। ভোরবেলা ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে এসে নামলেন তিনি। সেখানে একতলা-দোতলা মিলিয়ে ছিল ২ নম্বর খাতা। তারই নিচতলায় ঠাঁই হলো তাঁর। সেখানে জ্ঞান চক্রবর্তী, অনিল মুখার্জি, রতন সেনসহ অনেক কমিউনিস্ট নেতার দেখা পেলেন।

জেলখানায় মুসলমান বন্দীদের একটা বাড়তি সুবিধা ছিল। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করার জন্য পার্শ্ববর্তী একটা খালি ওয়ার্ডে হাজির হতেন কয়েদিরা। মৌলভি সাহেব আসতেন বাইরে থেকে। শেখ মুজিবুর রহমানও তখন বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন। নামাজের জায়গায় বেলাল চৌধুরীর দেখা হয়ে যায় তাঁর সঙ্গে। আগে বহুবার শেখ মুজিবকে দেখেছেন তিনি ইয়ার মোহাম্মদ খানের বাড়িতে। কিন্তু কথা হয়নি। শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা হলে তিনি বেলাল চৌধুরীর লালচে চুলে হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, ‘এইডারে আবার ক্যাডা ধইরা আনছে? হায়রে আইয়ুব খান, তোমরা নাক টিপলে দুধ বেরোয় যে ছেলের, তারেও ধইরা আনছ, আল্লায় তোমাগো বিচার করব।’ যে কদিন দেখা হয়েছে, বঙ্গবন্ধু সে কদিনই বেলালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছেন।

জেলখানাতেই বঙ্গবন্ধুর প্রথম ও শেষ স্নেহস্পর্শ পেয়েছিলেন বেলাল। এমনকি জেল থেকে মুক্ত হয়ে চলে যাওয়ার পরও ঈদের দিন বাড়ি থেকে খাবার পাঠাতে ভোলেননি বঙ্গবন্ধু। 

সূত্র: বেলাল চৌধুরী, নিরুদ্দেশ হাওয়ায় হাওয়ায়, পৃষ্ঠা ৯৬-১০৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত