বিভুরঞ্জন সরকার
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। কিন্তু অতীতে আমাদের দেশে বেশির ভাগ নির্বাচন কমিশন অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হয়নি। একসময় অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকায় সরকারি দলের প্রভাবের বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারপরও পুরোনো অভিযোগই শোনা যায়, কমিশন মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারে না। নির্বাচনের সময় কমিশনের ভূমিকা পক্ষপাতমুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সাধারণত তা দেখা যায় না। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে যে স্বাধীনতা ও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে তাদের অনাগ্রহের বিষয়টি কি এ কারণেই ঘটে যে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁরা নিজেরাই দৃঢ় ও পক্ষপাতমুক্ত আচরণে অনভ্যস্ত? নির্বাচন কমিশন গঠন-প্রক্রিয়াই ত্রুটিপূর্ণ কি না, তা আবারও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখা দরকার।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী এবং কারও অনুরাগ ও বিরাগের তোয়াক্কা না করে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই তো হওয়ার কথা। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করা মোটেই উচিত নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবে কী দেখি? আজ পর্যন্ত দু-একটি সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব নির্বাচন কমিশনই সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সব নির্বাচনেই প্রায় সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, বিশেষ করে বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে উঠে থাকে। কিন্তু কোনো নির্বাচনেই একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধেও কোনো কমিশনকেই শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগে নির্বাচন কমিশন কেন দৃঢ়তা দেখাতে পারে না? নির্বাচন কমিশনাররা তো সাধারণ সরকারি চাকুরে নন। তাঁরা সাংবিধানিক পদাধিকারী। চাকরি হারানোর ভয় তাঁদের থাকার কথা নয়। তারপরও ভীরুতা, আপসকামিতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমানতা, পক্ষপাত মনোভাবের অভিযোগ কেন কমিশনের বিরুদ্ধে ওঠে? কেন রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ কোনো কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না–এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা আমাদের নেই।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতিও দেশের সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন নেই। আমাদের দেশের রাজনীতি এতটাই বিভাজিত যে এখানে কোনো ইস্যুতে একমত হওয়া কঠিন। আওয়ামী লীগ যার পক্ষে, বিএনপি তার বিরুদ্ধে থাকবে—এটা এখন আমাদের অঘোষিত নীতি। যে কমিশন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে, সেই কমিশনের পক্ষে থাকা বিএনপির জন্য বেমানান। মানুষের আস্থা ও সমর্থন আদায়ের সুযোগ থাকলেও কমিশন সেটা অর্জন করতে চায় কি না, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন হয়ে এবার সামনে এসেছে। আগামী নির্বাচন ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে করা না-করার প্রশ্নে দেশে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তা নিরসনে নির্বাচন কমিশনের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা রাখার একটা সুযোগ ছিল।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্মানিত ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেক মতবিনিময় সভা করেছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। ইভিএমে ভোট নেওয়া না-নেওয়ার প্রশ্নও আলোচনায় এসেছে। বেশির ভাগ প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার পরও ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতি তাদের ঝুঁকে পড়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার অনুসারী দলগুলো ছাড়া আর কোনো দল ইভিএমের পক্ষে নয়। নাগরিক সমাজও এ প্রশ্নে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ যেহেতু ইভিএমে ভোট চায়, তাই নির্বাচন কমিশনও এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের পক্ষপাত আরও স্পষ্ট করেছে। অবশ্য গাইবান্ধার উপনির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন একটু দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে একটি আসনের উপনির্বাচন নিয়েই কমিশনকে যতটা নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে, ৩০০ আসনের ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন হবে, সে প্রশ্নও উঠেছে। একটি আসনের উপনির্বাচনেই নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সামাল দেওয়া কঠিন হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ডিসি, এসপিসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সমন্বয়ের বিষয়টি যে শক্ত গাঁথুনির ছিল না, সেটাও গাইবান্ধার উপনির্বাচনে দেখা গেছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি এ অবস্থার পরিবর্তন হবে?
এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কেনাকাটার আগ্রহ নিয়ে আজকের পত্রিকায় যে খবরটি ছাপা হয়েছে, তা কমিশনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে বলে মনে হয় না। ২০ অক্টোবর ‘৫৩৮টি গাড়ি চায় নির্বাচন কমিশন’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার ইভিএম কেনার প্রকল্প নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নিতে চায় কমিশন, তাতে ভোটকেন্দ্র থাকবে প্রায় ২৫ হাজার। প্রতি ভোটকেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে সাতটি। এই হিসাবে মোট ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ ইভিএম প্রয়োজন। তা ছাড়া, ভোটার শিখন, কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং রিজার্ভেও ইভিএম লাগবে। সব মিলিয়ে ইভিএম লাগবে ৩ লাখ ৩৮ হাজার সেট। প্রতি ইভিএমে এবার খরচ আগের চেয়ে ১ লাখ টাকা বেশি। এ ছাড়া ইভিএম রাখার ঘর বানাতে ৩৬৯ কোটি টাকা চায়। সিসি ক্যামেরায় খরচ হবে ১৩১ কোটি টাকা। ছয়টি মাইক্রোবাস ভাড়া বাবদ ৬ কোটি টাকা।
ইসি বলছে, ইভিএম স্থানান্তর এবং আনুষঙ্গিক কাজে ৫৩৮টি গাড়ি প্রয়োজন। খরচ হবে ২৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে গুদাম থেকে নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম নিতে ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান কিনতে হবে। ৪৯ লাখ করে এতে খরচ হবে ২৬১ কোটি টাকা। প্রকল্প তদারকির জন্য ৮টি জিপ ও ৭টি মাইক্রোবাসও চায় ইসি। চলমান একটি প্রকল্পে চারটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস থাকায় বাড়তি কিনতে হবে চারটি জিপ। এতে খরচ হবে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
ইসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যেসব ইভিএম আছে, সেগুলোর সংরক্ষণের জন্য বছরে খরচ হয় ৫ কোটি টাকা। এখন বাড়তি ইভিএম গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৬৯ কোটি টাকা। তার ওপর বছরে সংরক্ষণ বাবদ ৯৮ কোটি টাকা লাগবে। সিসিটিভি ক্যামেরা কিনতে ধরা হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটারদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে খরচ হবে ২০৫ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় লাগবে ৬৯০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় হবে বড় অঙ্কের টাকা। এই প্রকল্পে চার ধরনের প্রায় ১৮৬ জন পরামর্শক কাজ করবেন। তাঁদের পেছনে খরচ হবে ৯ কোটি ৮০ লাখ, জনপ্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা।
যে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্যের অভাব, সেই ইভিএমের জন্য এত বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হবে কেন? এই প্রশ্নের জবাব নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী যে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, তার ধাক্কা বাংলাদেশেও এসে লাগছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনের সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে সবাইকে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছেন। যে ব্যয় না করলেই নয়, সেই ব্যয়ের বাইরে নতুন ব্যয়ের খাত তৈরি করা চরম নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে। অন্তত কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলেই নির্বাচন কমিশনকে আগামী নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়ার পরামর্শ কি প্রধানমন্ত্রী দেবেন? সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার জন্য নির্বাচন করতেই হবে। সেই নির্বাচন ইভিএমে না হলে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে না। এর আগে তো সংবিধানের দায় মেটাতে গিয়ে দেশে নামকাওয়াস্তেও নির্বাচন হয়েছে। ইভিএম ব্যবহার এক টার্ম পরে করলেও জাতি খুব বেশি পিছিয়ে পড়বে বলে মনে হয় না।
কিন্তু ইভিএম কেনা, তা বহন ও সংরক্ষণের জন্য যে মোটা টাকা লাগবে, তা দুঃসময়ে বড় অপচয় হিসেবেই মানুষ দেখবে। কারণ, এই ব্যয়ের দায় তো শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ঘাড়েই চাপবে!
একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইভিএমে ভোট দেওয়া যে খুব জরুরি নয়, সেটা আগে যে নির্বাচনগুলো নিয়ে কম বিতর্ক হয়েছে, তা থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায়। মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পেরেছেন যে দু-একটি নির্বাচনে, সেগুলো ব্যালট পেপারেই হয়েছিল। মানুষ যেন ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়ে না পড়েন, নির্বাচন কমিশনের ওপর যাতে মানুষের আস্থা ফিরে আসে, তার জন্য কী কী করা উচিত, সেটাই বরং এখন নির্বাচন কমিশনের ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত। অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচন-প্রক্রিয়া তামাশায় পরিণত করার সুযোগ কাউকে না দেওয়ার দৃঢ়তা না দেখিয়ে কেনাকাটার প্রতি অতি আগ্রহ দেখালে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। কিন্তু অতীতে আমাদের দেশে বেশির ভাগ নির্বাচন কমিশন অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সফল হয়নি। একসময় অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে থাকায় সরকারি দলের প্রভাবের বাইরে যাওয়া সম্ভব ছিল না নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। তারপরও পুরোনো অভিযোগই শোনা যায়, কমিশন মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে পারে না। নির্বাচনের সময় কমিশনের ভূমিকা পক্ষপাতমুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও সাধারণত তা দেখা যায় না। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনকে যে স্বাধীনতা ও ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারে তাদের অনাগ্রহের বিষয়টি কি এ কারণেই ঘটে যে যাঁদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তাঁরা নিজেরাই দৃঢ় ও পক্ষপাতমুক্ত আচরণে অনভ্যস্ত? নির্বাচন কমিশন গঠন-প্রক্রিয়াই ত্রুটিপূর্ণ কি না, তা আবারও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখা দরকার।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে আমাদের দেশের মানুষের অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে নিজেদের বিবেচনা অনুযায়ী এবং কারও অনুরাগ ও বিরাগের তোয়াক্কা না করে সিদ্ধান্ত নেবে, সেটাই তো হওয়ার কথা। রাজনৈতিক বা অন্য কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করা মোটেই উচিত নয়। কিন্তু আমরা বাস্তবে কী দেখি? আজ পর্যন্ত দু-একটি সামান্য ব্যতিক্রম ছাড়া প্রায় সব নির্বাচন কমিশনই সাহসিকতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ সব নির্বাচনেই প্রায় সব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, বিশেষ করে বড় রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে উঠে থাকে। কিন্তু কোনো নির্বাচনেই একজন প্রার্থীর বিরুদ্ধেও কোনো কমিশনকেই শক্ত অবস্থান নিতে দেখা যায়নি। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রয়োগে নির্বাচন কমিশন কেন দৃঢ়তা দেখাতে পারে না? নির্বাচন কমিশনাররা তো সাধারণ সরকারি চাকুরে নন। তাঁরা সাংবিধানিক পদাধিকারী। চাকরি হারানোর ভয় তাঁদের থাকার কথা নয়। তারপরও ভীরুতা, আপসকামিতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোদুল্যমানতা, পক্ষপাত মনোভাবের অভিযোগ কেন কমিশনের বিরুদ্ধে ওঠে? কেন রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ কোনো কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না–এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা আমাদের নেই।
কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে গঠিত বর্তমান নির্বাচন কমিশনের প্রতিও দেশের সব রাজনৈতিক দলের সমর্থন নেই। আমাদের দেশের রাজনীতি এতটাই বিভাজিত যে এখানে কোনো ইস্যুতে একমত হওয়া কঠিন। আওয়ামী লীগ যার পক্ষে, বিএনপি তার বিরুদ্ধে থাকবে—এটা এখন আমাদের অঘোষিত নীতি। যে কমিশন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে, সেই কমিশনের পক্ষে থাকা বিএনপির জন্য বেমানান। মানুষের আস্থা ও সমর্থন আদায়ের সুযোগ থাকলেও কমিশন সেটা অর্জন করতে চায় কি না, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন হয়ে এবার সামনে এসেছে। আগামী নির্বাচন ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে করা না-করার প্রশ্নে দেশে যে বিতর্ক দেখা দিয়েছে, তা নিরসনে নির্বাচন কমিশনের মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা রাখার একটা সুযোগ ছিল।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সম্মানিত ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে অনেক মতবিনিময় সভা করেছে। এটা একটা ভালো উদ্যোগ। ইভিএমে ভোট নেওয়া না-নেওয়ার প্রশ্নও আলোচনায় এসেছে। বেশির ভাগ প্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের বিরোধিতার পরও ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নেওয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতি তাদের ঝুঁকে পড়া মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও তার অনুসারী দলগুলো ছাড়া আর কোনো দল ইভিএমের পক্ষে নয়। নাগরিক সমাজও এ প্রশ্নে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ যেহেতু ইভিএমে ভোট চায়, তাই নির্বাচন কমিশনও এর পক্ষে অবস্থান নিয়ে তাদের পক্ষপাত আরও স্পষ্ট করেছে। অবশ্য গাইবান্ধার উপনির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন একটু দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। তবে একটি আসনের উপনির্বাচন নিয়েই কমিশনকে যতটা নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে, ৩০০ আসনের ক্ষেত্রে বিষয়টা কেমন হবে, সে প্রশ্নও উঠেছে। একটি আসনের উপনির্বাচনেই নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের সামাল দেওয়া কঠিন হয়েছে নির্বাচন কমিশনের। ডিসি, এসপিসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সমন্বয়ের বিষয়টি যে শক্ত গাঁথুনির ছিল না, সেটাও গাইবান্ধার উপনির্বাচনে দেখা গেছে। জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে কি এ অবস্থার পরিবর্তন হবে?
এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশনের কেনাকাটার আগ্রহ নিয়ে আজকের পত্রিকায় যে খবরটি ছাপা হয়েছে, তা কমিশনের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে সহায়ক হবে বলে মনে হয় না। ২০ অক্টোবর ‘৫৩৮টি গাড়ি চায় নির্বাচন কমিশন’ শিরোনামে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, পৌনে ৯ হাজার কোটি টাকার ইভিএম কেনার প্রকল্প নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। যে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট নিতে চায় কমিশন, তাতে ভোটকেন্দ্র থাকবে প্রায় ২৫ হাজার। প্রতি ভোটকেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে সাতটি। এই হিসাবে মোট ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ ইভিএম প্রয়োজন। তা ছাড়া, ভোটার শিখন, কর্মীদের প্রশিক্ষণ এবং রিজার্ভেও ইভিএম লাগবে। সব মিলিয়ে ইভিএম লাগবে ৩ লাখ ৩৮ হাজার সেট। প্রতি ইভিএমে এবার খরচ আগের চেয়ে ১ লাখ টাকা বেশি। এ ছাড়া ইভিএম রাখার ঘর বানাতে ৩৬৯ কোটি টাকা চায়। সিসি ক্যামেরায় খরচ হবে ১৩১ কোটি টাকা। ছয়টি মাইক্রোবাস ভাড়া বাবদ ৬ কোটি টাকা।
ইসি বলছে, ইভিএম স্থানান্তর এবং আনুষঙ্গিক কাজে ৫৩৮টি গাড়ি প্রয়োজন। খরচ হবে ২৭০ কোটি টাকা। এগুলোর মধ্যে গুদাম থেকে নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম নিতে ৫৩৪টি ডাবল কেবিন পিকআপ ভ্যান কিনতে হবে। ৪৯ লাখ করে এতে খরচ হবে ২৬১ কোটি টাকা। প্রকল্প তদারকির জন্য ৮টি জিপ ও ৭টি মাইক্রোবাসও চায় ইসি। চলমান একটি প্রকল্পে চারটি জিপ ও একটি মাইক্রোবাস থাকায় বাড়তি কিনতে হবে চারটি জিপ। এতে খরচ হবে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।
ইসি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে যেসব ইভিএম আছে, সেগুলোর সংরক্ষণের জন্য বছরে খরচ হয় ৫ কোটি টাকা। এখন বাড়তি ইভিএম গুদাম নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৬৯ কোটি টাকা। তার ওপর বছরে সংরক্ষণ বাবদ ৯৮ কোটি টাকা লাগবে। সিসিটিভি ক্যামেরা কিনতে ধরা হয়েছে ১৩১ কোটি টাকা। প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ভোটারদের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে খরচ হবে ২০৫ কোটি টাকা। প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় লাগবে ৬৯০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় হবে বড় অঙ্কের টাকা। এই প্রকল্পে চার ধরনের প্রায় ১৮৬ জন পরামর্শক কাজ করবেন। তাঁদের পেছনে খরচ হবে ৯ কোটি ৮০ লাখ, জনপ্রতি মাসে ৫ লাখ টাকা।
যে ইভিএমে ভোট গ্রহণের প্রশ্নে জাতীয় ঐকমত্যের অভাব, সেই ইভিএমের জন্য এত বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হবে কেন? এই প্রশ্নের জবাব নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী যে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে, তার ধাক্কা বাংলাদেশেও এসে লাগছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সামনের সংকট মোকাবিলার লক্ষ্যে সবাইকে কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলছেন। যে ব্যয় না করলেই নয়, সেই ব্যয়ের বাইরে নতুন ব্যয়ের খাত তৈরি করা চরম নির্বুদ্ধিতার কাজ হবে। অন্তত কৃচ্ছ্রসাধনের কথা বলেই নির্বাচন কমিশনকে আগামী নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভোট নেওয়ার পরামর্শ কি প্রধানমন্ত্রী দেবেন? সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার জন্য নির্বাচন করতেই হবে। সেই নির্বাচন ইভিএমে না হলে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে না। এর আগে তো সংবিধানের দায় মেটাতে গিয়ে দেশে নামকাওয়াস্তেও নির্বাচন হয়েছে। ইভিএম ব্যবহার এক টার্ম পরে করলেও জাতি খুব বেশি পিছিয়ে পড়বে বলে মনে হয় না।
কিন্তু ইভিএম কেনা, তা বহন ও সংরক্ষণের জন্য যে মোটা টাকা লাগবে, তা দুঃসময়ে বড় অপচয় হিসেবেই মানুষ দেখবে। কারণ, এই ব্যয়ের দায় তো শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষের ঘাড়েই চাপবে!
একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইভিএমে ভোট দেওয়া যে খুব জরুরি নয়, সেটা আগে যে নির্বাচনগুলো নিয়ে কম বিতর্ক হয়েছে, তা থেকেই পরিষ্কার বোঝা যায়। মানুষ ভোটকেন্দ্রে গিয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নিরাপদে ঘরে ফিরতে পেরেছেন যে দু-একটি নির্বাচনে, সেগুলো ব্যালট পেপারেই হয়েছিল। মানুষ যেন ভোটকেন্দ্র বিমুখ হয়ে না পড়েন, নির্বাচন কমিশনের ওপর যাতে মানুষের আস্থা ফিরে আসে, তার জন্য কী কী করা উচিত, সেটাই বরং এখন নির্বাচন কমিশনের ভাবনার বিষয় হওয়া উচিত। অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচন-প্রক্রিয়া তামাশায় পরিণত করার সুযোগ কাউকে না দেওয়ার দৃঢ়তা না দেখিয়ে কেনাকাটার প্রতি অতি আগ্রহ দেখালে নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।
বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫