Ajker Patrika

দেবিকারানী

সম্পাদকীয়
দেবিকারানী

১৯৭৫ সালের জানুয়ারি মাসে আবদুল আহাদ বাংলাদেশ থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদলের হয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন সফরে যান। বাকি চারজন ছিলেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, মীর আনোয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, চিত্রশিল্পী আবদুর রাজ্জাক। এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ঢাকায় একটি আর্ট কমপ্লেক্স তৈরি করাতে সোভিয়েত ইউনিয়নকে রাজি করানো।

মস্কোতে অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। তবে একের পর এক ব্যালে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল তুলনারহিত। সারভান্তেসের লেখা ‘দোন কিখোতে’ ব্যালে দেখা হলো ক্রেমলিনের কংগ্রেস হলে। বলশয় থিয়েটারে দেখলেন সোয়ান লেক। গোর্কি থিয়েটারে দেখলেন গোগলের ‘ডেড সোল’।

মস্কোয় সাত দিন থাকার পর প্রতিনিধিদলটি গিয়েছিল লেনিনগ্রাদে। নেভা নদীর ধারে এ শহরটিতেই রয়েছে এরমিতাশ, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় হেরমিটেজ। বিশাল এ প্রাসাদটি নামকরা চিত্রকরদের চিত্রকলায় ঠাসা। রাশিয়ার সেরা শিল্পী এবং পৃথিবীর সেরা শিল্পীদের আঁকা অরিজিনাল ছবিগুলো দৃষ্টি কাড়ে।

হেরমিটেজে ঘোরার সময়ই দেখা হলো দেবিকারানীর সঙ্গে। দেবিকা! বোম্বে টকিজের দেবিকা! সে বহু আগে, ১৯৪১ সালে দেবিকার সঙ্গে দেখা হয়েছিল আবদুল আহাদের। তখন আহাদের পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর বয়স। তখনকার পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা যুবকের সঙ্গে এখনকার ওভারকোট পরা প্রৌঢ়কে কীভাবে মেলাবেন দেবিকা? আহাদও নিজের পরিচয় দিলেন না। শাড়ি পরা দেবিকারানী বললেন, ‘নিচের তলায় আমার শ্বশুর, অর্থাৎ নিকোলাই রেরিখের ছবির একটি প্রদর্শনী হচ্ছে। আপনারা দেখে যাবেন।’

দেবিকারানী বিয়ে করেছেন নিকোলাই রেরিখের ছেলে স্ভেতোস্লাভ রেরিখকে। নিকোলাই রেরিখের আঁকা হিমালয় সিরিজ বিশ্ব চিত্রকলার এক অমূল্য সম্পদ। বহু দিন হিমালয়ের কাছাকাছি বসবাস করেছিলেন এই দার্শনিক-শিল্পী।

স্ভেতোস্লাভও বাবার দেখানো পথ ধরে শিল্পী হয়েছেন। এই দম্পতি বছরের ছয় মাস থাকেন কুলুতে, ছয় মাস বেঙ্গালুরুতে। দেবিকারানীর বয়স হয়েছে। আগের সেই মানুষটাকে চেনা যায় না। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আবদুল আহাদ। আর দেখলেন, মানুষ বুড়ো হয়ে যায়, কিন্তু চিত্রকলা থাকে আজীবন জীবন্ত।

সূত্র: আবদুল আহাদ, আসা যাওয়ার পথের ধারে, পৃষ্ঠা ১৯১-১৯৩ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত