Ajker Patrika

আরেক যুদ্ধ

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০৯: ০১
আরেক যুদ্ধ

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ১৯৭১ সালের এপ্রিলের শেষে বুলবুল মহলানবীশরা এসে পৌঁছালেন আগরতলার কৃষ্ণনগরে। আশ্রয় নিলেন ধীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বাড়িতে। ১৯ সদস্যের বিশাল পরিবারকে আশ্রয় দিলেন তিনি।

কিছুদিন থাকার পর ১৯ সদস্যের পরিবারের এক এক জন এক এক দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলেন।

তিন দিন ট্রেন জার্নি করে বুলবুল গেলেন বহরমপুরে। এরপর মধ্যপ্রদেশের রায়পুরে। তারপর কাঁচরাপাড়া। একদিন সেজ মামা একটা পেপার কাটিং দেখালেন বুলবুলকে। সেটা ছিল জুন মাসের শুরু। সেই পেপার কাটিংয়ে লেখা: আকাশবাণী কলকাতার ‘পূর্বাঞ্চলীয় শ্রোতাদের জন্য’ অনুষ্ঠানে অডিশন নেওয়া হবে। ইডেন গার্ডেনের আকাশবাণী ভবনে ছুটলেন তিনি। অডিশন দিয়ে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমি কি ফেল করেছি?’

পরীক্ষক বিমল ভূষণ হেসে বললেন, ‘সবাই জিজ্ঞেস করে পাস করেছি কি না, আর তুমি জিজ্ঞেস করছ ফেল করেছ কি না? কী মনে হচ্ছে?’ অন্য পরীক্ষক অরুণ দত্ত বললেন, ‘তুমি তো খুব ভালো গান কর। যে গানগুলো গাইতে ভালো লাগে, এ রকম ৮-১০টা গান খুব ভালো করে প্র্যাকটিস করে আসবে।’

কিন্তু রেকর্ডিংয়ের দুদিন আগে থেকে জ্বর-সর্দিতে গলা বসে গেল বুলবুলের। কাশতে কাশতে যেন গলার রগ ছিঁড়ে যাচ্ছে। কোনো ওষুধই কাজ হচ্ছে না। এই অবস্থায়ই চলে গেলেন আকাশবাণীতে। অনুরোধ করলেন, কয়েকটা দিন পর রেকর্ডিং করা যাবে কি না। বিমল ভূষণ বললেন, ‘ঠিক আছে, একটা গান করো। যদি ভালো না হয়, তবে আরেক দিন করব।’

তারপর চায়ের জন্য তিনি দুটো কাপ দিতে বললেন। পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটা কৌটো বের করে শিকড়ের মতো কিছু জিনিস দিয়ে বললেন, ‘খাওয়ার পর এটা মুখে রাখবি।’

এবং কী আশ্চর্য! গান গাওয়ার সময় কাশি গেল উবে, গলা গেল খুলে! রেকর্ডিং শুরু হলো।

এরপর কী করে তিনি যোগ দিলেন রূপান্তরের গানের দলে, সে হলো এই কাহিনিরই সম্প্রসারণ।

সূত্র: বুলবুল মহলানবীশ, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ইতিহাস, পৃষ্ঠা: ১১৫-১১৮

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত