Ajker Patrika

কার্ডের নামে চাঁদা-বাণিজ্য

বটিয়াঘাটা প্রতিনিধি
আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২২, ২০: ৫০
কার্ডের নামে চাঁদা-বাণিজ্য

বটিয়াঘাটার গ্রামে গ্রামে বয়স্ক ও বিধবা ভাতাকার্ড করে দেওয়ার জন্য টাকা দাবির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী মো. ওলিউর রহমানের নেতৃত্বে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল এ কাজ করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী সুবিধাভোগীদের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য ও চেয়ারম্যানেরাও এ কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।

একাধিক ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টাকা নেওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে তাঁদের ভাতাকার্ড দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেয় ওই চক্র। এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বটিয়াঘাটা উপজেলার সমাজসেবা অফিস সূত্রে জানা গেছে, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতাসহ বিভিন্ন ভাতার আওতায় রয়েছেন ১ লাখ ৬৯৫ জন অসচ্ছল ব্যক্তি। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে তালিকা অনুযায়ী, উপজেলায় বয়স্ক ভাতা পান ৯৭ হাজার ২৩ জন, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত ভাতা পান ৪ হাজার ৯৯৬ জন, অসচ্ছল ও প্রতিবন্ধী ভাতা পান ২ হাজার ৬০২ জন, শিক্ষা উপবৃত্তি ভাতা ২২ জন ও দলিত শিক্ষা উপবৃত্তি ভাতা পান ৫২ জন।

স্থানীয়রা জানান, অভিনব কৌশলে জনপ্রতিনিধিরা তাঁদের অনুগত ৩-৪ জনের চক্র তৈরি করে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পাঠাচ্ছেন। এসব চক্র বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকাশ্যে দরিদ্রদের থেকে টাকা তুলছে। জনপ্রতি দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। অনেকে ভাতাকার্ড পাওয়ার আশায় সুদে টাকা এনে ওই চক্রের হাতে তুলে দিচ্ছেন।

তাঁরা আরও জানান, উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস সহকারী মো. ওলিউর রহমান বয়স্ক বিধবাদের তালিকার একটি কপি প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর তাঁদের নির্দেশ দেওয়া দেন, যে টাকা আগে দেবে তাকেই ভাতাকার্ড ও টাকা দেওয়া হবে।

টাকা তোলার সঙ্গে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের সম্পৃক্ততাও রয়েছে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশে আমরা টাকা তুলছি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।’

ভুক্তভোগী সুখেন্দু মণ্ডলের মায়ের কাছে একটি চক্র বয়স্ক ভাতা দেওয়ার কথা বলে ২ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করে। এ বিষয়ে শুভেন্দু মণ্ডল বলেন, ‘ভাতার টাকা দেওয়ার জন্য টাকা দাবি করেছিল এক চক্র। আমি বলে দিয়েছি টাকা দিতে পারব না। মায়ের সিম কার্ড তাঁদের নিয়ে যেতে বলেছি। টাকা তুলে বাকি টাকা আমাদের দিতে বলেছি। তখন তাঁরা চলে গেছে।’

ভুক্ত ভুগি রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, ‘আমার কাছে এক চক্র এসে বলে টাকা না দিলে বস ভাতার টাকা পাবেন না। তখন আমার মেয়ে কার থেকে জানি সুদে ২ হাজার ৫০০ টাকা এনে ওই চক্রের হাতে দেয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘কি করব আমরা? টাকা না দিলে আমাদের বয়স্ক ও বিধবা ভাতা দেবে না বলছে। তাই আমরা নিরুপায় হয়ে সুদে টাকা এনে তাঁদের দিচ্ছি।’

আরও কয়েকজন ভুক্তভোগীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলছেন, ‘কি করব ভাই! টাকা না দিলে আমাদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা বাধ্য হয়ে সুদে টাকা এনে তাঁদের দিচ্ছি।’

উপজেলার সমাজ সেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজকর্মী ওলিউর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সঠিক না। আপনি পরে আমার সঙ্গে অফিসে দেখা করুন।’

সুরখালী ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটুর মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগ করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।

উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা অমিত সমাদ্দার বলেন, ‘এ চক্রের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত