Ajker Patrika

আহ! আয়ান!

সম্পাদকীয়
আহ! আয়ান!

শিশু আয়ানের মৃত্যু আমাদের সেই চিরপরিচিত প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে—‘দায়িত্বে অবহেলা’। মানুষকে মানবিক হতে হবে—এ কথাও যদি মনে করিয়ে দিতে হয়, তাহলে তার চেয়ে লজ্জার বিষয় আর কী হতে পারে?

বেশ কিছু পেশা আছে, যে পেশায় দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই। মানুষের জীবন নিয়ে কারবার যাঁদের, তাঁরা অনেক বেশি মানবিক হবেন, সেটাই কাম্য। চিকিৎসাবিজ্ঞান তেমনই একটি পেশা। জীবন বাঁচানোই চিকিৎসকদের দায়িত্ব। হিপোক্রেটিসের শপথের কথা মনে করিয়ে দিতে হয় সেই সব চিকিৎসককে, যাঁরা চিকিৎসা আর ব্যবসাকে গুলিয়ে ফেলেন। মানুষের জীবনের কোনো মূল্য দেন না।

দায়িত্বের কথা বলতে হলে বলতে হয়, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীরও দায়িত্ব কম নয়। সাংবাদিকের ভুল তথ্য, প্রকৌশলীর ভুল হিসাব-নিকাশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ক্ষমতার অপব্যবহার ও অমানবিকতার বিকাশ ঘটাতে পারে। এ রকম আরও কিছু পেশা আছে, যার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জীবন সরাসরি জড়িত। সিন্ডিকেট আর ঘুষ-বাণিজ্যের কথা তো বাদই দিলাম। অনৈতিকতার ডিপো হয়ে সেগুলো দিনে দিনে আরও বেশি শক্তিশালী হচ্ছে। আলোচনা সেদিকে না নিয়ে আয়ানের মর্মান্তিক মৃত্যুর দিকেই বরং নিবিষ্ট হওয়া যাক।

হাসতে হাসতে ৫ বছর ৯ মাস বয়সী যে শিশুটি অপারেশন থিয়েটারে গিয়েছিল, কেন চিকিৎসকের অবহেলায় তার মৃত্যু হবে—এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া অতি জরুরি। চিকিৎসকদের কাছে প্রত্যেক রোগীই আলাদা যত্নের দাবি করে। খতনা করাতে গেলে একটি শিশুর জন্য কতটা অ্যানেসথেসিয়া দিতে হবে, তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক জানবেন না, এ হতে পারে না। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, অপারেশন থিয়েটারে শিশুকে রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্লাস নেওয়া হয়। শিশুটির দিকে যেটুকু মনোযোগ দেওয়ার দরকার ছিল, সেটুকু দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সুস্থ-সবল একটি শিশু কেন মৃত্যুর মুখোমুখি হলো, তা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। মানুষের জীবনের প্রশ্ন যেখানে, সেখানে অবহেলার কোনো সুযোগ নেই।

এবার ভিন্ন আরেকটি আলোচনা। যে হাসপাতালে সুন্নতে খতনা করানোর জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল শিশু আয়ানকে, সেই হাসপাতালের নাকি নিবন্ধনই নেই! চিকিৎসা কি এতটাই লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে যে কেবল মুনাফার দিকেই নজর থাকে বেশি, রোগীর দিকে নয়? যদি নিবন্ধন ছাড়াই হাসপাতালের কার্যক্রম চলতে পারে, তাহলে তো যে কেউ যেকোনো মুদি দোকানকেই হাসপাতাল বানিয়ে চিকিৎসা দিতে শুরু করতে পারে। কীভাবে নিবন্ধন ছাড়া দিনের পর দিন হাসপাতাল চলতে পারে?

আয়ান আর ফিরবে না। কিন্তু এই দুর্বৃত্তপনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তো দুর্বৃত্তের দল একই ধরনের অঘটন ঘটিয়েই যাবে। আয়ানের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনায় যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে। আর নিবন্ধন ছাড়া যেন কোনো হাসপাতালই কাজ করতে না পারে, সেটাও দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংসে ভারত-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এই বিজয় বাংলাদেশি আন্টিদের বিজয়: জোহরান মামদানি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত