Ajker Patrika

ছোট ছোট প্রতিবাদ

সম্পাদকীয়
ছোট ছোট প্রতিবাদ

ইদানীং দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বিদেশে উচ্চশিক্ষা এবং সেখানে থিতু হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এর কারণ খুঁজলে পাওয়া যায় উন্নত জীবনযাপন, আর্থিক নিরাপত্তা, চাকরির নিশ্চয়তা ইত্যাদি।

কিন্তু মো. নূরুল হুদা দেশে থেকেই জীবনকে সুন্দর করে গুছিয়ে নেওয়ার কথা ভেবেছেন। আর তাই পরীক্ষায় দুর্দান্ত ফলাফল করে হতে চেয়েছিলেন এ দেশেরই শিক্ষক। কিন্তু অনিয়মের কাছে হেরে যান তিনি। পূরণ করতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন।

মো. নূরুল হুদা ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৪ সালে এলএলবি (সম্মান) পরীক্ষায় সিজিপিএ-৩.৬৫ এবং ২০১৫ সালে এলএলএম (মাস্টার্স) পরীক্ষায় সিজিপিএ-৩.৬০ অর্জন করেন। সম্মান পরীক্ষায় আইন অনুষদে 
প্রথম স্থান অধিকার করলে তাঁকে সম্মানিত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৭ সালে পান বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক এবং ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক।

এমন অবস্থায় হয়তো যেকোনো মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রথম চাওয়া হতে পারে শিক্ষকতা। মো. নূরুল হুদা এর ব্যতিক্রম নন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালের শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে আইন বিভাগে আবেদন করেন। কিন্তু এরপর থেকেই নানা অনিয়মের বেড়াজালে আটকা পড়তে থাকেন। ফলে ওই নিয়োগে তাঁর চাকরি হয়নি।

নিয়োগের জন্য শিক্ষকদের পেছনে ধরনা দেওয়া কিংবা অর্থ লেনদেন করার মতো বাণিজ্যের অভিযোগ করেন মো. নূরুল হুদা। তিনি মনে করেন, এই বাণিজ্য তাঁর প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক অবমাননার শামিল। আর তাই শনিবার তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতির প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দেন। এ নিয়ে ছোট একটি খবরও ছেপেছে আজকের পত্রিকা।

আমরা জানি না মো. নূরুল হুদার এই বক্তব্যের পর তিনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পাবেন কি না। পেলেও তিনি সেই চাকরি করতে রাজি হবেন কি না, তাঁর আত্মসম্মানে কতটা বাধবে—তা-ও আমাদের জানা নেই। কিন্তু তিনি শিক্ষক নিয়োগ-বাণিজ্যের যে অভিযোগ এনেছেন, তা একপ্রকার ‘ওপেন সিক্রেট’ বটে। পত্রপত্রিকা ঘেঁটে কিংবা টিভি চ্যানেলে প্রচারিত খবরে নিয়মিত চোখ রাখলে এ রকম কয়েকটা খবর পাওয়া দুর্লভ ব্যাপার নয়।

তবে এই শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যত দুর্নীতি ও অনিয়ম হয়, সেই বাণিজ্যকে বন্ধ করার খবর দুর্লভ! যেকোনো সেক্টরে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ করতে হলে কী করতে হয়, সেটা নিশ্চয়ই সেখানকার কর্তৃপক্ষ জানে এবং বোঝে। একজন নূরুল হুদা তাঁর পদক প্রত্যাখ্যান করে দুর্নীতি রুখে দিতে পারবেন না হয়তো, কিন্তু তাঁর মতো আরও অনেক নূরুল হুদা যার যার মতো করে প্রতিবাদ করলে নীতিনির্ধারকদের একটু হলেও টনক নড়ার সম্ভাবনা উঁকি দেয়। ছোট ছোট বালুকণা যদি বিশাল মহাদেশ গড়ে তুলতে পারে, ছোট ছোট প্রতিবাদ কি দুর্নীতি-অনিয়ম রুখতে পারে না?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ইরানের ‘দানবীয় ক্ষেপণাস্ত্রের’ সামনে উন্মুক্ত ইসরায়েলের ‘অ্যাকিলিস হিল’

মা-মেয়ের ত্রিভুজ প্রেম, বিয়ে ও একটি খুন

পাকিস্তানের পরমাণু প্রকল্প ধ্বংসে ভারত-ইসরায়েলের যৌথ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় যেভাবে

খামেনি কোথায়, কেমন আছেন—উৎকণ্ঠিত ইরানিদের প্রশ্নের বন্যা

এই বিজয় বাংলাদেশি আন্টিদের বিজয়: জোহরান মামদানি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত