সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের। কিন্তু তারপরেও দাঙ্গা থেমেছে কি? দুই বঙ্গের কোনো বঙ্গেই থামেনি। সাম্প্রদায়িকতারও অবসান হয়নি। শেষ পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বন্ধন ছিন্ন করে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তারপরও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটেছে কি?
না, ঘটেনি। কেবল যে মানসিক সাম্প্রদায়িকতা রয়ে গেছে তা নয়, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনও ঘটেছে। ২০০১-এর সাধারণ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু স্থানে নানা রকম নিপীড়নের খবর আমাদের লজ্জিত করেছে। সম্পত্তি দখল, নারী ধর্ষণ সবকিছুই ঘটেছে। এবারের শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যেটি ঘটল, সেটা তো অতীতের ঘটনাগুলোকে কেবল অতিক্রম নয়, ম্লান করে দিয়েছে। কুমিল্লা থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছে। এ লজ্জা রাখব কোথায়?
কাজেই সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটা যে কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক, সেটা আমরা অবশ্যই জানি। না জানার কারণ নেই। সাম্প্রদায়িকতাকে চিনিও বটে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে যে কী, তা সব সময় খেয়াল করি না। কেন ঘটছে তা-ও বুঝি না। আমরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কথাই বলছি। এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়। রক্তপাত ঘটে। আমাদের দেশে যেমনটা ঘটেছে।
কিন্তু আমাদের দেশে তো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে একত্রে বসবাস করেও এসেছে। হিন্দু কৃষক ও মুসলমান কৃষকের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেনি। তারা একে অপরকে উৎখাত করতে চায়নি। নদীতে হিন্দু জেলে ও মুসলমান জেলে একসঙ্গে মাছ ধরেছে। তাঁতিরা তাঁত বুনেছে। সাধারণ মানুষ একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদের আজান একসঙ্গে মিশে গেছে। মানুষ একই পথ ধরে হেঁটেছে, একই বাজার-হাটে গিয়ে কেনাবেচা করেছে, থেকেছে একই আকাশের নিচে। কে হিন্দু, কে মুসলমান তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি, নাক সিটকায়নি। তাহলে? সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? তৈরি হলো কীভাবে? কেন?
শুধু করল দুই দিকের দুই মধ্যবিত্ত–হিন্দু মধ্যবিত্ত ও মুসলিম মধ্যবিত্ত। ব্রিটিশ যুগেই এ ঘটনার সূচনা। তার আগে সম্প্রদায় ছিল, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মধ্যবিত্ত শিক্ষায় ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্তের তুলনায় অন্তত পঞ্চাশ বছর এগিয়ে ছিল। মুসলিম মধ্যবিত্ত দেখল, জায়গা তেমন খোলা নেই, অন্যরা দখল করে নিয়েছে। শুরু হলো দুই পক্ষের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যারা দখল করে রেখেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। শাসক ব্রিটিশরা এ ব্যাপারে দুই পক্ষকেই উসকানি দিল, যাতে তাদের রেষারেষিটা আরও বাড়ে। বাড়লে ব্রিটিশের সুবিধা, কেননা ঝগড়াটা তখন শাসক-শাসিতের থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে হিন্দু-মুসলমানের।
ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেই সংগ্রামে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেনি, পারেনি ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধের কারণে। অবিভক্ত বঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে দুই সম্প্রদায়কে কাছে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন দাশ কিছুটা এগিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে চাকরির সুযোগ-সুবিধা অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগিতে তাঁরা সম্মত হন। এই চুক্তি তৈরি হয় ১৯২৩-এ, এর দুই বছর পর চিত্তরঞ্জন পরলোক গমন করেন এবং বলাই বাহুল্য ওই চুক্তি মোটেই বাস্তবায়িত হয়নি, বরং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, একের পর এক দাঙ্গা ঘটেছে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মূল কারণ দুই মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্ব, যাতে ব্রিটিশের উসকানি খুব কাজে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ওপর থেকে নিচে নেমেছে। নিচ থেকে ওপরে ওঠেনি।
চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর বাংলায় সর্বভারতীয় রাজনীতির অবাধ প্রবেশ ঘটে। ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলত, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি ছিল হিন্দুপ্রধান প্রতিষ্ঠান। গান্ধী নিজে অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, কিন্তু তিনি ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে চাননি। ফলে ধর্মীয় ধ্বনি তুলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজটা মোটেই বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। কংগ্রেসে কট্টর সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন লোকেরা ছিল এবং তারাই শেষ পর্যন্ত মূল শক্তি হয়ে ওঠে, পরে তারা গান্ধীকে পর্যন্ত হত্যা করে। ওদিকে মুসলিম লীগ তো মুসলিমদের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গড়ে উঠেছে, তার নেতা জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, অর্থাৎ ভারতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ভিন্ন ভিন্ন জাতি এই মতবাদের ওপর তাঁর রাজনীতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন। কংগ্রেস ও লীগ উভয়ের রাজনীতিই হয়ে দাঁড়াল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
ভারতবর্ষ ভাঙল, বাংলাও দুই টুকরো হলো, মূল কারণ ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধ এবং সেই সঙ্গে ব্রিটিশের উসকানি। কিন্তু তারপরেও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটল না। অবসান হবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। কেননা, ভারত হয়ে দাঁড়াল হিন্দুপ্রধান এবং পাকিস্তান মুসলিমপ্রধান। দুই রাষ্ট্রে দুই সম্প্রদায়ের প্রাধান্য এমন প্রবল যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে সংখ্যাগুরুর সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হবে, এটা মোটেই সম্ভব ছিল না। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার পূর্বতন যে ভিত্তি ছিল, সেটা আর রইল না। দ্বন্দ্বের শেষ হলো। কিন্তু তবু যে সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়ে গেল না, তার কারণ কী? কারণটা হলো বৈষয়িক লালসা। আরও স্পষ্ট করে বললে সম্পত্তির লোভ। সম্পত্তি বলতে এ ক্ষেত্রে জমি, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরি, সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই বোঝাবে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যালঘুদের উৎখাত করে তাদের সম্পত্তি দখল করতে তৎপর হয়ে উঠল। আসলে এ হচ্ছে দুর্বলের ওপর প্রবলের অত্যাচার। প্রবল, অর্থাৎ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা, দুর্বলের অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি কেড়ে নিতে থাকল। ব্যাপারটি ছিল লুণ্ঠন, কিন্তু তার ওপর একটা আচ্ছাদন দেওয়া হলো, সেটা ধর্মীয়। ধর্মীয় আচ্ছাদনে দুটো সুবিধা। এক. এতে লুটপাটের ব্যাপারটাকে পবিত্র কর্তব্য বলে সাজানো যায়। দুই. ধর্মের জিগির তুললে মানুষের মধ্যে উন্মাদনাও তৈরি করা সহজে সম্ভব হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্রকে আমরা মানিনি। আমরা তার জিঞ্জির ছিঁড়ে বের হয়ে এসেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দ্বিজাতি তত্ত্ব পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জায়গায় এসেছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। তবু সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়নি। না হওয়ার কারণ অন্য কিছু নয়, ওই যে সম্পত্তি দখল করা, সেটাই। সংখ্যালঘু হিন্দুরা এখানে দুর্বল, সংখ্যাগুরু মুসলমানরা তাই তাদের সম্পত্তি কবজা করতে তৎপর। কেবল যে হিন্দু সম্পত্তি লুণ্ঠিত হচ্ছে তা নয়, মুসলমানদের সম্পত্তিও চলে যাচ্ছে ধনীদের হাতে। কিন্তু হিন্দুদের সম্পত্তি বিশেষভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রথমত, অধিকাংশ হিন্দুই দরিদ্র; দ্বিতীয়ত, তারা আবার সংখ্যায় কম। তৃতীয়ত, তাদের সম্পত্তি দখল করার সময় ধর্মকে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
সাম্প্রদায়িকতা তাই ধর্মের ব্যাপার নয়, ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপার বটে। ধর্মব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান আমলেও ধর্মকে ব্যবহার করে লুণ্ঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। যে জন্য সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটছে না।
সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারটা বোঝা গেল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর প্রতিকার কী? প্রতিকার খোঁজার আগে রাষ্ট্রের ভূমিকাটার দিকে তাকানো দরকার। ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক বিরোধকে উসকানি দিয়েছে। পাকিস্তানের কালে রাষ্ট্র হিন্দুদের শত্রু বলে বিবেচনা করতে চেয়েছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রও যে ধর্মনিরপেক্ষ, তা বলা যাবে না। এই রাষ্ট্রের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কথা ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই এর অভ্যুদয় ঘটেছে। কিন্তু সংবিধানে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা আর নেই। আমেরিকানরা আমাদের রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র বলছে, আমরা প্রতিবাদ করছি না। বলছি না যে আমাদের রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক। এখানে সব নাগরিকের রয়েছে সমান অধিকার। আমরা প্রতিবাদ করছি না কথাটার অর্থ হলো, আমাদের যারা শাসন করে, তারা প্রতিবাদ করছে না। এ ব্যাপারে সরকার উৎসাহী নয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে কোনো দলেরই উদ্যোগ নেই, বরং ক্ষমতাসীন দলই ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। আর তারাই হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে আমাদের মুখপাত্র।
সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করে না। নীরবে তাদের দেশত্যাগ যে ঘটছে, এটা মিথ্যা নয়। আমাদের রাষ্ট্রে বলতে গেলে কোনো নাগরিকেরই জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশেষভাবে বিপন্ন। মূল কারণ হলো রাষ্ট্রের চরিত্র। যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যার জন্য সংগ্রাম করেছি, সেই রাষ্ট্র আমরা পাইনি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য রয়েছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্যই প্রধান, সেই সঙ্গে নারী-পুরুষের বৈষম্যও স্পষ্ট এবং সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যকার পুরোনো বৈষম্য শেষ হয়ে যায়নি।
রাষ্ট্রকে তাই গণতান্ত্রিক করা চাই। শ্রেণি, ধর্ম, নারী-পুরুষ, জাতিসত্তানির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তা না হলে শোষণ, লুণ্ঠন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিসত্তার নিপীড়ন—কোনো ব্যাধিরই শেষ হবে না। আমরা ভুগতে থাকব এবং ভুগতে ভুগতে কেবলই দুর্বল হব।
কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনটা কীভাবে আসবে? নির্বাচনের মধ্য দিয়ে? সে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রের চরিত্রে বদল আনতে চাইবে না, চাইবে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রেখে লুণ্ঠন করতে। সে জন্য যারা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক, তাদেরই কর্তব্য হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা। আন্দোলন ছাড়া মুক্তির অন্য কোনো উপায় নেই। এ ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা সামরিক শাসন দেখেছি, নির্বাচনও দেখেছি এবং দেখব। সামরিক সরকার অবৈধ, নির্বাচিত সরকার কি বৈধ? তথাকথিত বৈধ-অবৈধ যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, দুর্বল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসে না। স্বাধীন দেশে সরকার তো কয়েকবার বদল হয়েছে, কিন্তু দুর্বলের ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে কি? হয়নি। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থ যারা দেখবে, তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অশুভ সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তা না হলে সাম্প্রদায়িকতার আরও নগ্ন ও সহিংস ঘটনা আমাদের দেখতে হবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের। কিন্তু তারপরেও দাঙ্গা থেমেছে কি? দুই বঙ্গের কোনো বঙ্গেই থামেনি। সাম্প্রদায়িকতারও অবসান হয়নি। শেষ পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বন্ধন ছিন্ন করে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তারপরও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটেছে কি?
না, ঘটেনি। কেবল যে মানসিক সাম্প্রদায়িকতা রয়ে গেছে তা নয়, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনও ঘটেছে। ২০০১-এর সাধারণ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু স্থানে নানা রকম নিপীড়নের খবর আমাদের লজ্জিত করেছে। সম্পত্তি দখল, নারী ধর্ষণ সবকিছুই ঘটেছে। এবারের শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যেটি ঘটল, সেটা তো অতীতের ঘটনাগুলোকে কেবল অতিক্রম নয়, ম্লান করে দিয়েছে। কুমিল্লা থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছে। এ লজ্জা রাখব কোথায়?
কাজেই সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটা যে কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক, সেটা আমরা অবশ্যই জানি। না জানার কারণ নেই। সাম্প্রদায়িকতাকে চিনিও বটে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে যে কী, তা সব সময় খেয়াল করি না। কেন ঘটছে তা-ও বুঝি না। আমরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কথাই বলছি। এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়। রক্তপাত ঘটে। আমাদের দেশে যেমনটা ঘটেছে।
কিন্তু আমাদের দেশে তো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে একত্রে বসবাস করেও এসেছে। হিন্দু কৃষক ও মুসলমান কৃষকের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেনি। তারা একে অপরকে উৎখাত করতে চায়নি। নদীতে হিন্দু জেলে ও মুসলমান জেলে একসঙ্গে মাছ ধরেছে। তাঁতিরা তাঁত বুনেছে। সাধারণ মানুষ একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদের আজান একসঙ্গে মিশে গেছে। মানুষ একই পথ ধরে হেঁটেছে, একই বাজার-হাটে গিয়ে কেনাবেচা করেছে, থেকেছে একই আকাশের নিচে। কে হিন্দু, কে মুসলমান তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি, নাক সিটকায়নি। তাহলে? সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? তৈরি হলো কীভাবে? কেন?
শুধু করল দুই দিকের দুই মধ্যবিত্ত–হিন্দু মধ্যবিত্ত ও মুসলিম মধ্যবিত্ত। ব্রিটিশ যুগেই এ ঘটনার সূচনা। তার আগে সম্প্রদায় ছিল, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মধ্যবিত্ত শিক্ষায় ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্তের তুলনায় অন্তত পঞ্চাশ বছর এগিয়ে ছিল। মুসলিম মধ্যবিত্ত দেখল, জায়গা তেমন খোলা নেই, অন্যরা দখল করে নিয়েছে। শুরু হলো দুই পক্ষের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যারা দখল করে রেখেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। শাসক ব্রিটিশরা এ ব্যাপারে দুই পক্ষকেই উসকানি দিল, যাতে তাদের রেষারেষিটা আরও বাড়ে। বাড়লে ব্রিটিশের সুবিধা, কেননা ঝগড়াটা তখন শাসক-শাসিতের থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে হিন্দু-মুসলমানের।
ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেই সংগ্রামে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেনি, পারেনি ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধের কারণে। অবিভক্ত বঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে দুই সম্প্রদায়কে কাছে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন দাশ কিছুটা এগিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে চাকরির সুযোগ-সুবিধা অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগিতে তাঁরা সম্মত হন। এই চুক্তি তৈরি হয় ১৯২৩-এ, এর দুই বছর পর চিত্তরঞ্জন পরলোক গমন করেন এবং বলাই বাহুল্য ওই চুক্তি মোটেই বাস্তবায়িত হয়নি, বরং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, একের পর এক দাঙ্গা ঘটেছে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মূল কারণ দুই মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্ব, যাতে ব্রিটিশের উসকানি খুব কাজে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ওপর থেকে নিচে নেমেছে। নিচ থেকে ওপরে ওঠেনি।
চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর বাংলায় সর্বভারতীয় রাজনীতির অবাধ প্রবেশ ঘটে। ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলত, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি ছিল হিন্দুপ্রধান প্রতিষ্ঠান। গান্ধী নিজে অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, কিন্তু তিনি ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে চাননি। ফলে ধর্মীয় ধ্বনি তুলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজটা মোটেই বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। কংগ্রেসে কট্টর সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন লোকেরা ছিল এবং তারাই শেষ পর্যন্ত মূল শক্তি হয়ে ওঠে, পরে তারা গান্ধীকে পর্যন্ত হত্যা করে। ওদিকে মুসলিম লীগ তো মুসলিমদের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গড়ে উঠেছে, তার নেতা জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, অর্থাৎ ভারতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ভিন্ন ভিন্ন জাতি এই মতবাদের ওপর তাঁর রাজনীতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন। কংগ্রেস ও লীগ উভয়ের রাজনীতিই হয়ে দাঁড়াল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
ভারতবর্ষ ভাঙল, বাংলাও দুই টুকরো হলো, মূল কারণ ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধ এবং সেই সঙ্গে ব্রিটিশের উসকানি। কিন্তু তারপরেও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটল না। অবসান হবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। কেননা, ভারত হয়ে দাঁড়াল হিন্দুপ্রধান এবং পাকিস্তান মুসলিমপ্রধান। দুই রাষ্ট্রে দুই সম্প্রদায়ের প্রাধান্য এমন প্রবল যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে সংখ্যাগুরুর সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হবে, এটা মোটেই সম্ভব ছিল না। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার পূর্বতন যে ভিত্তি ছিল, সেটা আর রইল না। দ্বন্দ্বের শেষ হলো। কিন্তু তবু যে সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়ে গেল না, তার কারণ কী? কারণটা হলো বৈষয়িক লালসা। আরও স্পষ্ট করে বললে সম্পত্তির লোভ। সম্পত্তি বলতে এ ক্ষেত্রে জমি, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরি, সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই বোঝাবে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যালঘুদের উৎখাত করে তাদের সম্পত্তি দখল করতে তৎপর হয়ে উঠল। আসলে এ হচ্ছে দুর্বলের ওপর প্রবলের অত্যাচার। প্রবল, অর্থাৎ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা, দুর্বলের অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি কেড়ে নিতে থাকল। ব্যাপারটি ছিল লুণ্ঠন, কিন্তু তার ওপর একটা আচ্ছাদন দেওয়া হলো, সেটা ধর্মীয়। ধর্মীয় আচ্ছাদনে দুটো সুবিধা। এক. এতে লুটপাটের ব্যাপারটাকে পবিত্র কর্তব্য বলে সাজানো যায়। দুই. ধর্মের জিগির তুললে মানুষের মধ্যে উন্মাদনাও তৈরি করা সহজে সম্ভব হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্রকে আমরা মানিনি। আমরা তার জিঞ্জির ছিঁড়ে বের হয়ে এসেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দ্বিজাতি তত্ত্ব পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জায়গায় এসেছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। তবু সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়নি। না হওয়ার কারণ অন্য কিছু নয়, ওই যে সম্পত্তি দখল করা, সেটাই। সংখ্যালঘু হিন্দুরা এখানে দুর্বল, সংখ্যাগুরু মুসলমানরা তাই তাদের সম্পত্তি কবজা করতে তৎপর। কেবল যে হিন্দু সম্পত্তি লুণ্ঠিত হচ্ছে তা নয়, মুসলমানদের সম্পত্তিও চলে যাচ্ছে ধনীদের হাতে। কিন্তু হিন্দুদের সম্পত্তি বিশেষভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রথমত, অধিকাংশ হিন্দুই দরিদ্র; দ্বিতীয়ত, তারা আবার সংখ্যায় কম। তৃতীয়ত, তাদের সম্পত্তি দখল করার সময় ধর্মকে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
সাম্প্রদায়িকতা তাই ধর্মের ব্যাপার নয়, ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপার বটে। ধর্মব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান আমলেও ধর্মকে ব্যবহার করে লুণ্ঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। যে জন্য সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটছে না।
সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারটা বোঝা গেল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর প্রতিকার কী? প্রতিকার খোঁজার আগে রাষ্ট্রের ভূমিকাটার দিকে তাকানো দরকার। ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক বিরোধকে উসকানি দিয়েছে। পাকিস্তানের কালে রাষ্ট্র হিন্দুদের শত্রু বলে বিবেচনা করতে চেয়েছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রও যে ধর্মনিরপেক্ষ, তা বলা যাবে না। এই রাষ্ট্রের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কথা ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই এর অভ্যুদয় ঘটেছে। কিন্তু সংবিধানে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা আর নেই। আমেরিকানরা আমাদের রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র বলছে, আমরা প্রতিবাদ করছি না। বলছি না যে আমাদের রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক। এখানে সব নাগরিকের রয়েছে সমান অধিকার। আমরা প্রতিবাদ করছি না কথাটার অর্থ হলো, আমাদের যারা শাসন করে, তারা প্রতিবাদ করছে না। এ ব্যাপারে সরকার উৎসাহী নয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে কোনো দলেরই উদ্যোগ নেই, বরং ক্ষমতাসীন দলই ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। আর তারাই হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে আমাদের মুখপাত্র।
সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করে না। নীরবে তাদের দেশত্যাগ যে ঘটছে, এটা মিথ্যা নয়। আমাদের রাষ্ট্রে বলতে গেলে কোনো নাগরিকেরই জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশেষভাবে বিপন্ন। মূল কারণ হলো রাষ্ট্রের চরিত্র। যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যার জন্য সংগ্রাম করেছি, সেই রাষ্ট্র আমরা পাইনি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য রয়েছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্যই প্রধান, সেই সঙ্গে নারী-পুরুষের বৈষম্যও স্পষ্ট এবং সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যকার পুরোনো বৈষম্য শেষ হয়ে যায়নি।
রাষ্ট্রকে তাই গণতান্ত্রিক করা চাই। শ্রেণি, ধর্ম, নারী-পুরুষ, জাতিসত্তানির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তা না হলে শোষণ, লুণ্ঠন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিসত্তার নিপীড়ন—কোনো ব্যাধিরই শেষ হবে না। আমরা ভুগতে থাকব এবং ভুগতে ভুগতে কেবলই দুর্বল হব।
কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনটা কীভাবে আসবে? নির্বাচনের মধ্য দিয়ে? সে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রের চরিত্রে বদল আনতে চাইবে না, চাইবে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রেখে লুণ্ঠন করতে। সে জন্য যারা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক, তাদেরই কর্তব্য হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা। আন্দোলন ছাড়া মুক্তির অন্য কোনো উপায় নেই। এ ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা সামরিক শাসন দেখেছি, নির্বাচনও দেখেছি এবং দেখব। সামরিক সরকার অবৈধ, নির্বাচিত সরকার কি বৈধ? তথাকথিত বৈধ-অবৈধ যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, দুর্বল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসে না। স্বাধীন দেশে সরকার তো কয়েকবার বদল হয়েছে, কিন্তু দুর্বলের ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে কি? হয়নি। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থ যারা দেখবে, তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অশুভ সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তা না হলে সাম্প্রদায়িকতার আরও নগ্ন ও সহিংস ঘটনা আমাদের দেখতে হবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের। কিন্তু তারপরেও দাঙ্গা থেমেছে কি? দুই বঙ্গের কোনো বঙ্গেই থামেনি। সাম্প্রদায়িকতারও অবসান হয়নি। শেষ পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বন্ধন ছিন্ন করে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তারপরও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটেছে কি?
না, ঘটেনি। কেবল যে মানসিক সাম্প্রদায়িকতা রয়ে গেছে তা নয়, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনও ঘটেছে। ২০০১-এর সাধারণ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু স্থানে নানা রকম নিপীড়নের খবর আমাদের লজ্জিত করেছে। সম্পত্তি দখল, নারী ধর্ষণ সবকিছুই ঘটেছে। এবারের শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যেটি ঘটল, সেটা তো অতীতের ঘটনাগুলোকে কেবল অতিক্রম নয়, ম্লান করে দিয়েছে। কুমিল্লা থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছে। এ লজ্জা রাখব কোথায়?
কাজেই সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটা যে কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক, সেটা আমরা অবশ্যই জানি। না জানার কারণ নেই। সাম্প্রদায়িকতাকে চিনিও বটে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে যে কী, তা সব সময় খেয়াল করি না। কেন ঘটছে তা-ও বুঝি না। আমরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কথাই বলছি। এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়। রক্তপাত ঘটে। আমাদের দেশে যেমনটা ঘটেছে।
কিন্তু আমাদের দেশে তো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে একত্রে বসবাস করেও এসেছে। হিন্দু কৃষক ও মুসলমান কৃষকের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেনি। তারা একে অপরকে উৎখাত করতে চায়নি। নদীতে হিন্দু জেলে ও মুসলমান জেলে একসঙ্গে মাছ ধরেছে। তাঁতিরা তাঁত বুনেছে। সাধারণ মানুষ একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদের আজান একসঙ্গে মিশে গেছে। মানুষ একই পথ ধরে হেঁটেছে, একই বাজার-হাটে গিয়ে কেনাবেচা করেছে, থেকেছে একই আকাশের নিচে। কে হিন্দু, কে মুসলমান তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি, নাক সিটকায়নি। তাহলে? সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? তৈরি হলো কীভাবে? কেন?
শুধু করল দুই দিকের দুই মধ্যবিত্ত–হিন্দু মধ্যবিত্ত ও মুসলিম মধ্যবিত্ত। ব্রিটিশ যুগেই এ ঘটনার সূচনা। তার আগে সম্প্রদায় ছিল, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মধ্যবিত্ত শিক্ষায় ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্তের তুলনায় অন্তত পঞ্চাশ বছর এগিয়ে ছিল। মুসলিম মধ্যবিত্ত দেখল, জায়গা তেমন খোলা নেই, অন্যরা দখল করে নিয়েছে। শুরু হলো দুই পক্ষের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যারা দখল করে রেখেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। শাসক ব্রিটিশরা এ ব্যাপারে দুই পক্ষকেই উসকানি দিল, যাতে তাদের রেষারেষিটা আরও বাড়ে। বাড়লে ব্রিটিশের সুবিধা, কেননা ঝগড়াটা তখন শাসক-শাসিতের থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে হিন্দু-মুসলমানের।
ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেই সংগ্রামে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেনি, পারেনি ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধের কারণে। অবিভক্ত বঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে দুই সম্প্রদায়কে কাছে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন দাশ কিছুটা এগিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে চাকরির সুযোগ-সুবিধা অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগিতে তাঁরা সম্মত হন। এই চুক্তি তৈরি হয় ১৯২৩-এ, এর দুই বছর পর চিত্তরঞ্জন পরলোক গমন করেন এবং বলাই বাহুল্য ওই চুক্তি মোটেই বাস্তবায়িত হয়নি, বরং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, একের পর এক দাঙ্গা ঘটেছে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মূল কারণ দুই মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্ব, যাতে ব্রিটিশের উসকানি খুব কাজে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ওপর থেকে নিচে নেমেছে। নিচ থেকে ওপরে ওঠেনি।
চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর বাংলায় সর্বভারতীয় রাজনীতির অবাধ প্রবেশ ঘটে। ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলত, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি ছিল হিন্দুপ্রধান প্রতিষ্ঠান। গান্ধী নিজে অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, কিন্তু তিনি ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে চাননি। ফলে ধর্মীয় ধ্বনি তুলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজটা মোটেই বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। কংগ্রেসে কট্টর সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন লোকেরা ছিল এবং তারাই শেষ পর্যন্ত মূল শক্তি হয়ে ওঠে, পরে তারা গান্ধীকে পর্যন্ত হত্যা করে। ওদিকে মুসলিম লীগ তো মুসলিমদের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গড়ে উঠেছে, তার নেতা জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, অর্থাৎ ভারতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ভিন্ন ভিন্ন জাতি এই মতবাদের ওপর তাঁর রাজনীতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন। কংগ্রেস ও লীগ উভয়ের রাজনীতিই হয়ে দাঁড়াল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
ভারতবর্ষ ভাঙল, বাংলাও দুই টুকরো হলো, মূল কারণ ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধ এবং সেই সঙ্গে ব্রিটিশের উসকানি। কিন্তু তারপরেও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটল না। অবসান হবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। কেননা, ভারত হয়ে দাঁড়াল হিন্দুপ্রধান এবং পাকিস্তান মুসলিমপ্রধান। দুই রাষ্ট্রে দুই সম্প্রদায়ের প্রাধান্য এমন প্রবল যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে সংখ্যাগুরুর সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হবে, এটা মোটেই সম্ভব ছিল না। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার পূর্বতন যে ভিত্তি ছিল, সেটা আর রইল না। দ্বন্দ্বের শেষ হলো। কিন্তু তবু যে সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়ে গেল না, তার কারণ কী? কারণটা হলো বৈষয়িক লালসা। আরও স্পষ্ট করে বললে সম্পত্তির লোভ। সম্পত্তি বলতে এ ক্ষেত্রে জমি, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরি, সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই বোঝাবে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যালঘুদের উৎখাত করে তাদের সম্পত্তি দখল করতে তৎপর হয়ে উঠল। আসলে এ হচ্ছে দুর্বলের ওপর প্রবলের অত্যাচার। প্রবল, অর্থাৎ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা, দুর্বলের অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি কেড়ে নিতে থাকল। ব্যাপারটি ছিল লুণ্ঠন, কিন্তু তার ওপর একটা আচ্ছাদন দেওয়া হলো, সেটা ধর্মীয়। ধর্মীয় আচ্ছাদনে দুটো সুবিধা। এক. এতে লুটপাটের ব্যাপারটাকে পবিত্র কর্তব্য বলে সাজানো যায়। দুই. ধর্মের জিগির তুললে মানুষের মধ্যে উন্মাদনাও তৈরি করা সহজে সম্ভব হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্রকে আমরা মানিনি। আমরা তার জিঞ্জির ছিঁড়ে বের হয়ে এসেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দ্বিজাতি তত্ত্ব পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জায়গায় এসেছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। তবু সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়নি। না হওয়ার কারণ অন্য কিছু নয়, ওই যে সম্পত্তি দখল করা, সেটাই। সংখ্যালঘু হিন্দুরা এখানে দুর্বল, সংখ্যাগুরু মুসলমানরা তাই তাদের সম্পত্তি কবজা করতে তৎপর। কেবল যে হিন্দু সম্পত্তি লুণ্ঠিত হচ্ছে তা নয়, মুসলমানদের সম্পত্তিও চলে যাচ্ছে ধনীদের হাতে। কিন্তু হিন্দুদের সম্পত্তি বিশেষভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রথমত, অধিকাংশ হিন্দুই দরিদ্র; দ্বিতীয়ত, তারা আবার সংখ্যায় কম। তৃতীয়ত, তাদের সম্পত্তি দখল করার সময় ধর্মকে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
সাম্প্রদায়িকতা তাই ধর্মের ব্যাপার নয়, ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপার বটে। ধর্মব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান আমলেও ধর্মকে ব্যবহার করে লুণ্ঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। যে জন্য সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটছে না।
সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারটা বোঝা গেল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর প্রতিকার কী? প্রতিকার খোঁজার আগে রাষ্ট্রের ভূমিকাটার দিকে তাকানো দরকার। ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক বিরোধকে উসকানি দিয়েছে। পাকিস্তানের কালে রাষ্ট্র হিন্দুদের শত্রু বলে বিবেচনা করতে চেয়েছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রও যে ধর্মনিরপেক্ষ, তা বলা যাবে না। এই রাষ্ট্রের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কথা ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই এর অভ্যুদয় ঘটেছে। কিন্তু সংবিধানে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা আর নেই। আমেরিকানরা আমাদের রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র বলছে, আমরা প্রতিবাদ করছি না। বলছি না যে আমাদের রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক। এখানে সব নাগরিকের রয়েছে সমান অধিকার। আমরা প্রতিবাদ করছি না কথাটার অর্থ হলো, আমাদের যারা শাসন করে, তারা প্রতিবাদ করছে না। এ ব্যাপারে সরকার উৎসাহী নয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে কোনো দলেরই উদ্যোগ নেই, বরং ক্ষমতাসীন দলই ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। আর তারাই হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে আমাদের মুখপাত্র।
সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করে না। নীরবে তাদের দেশত্যাগ যে ঘটছে, এটা মিথ্যা নয়। আমাদের রাষ্ট্রে বলতে গেলে কোনো নাগরিকেরই জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশেষভাবে বিপন্ন। মূল কারণ হলো রাষ্ট্রের চরিত্র। যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যার জন্য সংগ্রাম করেছি, সেই রাষ্ট্র আমরা পাইনি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য রয়েছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্যই প্রধান, সেই সঙ্গে নারী-পুরুষের বৈষম্যও স্পষ্ট এবং সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যকার পুরোনো বৈষম্য শেষ হয়ে যায়নি।
রাষ্ট্রকে তাই গণতান্ত্রিক করা চাই। শ্রেণি, ধর্ম, নারী-পুরুষ, জাতিসত্তানির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তা না হলে শোষণ, লুণ্ঠন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিসত্তার নিপীড়ন—কোনো ব্যাধিরই শেষ হবে না। আমরা ভুগতে থাকব এবং ভুগতে ভুগতে কেবলই দুর্বল হব।
কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনটা কীভাবে আসবে? নির্বাচনের মধ্য দিয়ে? সে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রের চরিত্রে বদল আনতে চাইবে না, চাইবে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রেখে লুণ্ঠন করতে। সে জন্য যারা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক, তাদেরই কর্তব্য হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা। আন্দোলন ছাড়া মুক্তির অন্য কোনো উপায় নেই। এ ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা সামরিক শাসন দেখেছি, নির্বাচনও দেখেছি এবং দেখব। সামরিক সরকার অবৈধ, নির্বাচিত সরকার কি বৈধ? তথাকথিত বৈধ-অবৈধ যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, দুর্বল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসে না। স্বাধীন দেশে সরকার তো কয়েকবার বদল হয়েছে, কিন্তু দুর্বলের ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে কি? হয়নি। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থ যারা দেখবে, তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অশুভ সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তা না হলে সাম্প্রদায়িকতার আরও নগ্ন ও সহিংস ঘটনা আমাদের দেখতে হবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের। কিন্তু তারপরেও দাঙ্গা থেমেছে কি? দুই বঙ্গের কোনো বঙ্গেই থামেনি। সাম্প্রদায়িকতারও অবসান হয়নি। শেষ পর্যন্ত ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের বন্ধন ছিন্ন করে আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। তারপরও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটেছে কি?
না, ঘটেনি। কেবল যে মানসিক সাম্প্রদায়িকতা রয়ে গেছে তা নয়, সাম্প্রদায়িক নির্যাতনও ঘটেছে। ২০০১-এর সাধারণ নির্বাচনের পর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু স্থানে নানা রকম নিপীড়নের খবর আমাদের লজ্জিত করেছে। সম্পত্তি দখল, নারী ধর্ষণ সবকিছুই ঘটেছে। এবারের শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে যেটি ঘটল, সেটা তো অতীতের ঘটনাগুলোকে কেবল অতিক্রম নয়, ম্লান করে দিয়েছে। কুমিল্লা থেকে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতেও সক্ষম হয়েছে। এ লজ্জা রাখব কোথায়?
কাজেই সাম্প্রদায়িকতা জিনিসটা যে কেমন নির্মম, কদর্য ও ক্ষতিকারক, সেটা আমরা অবশ্যই জানি। না জানার কারণ নেই। সাম্প্রদায়িকতাকে চিনিও বটে। কিন্তু ব্যাপারটা আসলে যে কী, তা সব সময় খেয়াল করি না। কেন ঘটছে তা-ও বুঝি না। আমরা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কথাই বলছি। এই সাম্প্রদায়িকতার কারণে দুটি ভিন্ন ধর্মাবলম্বীর মানুষ পরস্পরকে ঘৃণা করে। ঘৃণা পারস্পরিক সংঘর্ষেরও জন্ম দেয়। রক্তপাত ঘটে। আমাদের দেশে যেমনটা ঘটেছে।
কিন্তু আমাদের দেশে তো বিভিন্ন ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে একত্রে বসবাস করেও এসেছে। হিন্দু কৃষক ও মুসলমান কৃষকের মধ্যে সংঘর্ষ বাধেনি। তারা একে অপরকে উৎখাত করতে চায়নি। নদীতে হিন্দু জেলে ও মুসলমান জেলে একসঙ্গে মাছ ধরেছে। তাঁতিরা তাঁত বুনেছে। সাধারণ মানুষ একে অপরের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে। মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি ও মসজিদের আজান একসঙ্গে মিশে গেছে। মানুষ একই পথ ধরে হেঁটেছে, একই বাজার-হাটে গিয়ে কেনাবেচা করেছে, থেকেছে একই আকাশের নিচে। কে হিন্দু, কে মুসলমান তা নিয়ে খোঁজাখুঁজি করেনি, নাক সিটকায়নি। তাহলে? সাম্প্রদায়িকতা তৈরি করল কারা? তৈরি হলো কীভাবে? কেন?
শুধু করল দুই দিকের দুই মধ্যবিত্ত–হিন্দু মধ্যবিত্ত ও মুসলিম মধ্যবিত্ত। ব্রিটিশ যুগেই এ ঘটনার সূচনা। তার আগে সম্প্রদায় ছিল, কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা ছিল না। ব্রিটিশ আমলে হিন্দু মধ্যবিত্ত শিক্ষায় ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠায় উঠতি মুসলিম মধ্যবিত্তের তুলনায় অন্তত পঞ্চাশ বছর এগিয়ে ছিল। মুসলিম মধ্যবিত্ত দেখল, জায়গা তেমন খোলা নেই, অন্যরা দখল করে নিয়েছে। শুরু হলো দুই পক্ষের প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। যারা দখল করে রেখেছে, তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। শাসক ব্রিটিশরা এ ব্যাপারে দুই পক্ষকেই উসকানি দিল, যাতে তাদের রেষারেষিটা আরও বাড়ে। বাড়লে ব্রিটিশের সুবিধা, কেননা ঝগড়াটা তখন শাসক-শাসিতের থাকবে না, হয়ে দাঁড়াবে হিন্দু-মুসলমানের।
ব্রিটিশ আমলে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম হয়েছে। কিন্তু সেই সংগ্রামে হিন্দু ও মুসলিম ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেনি, পারেনি ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধের কারণে। অবিভক্ত বঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে দুই সম্প্রদায়কে কাছে আনার চেষ্টা করা হয়েছিল। চিত্তরঞ্জন দাশ কিছুটা এগিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে দুই সম্প্রদায়ের নেতাদের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে চাকরির সুযোগ-সুবিধা অর্ধেক অর্ধেক ভাগাভাগিতে তাঁরা সম্মত হন। এই চুক্তি তৈরি হয় ১৯২৩-এ, এর দুই বছর পর চিত্তরঞ্জন পরলোক গমন করেন এবং বলাই বাহুল্য ওই চুক্তি মোটেই বাস্তবায়িত হয়নি, বরং দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে, একের পর এক দাঙ্গা ঘটেছে এবং শেষ পর্যন্ত বাংলা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। মূল কারণ দুই মধ্যবিত্তের দ্বন্দ্ব, যাতে ব্রিটিশের উসকানি খুব কাজে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িকতা ওপর থেকে নিচে নেমেছে। নিচ থেকে ওপরে ওঠেনি।
চিত্তরঞ্জনের মৃত্যুর পর বাংলায় সর্বভারতীয় রাজনীতির অবাধ প্রবেশ ঘটে। ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই অত্যন্ত তৎপর হয়ে ওঠে। কংগ্রেস নিজেকে অসাম্প্রদায়িক বলত, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে সেটি ছিল হিন্দুপ্রধান প্রতিষ্ঠান। গান্ধী নিজে অত্যন্ত অসাম্প্রদায়িক ছিলেন, কিন্তু তিনি ধর্ম ও রাজনীতিকে আলাদা করতে চাননি। ফলে ধর্মীয় ধ্বনি তুলে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধির কাজটা মোটেই বাধাপ্রাপ্ত হয়নি। কংগ্রেসে কট্টর সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন লোকেরা ছিল এবং তারাই শেষ পর্যন্ত মূল শক্তি হয়ে ওঠে, পরে তারা গান্ধীকে পর্যন্ত হত্যা করে। ওদিকে মুসলিম লীগ তো মুসলিমদের প্রতিষ্ঠান হিসেবেই গড়ে উঠেছে, তার নেতা জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে, অর্থাৎ ভারতে হিন্দু ও মুসলমান দুটি ভিন্ন ভিন্ন জাতি এই মতবাদের ওপর তাঁর রাজনীতিকে দাঁড় করিয়েছিলেন। কংগ্রেস ও লীগ উভয়ের রাজনীতিই হয়ে দাঁড়াল সাম্প্রদায়িক রাজনীতি।
ভারতবর্ষ ভাঙল, বাংলাও দুই টুকরো হলো, মূল কারণ ওই সাম্প্রদায়িক বিরোধ এবং সেই সঙ্গে ব্রিটিশের উসকানি। কিন্তু তারপরেও সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটল না। অবসান হবে বলে অনেকে আশা করেছিলেন। কেননা, ভারত হয়ে দাঁড়াল হিন্দুপ্রধান এবং পাকিস্তান মুসলিমপ্রধান। দুই রাষ্ট্রে দুই সম্প্রদায়ের প্রাধান্য এমন প্রবল যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যে সংখ্যাগুরুর সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হবে, এটা মোটেই সম্ভব ছিল না। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িকতার পূর্বতন যে ভিত্তি ছিল, সেটা আর রইল না। দ্বন্দ্বের শেষ হলো। কিন্তু তবু যে সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়ে গেল না, তার কারণ কী? কারণটা হলো বৈষয়িক লালসা। আরও স্পষ্ট করে বললে সম্পত্তির লোভ। সম্পত্তি বলতে এ ক্ষেত্রে জমি, বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরিবাকরি, সুযোগ-সুবিধা সবকিছুই বোঝাবে। সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যালঘুদের উৎখাত করে তাদের সম্পত্তি দখল করতে তৎপর হয়ে উঠল। আসলে এ হচ্ছে দুর্বলের ওপর প্রবলের অত্যাচার। প্রবল, অর্থাৎ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা, দুর্বলের অর্থাৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি কেড়ে নিতে থাকল। ব্যাপারটি ছিল লুণ্ঠন, কিন্তু তার ওপর একটা আচ্ছাদন দেওয়া হলো, সেটা ধর্মীয়। ধর্মীয় আচ্ছাদনে দুটো সুবিধা। এক. এতে লুটপাটের ব্যাপারটাকে পবিত্র কর্তব্য বলে সাজানো যায়। দুই. ধর্মের জিগির তুললে মানুষের মধ্যে উন্মাদনাও তৈরি করা সহজে সম্ভব হয়।
পাকিস্তান রাষ্ট্রকে আমরা মানিনি। আমরা তার জিঞ্জির ছিঁড়ে বের হয়ে এসেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। দ্বিজাতি তত্ত্ব পরিত্যক্ত হয়েছে। ধর্মভিত্তিক জাতীয়তাবাদের জায়গায় এসেছে ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ। তবু সাম্প্রদায়িকতা শেষ হয়নি। না হওয়ার কারণ অন্য কিছু নয়, ওই যে সম্পত্তি দখল করা, সেটাই। সংখ্যালঘু হিন্দুরা এখানে দুর্বল, সংখ্যাগুরু মুসলমানরা তাই তাদের সম্পত্তি কবজা করতে তৎপর। কেবল যে হিন্দু সম্পত্তি লুণ্ঠিত হচ্ছে তা নয়, মুসলমানদের সম্পত্তিও চলে যাচ্ছে ধনীদের হাতে। কিন্তু হিন্দুদের সম্পত্তি বিশেষভাবে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। প্রথমত, অধিকাংশ হিন্দুই দরিদ্র; দ্বিতীয়ত, তারা আবার সংখ্যায় কম। তৃতীয়ত, তাদের সম্পত্তি দখল করার সময় ধর্মকে অনায়াসে ব্যবহার করা যায়।
সাম্প্রদায়িকতা তাই ধর্মের ব্যাপার নয়, ধর্মব্যবসায়ীদের ব্যাপার বটে। ধর্মব্যবসায়ীরা ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং বর্তমান আমলেও ধর্মকে ব্যবহার করে লুণ্ঠনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে অবাধে। যে জন্য সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটছে না।
সাম্প্রদায়িকতার ব্যাপারটা বোঝা গেল। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এর প্রতিকার কী? প্রতিকার খোঁজার আগে রাষ্ট্রের ভূমিকাটার দিকে তাকানো দরকার। ব্রিটিশ আমলে রাষ্ট্র সাম্প্রদায়িক বিরোধকে উসকানি দিয়েছে। পাকিস্তানের কালে রাষ্ট্র হিন্দুদের শত্রু বলে বিবেচনা করতে চেয়েছে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রও যে ধর্মনিরপেক্ষ, তা বলা যাবে না। এই রাষ্ট্রের পক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়ার কথা ছিল। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসেবেই এর অভ্যুদয় ঘটেছে। কিন্তু সংবিধানে এখন ধর্মনিরপেক্ষতা আর নেই। আমেরিকানরা আমাদের রাষ্ট্রকে মুসলিম রাষ্ট্র বলছে, আমরা প্রতিবাদ করছি না। বলছি না যে আমাদের রাষ্ট্র গণতান্ত্রিক। এখানে সব নাগরিকের রয়েছে সমান অধিকার। আমরা প্রতিবাদ করছি না কথাটার অর্থ হলো, আমাদের যারা শাসন করে, তারা প্রতিবাদ করছে না। এ ব্যাপারে সরকার উৎসাহী নয়, সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে কোনো দলেরই উদ্যোগ নেই, বরং ক্ষমতাসীন দলই ধর্মকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। আর তারাই হচ্ছে সর্বক্ষেত্রে আমাদের মুখপাত্র।
সংখ্যালঘুরা নিরাপদ বোধ করে না। নীরবে তাদের দেশত্যাগ যে ঘটছে, এটা মিথ্যা নয়। আমাদের রাষ্ট্রে বলতে গেলে কোনো নাগরিকেরই জীবন ও জীবিকার নিরাপত্তা নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা বিশেষভাবে বিপন্ন। মূল কারণ হলো রাষ্ট্রের চরিত্র। যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম, যার জন্য সংগ্রাম করেছি, সেই রাষ্ট্র আমরা পাইনি। তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এখানে মানুষে মানুষে বৈষম্য রয়েছে। ধনী-দরিদ্র বৈষম্যই প্রধান, সেই সঙ্গে নারী-পুরুষের বৈষম্যও স্পষ্ট এবং সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মধ্যকার পুরোনো বৈষম্য শেষ হয়ে যায়নি।
রাষ্ট্রকে তাই গণতান্ত্রিক করা চাই। শ্রেণি, ধর্ম, নারী-পুরুষ, জাতিসত্তানির্বিশেষে সব মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার। তা না হলে শোষণ, লুণ্ঠন, সাম্প্রদায়িকতা, জাতিসত্তার নিপীড়ন—কোনো ব্যাধিরই শেষ হবে না। আমরা ভুগতে থাকব এবং ভুগতে ভুগতে কেবলই দুর্বল হব।
কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তনটা কীভাবে আসবে? নির্বাচনের মধ্য দিয়ে? সে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতাসীনেরা রাষ্ট্রের চরিত্রে বদল আনতে চাইবে না, চাইবে বিদ্যমান ব্যবস্থাকে অক্ষুণ্ন রেখে লুণ্ঠন করতে। সে জন্য যারা দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক, তাদেরই কর্তব্য হবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করা। আন্দোলন ছাড়া মুক্তির অন্য কোনো উপায় নেই। এ ব্যাপারটা আমাদের বুঝতে হবে। আমরা সামরিক শাসন দেখেছি, নির্বাচনও দেখেছি এবং দেখব। সামরিক সরকার অবৈধ, নির্বাচিত সরকার কি বৈধ? তথাকথিত বৈধ-অবৈধ যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, দুর্বল মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসে না। স্বাধীন দেশে সরকার তো কয়েকবার বদল হয়েছে, কিন্তু দুর্বলের ভাগ্য প্রসন্ন হয়েছে কি? হয়নি। তাই সাধারণ মানুষের স্বার্থ যারা দেখবে, তাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং অশুভ সাম্প্রদায়িকতাকে চিরতরে নির্মূল করতে হবে। তা না হলে সাম্প্রদায়িকতার আরও নগ্ন ও সহিংস ঘটনা আমাদের দেখতে হবে।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের।
২০ অক্টোবর ২০২১
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের।
২০ অক্টোবর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের।
২০ অক্টোবর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

সাম্প্রদায়িকতা কী, সে তো আমরা অবশ্যই জানি। দেখিও। আমরা ভুক্তভোগীও বটে। ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার কারণে আমাদের এই দেশে দাঙ্গা হয়েছে। দাঙ্গার পরিণতিতে একসময়ে অবিভক্ত বঙ্গ দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেছে, এক খণ্ড যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্য খণ্ড ভারতের।
২০ অক্টোবর ২০২১
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫